শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

মহররম মাসের ফজিলত ও আমাদের করণীয়

মুফতি মিজানুর রহমান
সিনিয়র পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।

যাবতীয় প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য যিনি সূর্য ও চন্দ্রকে (দিন, মাস ও বর্ষ) গণনার মাধ্যমে বানিয়েছেন, তারকা ও গাছপালাকে তার অনুগত বানিয়েছেন, দিন যুগ সৃষ্টি করেছেন এবং মাস ও বছর নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কিতাবে এবং আল্লাহর গণনায় মাসগুলোর সংখ্যা বারো।’ (তাওবা : ৩৬) আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক তার কোনো শরিক নেই। আমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রসুল যিনি মহররম মাসের ফজিলত বর্ণনা করেছেন। হে আল্লাহ। আপনি আপনার বান্দা ও রসুল এবং তার পরিবারবর্গ ও সাহাবাগণের ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত নাজিল করুন।

উপস্থিত মুসল্লিয়ানে কেরাম, আপনারা জেনে রাখুন, এ মাসটি আল্লাহর সম্মানিত একটি মাস। এ মাস সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমজানের রোজার পর মহররম মাসের রোজার ফজিলতই সবচেয়ে বেশি। (মুসলিম)। তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং এ বিষয়ে ইহুদিদের চেয়ে ভিন্ন নিয়ম পালন কর। তোমরা মহররমের দশম তারিখের রোজার সঙ্গে এর আগে বা পরে একদিন রোজা রাখ।’ (আহমাদ)। (কারণ ইহুদিরা শুধু দশম দিনেই রোজা রাখে)। আর একটি হাদিসে আছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে আশা করি যে, আশুরার রোজার ফলে আগের এক বছরের  গোনাহর কাফ্ফারা হয়ে যাবে।’ (মুসলিম)

নতুন হিজরি সনের শুরুতে আমরা আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করি, যেন তিনি গোটা উম্মতে মুহাম্মদিকে রহমত ও বরকত দিয়ে ঢেকে দেন। আল্লাহর প্রতি আমাদের শুকরিয়া আদায় করা উচিত, তিনি কোরআনকে কেয়ামত পর্যন্ত অবিকৃত রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন এবং কোরআনকে সঠিকভাবে বোঝার জন্য রসুলের সুন্নাহকে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করেছেন।

মুসলিম জাতির ইতিহাসে মহররম মাস আরও একটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যোগ্য নাতি, হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার মুজাহিদ পুত্র হজরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শকে রক্ষা করার জন্য এ মাসেই নিজের জীবন কোরবান দিয়েছিলেন। ইয়াজিদের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জিহাদ করে তিনি মুসলিম জাতির জন্য কেয়ামত পর্যন্ত এক জ্বলন্ত উদাহরণ রেখে গেছেন। হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওই সংগ্রাম ব্যর্থ হয়নি। তার ওই মহান সংগ্রামের ফলে এ কথাই প্রমাণিত হয়েছে, ইয়াজিদের শাসন ব্যবস্থা ইসলামবিরোধী ছিল। তিনি জিহাদ না করলে ইয়াজিদের শাসন ব্যবস্থার পক্ষে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়িগণের ইজমা ছিল বলে প্রমাণিত হতো।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ মহান নাতির উদাহরণ যুগে যুগে মুসলিম জাতিকে শাহাদাতের জজবা দান করেছে এবং শত প্রতিকূলতার মাঝেও রসুল (সা.)-এর সুন্নাতে কায়েম থাকার সাহস জুগিয়েছে।

হে আল্লাহ! হিজরির এ নতুন বছরটি তোমার নবীর উম্মতের জন্য কল্যাণকর বানাও। তারা যেন নতুন প্রেরণা নিয়ে নিজেদের জীবনকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শে গড়ে তোলে এবং মানবজাতিকে আল্লাহর পথে ডাকার দায়িত্ব পালন করে।

সর্বশেষ খবর