শিশুদের জন্য দোলনা তৈরি ও বিক্রি করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন অনেকে। বাঁশের তৈরি এ পণ্যে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম খানসামার সিরাজুল ইসলাম, সফিকুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন। দোলনা বিক্রি করে তাদের কারও কারও প্রতি মাসে আয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এতে সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যসহ অন্যদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। গ্রাম-বাংলার এ ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছেন তারা। তবে দোলনা তৈরির উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভের পরিমাণ অনেক কমেছে বলে জানান তারা। এ ছাড়া প্লাস্টিক ও রড-স্ট্রিলের দোলনা তৈরি হওয়ায় বাঁশের তৈরি দোলনা বিক্রিও কমেছে। এর পরেও অনেক পরিবার এ পেশাকে আকড়ে ধরে আছেন। কারণস্বরূপ তারা জানান, এখন তাদের অন্য কোনো পেশায় যাওয়া সম্ভব নয়। তৈরি বাঁশের দোলনা খানসামার পাশাপাশি দিনাজপুর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, রংপুরসহ কয়েক জেলা ও উপজেলায় পাইকারি দরে বিক্রি করেন তারা।
খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি ইউপির পুলহাটের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম। রানীরবন্দর-খানসামা সড়কের পাশে পুলহাটে তার দোলনা কারখানা। সিরাজুল ইসলাম ১৯৯০ সালে দোলনা তৈরি শুরু করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। দোলনার কারিগর সিরাজুল, তার তিন ছেলে ও নাতিরা কারখানায় কাজ করেন। সময়ের পরিক্রমায় তার ব্যবসার পরিধি বাড়ার সঙ্গে সংসারে অভাব-অনটন দূর হয়ে এসেছে সচ্ছলতা। হয়েছেন তিনি স্বাবলম্বী।
দোলনার কারিগর সিরাজুল ইসলাম জানান, বাঁশ, প্লাস্টিকের ফিতা ও পেরেক দিয়ে দোলনা তৈরি করা হয়। প্রতি মাসে গড়ে ২৪০-২৫০টি দোলনা তৈরি করেন। দোলনাগুলো আকারভেদে বিক্রি হয় ২০০-৩০০ টাকায়। প্রতি মাসে তার আয় হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এ আয় দিয়েই তার সংসারের প্রায় ২০ জনের ভরণপোষণ চলে।
মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন আমি দোলনা তৈরি ও বিক্রির কাজে সম্পৃক্ত। এতে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বীর পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে বর্তমানে দোলনা তৈরির উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভের পরিমাণ অনেক কমেছে।
আরেক কারিগর মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিটি দোলনা খুচরা-৩০০ টাকা, পাইকারি-২৩০-২৭০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিদিন একজন তৈরি করতে পারে চার-পাঁচটি দোলনা। প্রতিদিন গড় আয় ৩০০-৪০০ টাকা। প্রতিদিন ৩০-৩৫টি পাইকারী বিক্রি করতে পারেন। তবে প্লাস্টিক ও রড-স্ট্রিলের দোলনা তৈরি হওয়ায় আগের মতো আর আয় হয় না।