শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

দখিনা অর্থনীতিতে আলো ছড়াচ্ছে পাঁচ প্রকল্প

পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর, রামপাল, কলাপাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ভোলার অর্থনৈতিক জোন

বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর প্রতীক্ষায় আছেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯ জেলার কয়েক কোটি মানুষ। পদ্মা সেতু হলে চাঙ্গা হবে দখিনের অর্থনীতি। এ আশা নিয়ে বড় বড় শিল্প গড়ার প্রস্তুতিতে যাচ্ছেন এ অঞ্চলের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ও পুঁজিপতিরা। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নিয়ে আগ্রহী পদ্মাপাড়ের ব্যবসায়ীরাও। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতু ঘিরে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্রশিল্প। পদ্মা সেতুর সুফল কাজে লাগিয়ে পুরোদমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হলে দেশের মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়তে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শিল্পায়ন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সেখানে জমি সস্তা। সস্তা শ্রমে লোকবলেরও অভাব নেই। কিন্তু জ্বালানি সমস্যা রয়েছে। তবে পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানি সমস্যাও থাকবে না। জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানি সমস্যা নিরসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শিল্পায়নের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে যারা কাজ শুরু করেছেন, তারা অধিক লাভবান হবেন। দেশের উন্নয়নে সরকার সুষম অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করে এগুচ্ছে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি প্রস্তুত শিল্পায়নের জন্য। অনেকে জমি কিনেছেন। তাদের প্রতীক্ষা কবে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে এ নিশ্চয়তা পেলে শিল্পায়নের গতি বাড়বে। ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। সরকার, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে গ্যাস প্রয়োজন হবে। এটি নিশ্চিত হলেই বাড়বে ব্যাপক কর্মসংস্থান। মংলাবন্দরে আসবে গতিশীলতা। কুয়াকাটায় যে পায়রা বন্দর নির্মিত হচ্ছে, সেটি সচল হবে। বাণিজ্য সম্প্রসারণেও পদ্মা সেতু হবে মাইল ফলক। গ্রামীণ অর্থনীতির উৎপাদনশীলতা হবে রপ্তানিমুখী। দারিদ্র্য নিরসন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি পাট শিল্প হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। পদ্মা সেতু, রামপাল ও কলাপাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র, ভোলার অর্থনৈতিক জোন ও পায়রা বন্দর প্রকল্প দখিনা অর্থনীতির আশার আলো। এসব সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণে এগুচ্ছে সরকার। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একাধিক বার বলেছেন, সরকারের একটি অন্যতম উন্নয়ন প্রকল্প হলো পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ। আমরা এ প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে সাফল্যের পর সরকার দেশের সব অঞ্চলের মধ্যে সুষ্ঠু এবং সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। পদ্মা সেতু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, যশোর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ ১৯ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের একটি উন্নত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পাশাপাশি উৎপাদন বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য নিরসনসহ জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়াও পদ্মা সেতু এশিয়ান হাইওয়েতে হওয়ায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থার পাশাপাশি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে যাতায়াত ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন ও সুযোগ সৃষ্টি হবে। এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, পদ্মা সেতু আর গ্যাস হলে আমরা খুলনায় বসে মংলা বন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করতে পারব। পদ্মা সেতু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তৈরি পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্প স্থাপন সহজ হবে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মো. শাহজাহান খান বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ প্রতিদিন প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে কবে পদ্মা সেতু হবে। আর পদ্মা সেতুর অগ্রগতি দেখে ব্যবসায়ীরা পুরোদমে বিনিয়োগে নামবেন। খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (কেসিসিআই) সভাপতি কাজী আমিনুল হক বলেন, পদ্মা সেতু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত্তি যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি জাতীয় অর্থনীতির চাকাও গতিশীল হবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জমি ও জনবল সহজলভ্য এবং সস্তা হওয়ার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ এ অঞ্চলে বেশি আসবে। তবে এ জন্য প্রয়োজন বিমানবন্দর ও গ্যাসের নিশ্চয়তা। কেসিসিআই সভাপতি বলেন, ইতিমধ্যে অনেক ক্ষুদ্রশিল্প গড়ে উঠেছে। বড় বড় শিল্প গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে অনেক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী কাজ করছেন। এ জন্য ব্যবসায়ীরা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় জমি কিনে রেখেছেন। বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিসিআই) সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, কুয়াকাটায় তৃতীয় গভীর সমুদ্র বন্দর ও পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হলে এ এলাকায় ব্যাপক শিল্পায়ন হবে। শিল্পায়নের অংশ হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরা তৈরি পোশাক, আবাসনসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিচ্ছেন। এর ফলে যেমন আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন হবে, তেমনি শ্রমিকরা ঢাকামুখী না হয়ে বরিশালমুখী হবেন। আগামীতে চট্টগ্রামের পর বরিশাল হবে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র।

সর্বশেষ খবর