একজন মানুষ বহুদিন ধরে কিছু খায় না। তার খেতে ভালো লাগে না। ভাবে খেয়ে আর কী হবে। না খেয়েও তো বেঁচে থাকা যায়। আরেকজন মানুষের কথা বলছি। অনেক বছর গোসল হয় না তার। পানির অভাব বা অন্য কিছু নয়। গোসল তার কাছে বড্ড বিরক্তিকর মনে হয়। গোসল না করেও তো বেঁচে আছি- এতেই বেশি খুশি সে। আচ্ছা যে দুজন মানুষের জীবনচিত্র আপনাদের সামনে এঁকেছি- বলুন তো এদের সম্পর্কে আপনাদের ধারণা কী? হয়তো ভালো না। না খেয়ে থাকা লোকটি সম্পর্কে চোখ বুজেই বলা যাই, বড্ড পাগল সে। আর গোসল না করা মানুষটির কথা ভাবতে গেলেই গা ঘিন ঘিন করবে। না খেয়ে না গোসল করে হয়তো বেঁচে থাকা যায়। সৃষ্টি জগতে কত প্রাণীই তো আছে অনেক দির পর পর খায়। গোসল করে না পুরো জীবনে একবারও। কোনো মানুষ যদি নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেয়, তাকে আমরা আর যাই বলি, সভ্য-ভব্য মানুষ বলতে পারি না। তাই তো আমরা যে যেমনই হই না কেন, নাওয়া খাওয়া করে যাই ঠিকমতো। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত। সভ্য মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে হলে যেমন প্রতিদিন নাওয়া-খাওয়া জরুরি। তেমনি সভ্য জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে আরেকটি কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হল জ্ঞানচর্চা করা? সুসাহিত্যিক ও বিশিষ্ট ধর্ম গবেষক ডা. লুৎফর রহমান বলেছেন, নাওয়া-খাওয়ার মতোই প্রতিদিন প্রতিনিয়ত জ্ঞানাচর্চা করা আমাদের কর্তব্য। তার মানে এই নয় যে, সবাইকে স্কুল-মাদ্রাসায় গিয়ে সার্টিফিকেট অর্জন করতে হবে। কাজকর্ম-চাকরিবাকরি ফেলে বিদ্যার পেছনে ছুটতে হবে। এটা সম্ভব নয়। আর এটা করলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মুখ থুবড়ে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। নিয়ম করে প্রতিদিন যেমন আমরা গোসল করি। খাওয়া-দাওয়া করি। পোশাক পরি। তেমনি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় হোক পাঁচ-মিনিট হোক দশ মিনিট জ্ঞানসাধনায় আমদের ডুব দিতে হবে। প্রতিদিন যদি মাত্র দশ মিনিট সময় দিয়ে ৫ পৃষ্ঠা বই আমরা পড়ি, বছর শেষে দেখা যাবে অনেকগুলো বই আমাদের পড়া হয়ে গেছে। কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে যদি ১০ মিনিট করেও আমরা প্রতিদিন অধ্যয়ন করি, বছর শেষে ওই বিষয়ে আমরা বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠব। সময়খেকো দানবীয় এই যুগে দশ-পনের মিনিট খুবই কম সময়। ফেসবুক বা ইউটিউবে ১০ মিনিটের জন্য ঢুকলে এক ঘণ্টার আগে তো ওঠাই যায় না। তাই কারও কারও কাছে মনে হতে পারে, মাত্র দশ মিনিট! এত খুবই সহজ। যারা সহজ ভাবছেন, তাদের উদ্দেশ্যে ছোট্ট করে বলি, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম দেশ বাংলাদেশের মানুষকে যদি জিজ্ঞেস করেন, শেষ কবে আপনি বই পড়েছিলেন? শতকরা ৯০ ভাগের বেশি মানুষ মনেই করতে পারবে না ঠিক কত বছর আগে তারা শেষবারের মতো জ্ঞান সাধনায় বই পড়েছিল। অথচ, আমাদের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষই বিশ্বাস করে, ‘জ্ঞান হলো মুসলমানের হারানো সম্পদ। যেখানে পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই লুফে নিতে হবে।’ নবীজী (সা.) এর সেই কথাও আমরা বিশ্বাস করি, ‘কিছু সময় জ্ঞান সাধনায় ডুবে থাকা রাতের পর রাত নফল নামাজে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে বেশি মূল্যবান।’ আমাদের নবীজী (সা.) আরও বলেছেন, ‘জ্ঞান সাধনায় ডুবে থাকা ব্যক্তি যেন আল্লাহর সাধনায়ই ডুবে থাকে। যেভাবেই তার মৃত্যু হোক আমি মুহাম্মাদ বলে দিলাম, সে শহীদের মর্যাদা পাবে।’ হে আমার পাঠক বন্ধু! আসুন, প্রতিদিন অল্প করে হলেও আমরা জ্ঞান সাধনায় কিছু করি। যেমন গোসল না করলেই নয়, খাওয়া না খেলেই নয়, তেমনি বই না পড়লে অবশ্যই সুন্দর-সভ্য মানুষ হওয়া যায় না- এ কথাটি আমাদের মনে গেঁথে নিতে হবে। বই পড়ি। বিন্দু বিন্দু করে জ্ঞান সাধনার সিন্ধু গড়ে তুলি। আল্লাহতায়ালা আমাদের তাওফিক দিন।
হলেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি।
www.selimazadi.com
