বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণবিচ্ছিন্ন সরকার ইতিহাসের নির্মম ও বর্বর হামলা, গণহত্যা চালিয়ে গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। আন্দোলন দমনে এই নির্বিচার হত্যাকান্ড মানবতাবিরোধী অপরাধ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারযোগ্য অপরাধ। দিন যতই যাচ্ছে সরকারের অস্তিত্ব সংকট ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার যতই মিথ্যাচার, সাজানো মামলায় গ্রেফতার অব্যাহত রাখুক না কেনো, কোনো কিছুতেই ছাত্র গণআন্দোলনে সরকারের পতন ঠেকাতে পারবে না। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, সুশীল সমাজসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যেভাবে সাহসের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সরকারের অন্যায়, অবিচার, গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন- গণবিচ্ছিন্ন সরকার আইন, সংবিধান, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, মানবিকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে জনরোষ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সুবিধা ও ইচ্ছামাফিক যা ইচ্ছা তাই করছে। এসব করতে গিয়ে তারা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ছিন্নভিন্ন করে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও মানবিক চরিত্র গুম করেছে। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ মানুষের সাংবিধানিক অধিকারকে সরকার বর্বরভাবে নস্যাৎ করতে গিয়ে একনায়কতন্ত্র এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে বর্বরোচিত আক্রমণ চালিয়ে গণহত্যা করে সরকার অমার্জনীয় অপরাধ করে জানতে চায় কী তাদের অপরাধ? তাদের অপরাধের তালিকা এতই দীর্ঘ যে, বিবরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। এখনো অনেক অভিভাবক তার শিক্ষার্থী সন্তানের খোঁজ পাচ্ছেন না। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাসরুর হাসানকে ডিবি ২৫ জুলাই রাতে তুলে নিয়ে গেলেও অভিভাবকরা থানা, ডিবি অফিস, বিভিন্ন হাসপাতালে তার কোনো খোঁজ না পেয়ে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করতে আসলে মাসরুরের বাবা ও ভাইকে ডিবি সেখান থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরকম অসংখ্য শিক্ষার্থীর খোঁজ তাদের অভিভাবকরা না পেয়ে উদ্বিগ্ন, অসহায় অবস্থায় আছেন। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের সামনে হাজির করার আইন থাকলেও ডিবি হেফাজতে ৪/৫ দিন রেখে বেআইনি কাজ করছে সরকার। আটক না করেই নিরাপত্তার নামে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডিবি অফিসে তুলে এনে তাদের জিম্মি করে রেখেছে।
ফখরুল বলেন, আজও (বুধবার) ঢাকা, চট্টগাম, রাজশাহী, খুলনা, যশোর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ, গ্রেফতার-নির্যাতন করে বাধা দিয়েছে। আদালত চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা জনগণের সমর্থনে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করে গণহত্যার বিচার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেছে। একজন বিচারপতির শিক্ষার্থী ছেলেকেও মিথ্যা মামলায় আটক করে রিমান্ডে নিয়ে হয়রানি নির্যাতন করা হয়েছে। এই গ্রেপ্তার তালিকা থেকে বাদ যায়নি উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র এইচএসসি পরীক্ষার্থী সিয়ামুজ্জামান পর্যন্ত।
প্রতিদিনই পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ যৌথভাবে বিভিন্ন এলাকায় গ্রেপ্তারের নামে মানুষের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর করছে, এমনকি তাদের বিরুদ্ধে লুটপাট, চুরির অভিযোগও উঠেছে। বরিশালের সাবেক এমপি শহিদুল আলমকে বিনা কারণে আটক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বাসায় হানা দিয়ে তাকে না পেয়ে বাসা থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে গেছে।