পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গত ১৬ জুলাই দুপুর ১২টায় আমি ক্যাম্পাসের ১ নম্বর গেটে উপস্থিত হই। তখন সেখানে পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অবস্থান করতে দেখি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মিছিল লালবাগ থেকে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়, যা পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়।
পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা, টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং গুলি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট দখলে নেয়। আবু সাঈদ দূর থেকে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ পর্যবেক্ষণ করছিলেন। হঠাৎই পাঁচজন পুলিশ সদস্য আবু সাঈদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং লাঠি দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করেন। আমি দৌড়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আবু সাঈদকে পুলিশের আঘাতের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করি। পুলিশের লাঠির আঘাতে আবু সাঈদের মাথা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। আবু সাঈদ তখন পুলিশকে লক্ষ্য করে শ্যুট মি শ্যুট মি বলে চিৎকার করতে করতে নিজের বুক পেতে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট থেকে একজন পুলিশ সদস্য তাঁকে লক্ষ্য করে পর পর তিন রাউন্ড গুলি ছোড়েন।
প্রথম গুলিটি আবু সাঈদের পেটে লাগে, পরের দুটি আবু সাঈদের বুকে আঘাত করে এবং আবু সাঈদ ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন। আহত আবু সাঈদকে আমরা কয়েকজন ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। সেই সময়ে পুলিশ আবু সাঈদ এবং বাকিদের লক্ষ্য করে আবার গুলি ছোড়ে। গুলিতে আমি ও আরেকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হই। আহত অবস্থায় আমি যখন রংপুর মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছাই, সেখানে আবু সাঈদের অবস্থা জানার চেষ্টা করি। এক পর্যায়ে জানতে পারি আবু সাঈদকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছেন। এভাবেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে আমাদের ছেড়ে পরকালে পাড়ি জমান শহীদ আবু সাঈদ।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ