বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আজ পবিত্র আশুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ পবিত্র আশুরা

আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছে হিজরি বর্ষের আজকের দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাত্পর্যময়। আল্লাহ রব্বুল আলামিন এই দিনেই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এই দিনেই কিয়ামত বা পৃথিবী ধ্বংস হবে। আর এই দিনেই ঐতিহাসিক কারবালা প্রান্তরে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) সপরিবারে মর্মান্তিকভাবে শাহাদাতবরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসের মর্মান্তিক এ বিয়োগান্ত ঘটনার দিনটিকে দিয়েছে শোকাবহ বেদনার বিশেষ মাত্রা। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দুই দিন রোজা পালনসহ নফল ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে  দিনটি পালন করে থাকেন। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে দিনটি পালনে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আশুরা উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। শুধু মুসলিম সম্প্রদায় নয়, বিভিন্ন ধর্মীয় ঘটনার কারণে সব আসমানি কিতাবের অনুসারীদের কাছেও ১০ মহররম বিশেষভাবে মহিমান্বিত। মুসলমানদের মধ্যে শিয়া সম্প্রদায় দিনটিকে শোক ও মর্সিয়া দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম কারবালা প্রান্তরে ইসলামের সুমহান আদর্শের পতাকা সমুন্নত রাখতে এজিদের অন্যায় দাবির কাছে নতি স্বীকার না করে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) শাহাদাতবরণ করেন। এভাবেই তিনি উম্মতে মুহাম্মদীর সামনে কোনো ধরনের জুলুম ও অত্যাচারের কাছে নতি স্বীকার না করার দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করে যান। ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ী, বর্তমান ইরাকের কুফা নগরীর কাছে ফোরাত নদের তীরে কারবালা প্রান্তরে অবরুদ্ধ ইমাম হোসাইনকে (রা.) নিজ শিশুপুত্রের মুখে এক আঁজলা পানি তুলে দেওয়ার জন্যও লড়াই করতে হয়। কিন্তু ফোরত থেকে পানি নিয়ে তিনি সন্তানের কাছে পৌঁছার আগেই এজিদ বাহিনী পেছন থেকে তীর ও বর্শা ছুড়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এর আগে কুফাবাসীর দাওয়াতে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর কাফেলা পবিত্র মক্কা নগরী থেকে কুফার পথে রওনা হয়ে পথ ভুল করে কারবালায় গিয়ে পৌঁছায়। সেখানেই ১ মহররম স্ত্রী-পুত্র-পরিজনসহ এজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। ১০ দিন অবরুদ্ধ রেখে তারা এজিদের হাতে বাইয়াত গ্রহণের জন্য ইমাম হোসাইনের (রা.) ওপর চাপ দিতে থাকে। কিন্তু তিনি ইসলামের আদর্শ রক্ষার স্বার্থে বেনামাজি, মদ্যপ ও ধর্মকর্মের বিষয়ে উদাসীন এজিদের ইমামত স্বীকার করে তার হাতে বাইয়াত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। অথচ পানির অভাবে অবরুদ্ধ ইমাম কাফেলার নারী ও শিশুরা কাতরাতে ছিলেন। এ সময় তিনি আর স্থির থাকতে না পেরে পানি সংগ্রহের জন্য বের হন এবং শত্রুবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে ফোরাত তীরে পৌঁছান। কিন্তু পানি নিয়ে শেষ পর্যন্ত আর তাঁবুতে ফিরে আসতে পারেননি। শিশুপুত্রের জন্য পানি সংগ্রহ করে ফেরার পথে তিনি প্রথমে আহত হন। পরে এজিদের সেনাপতি সিমার গলায় ছুড়ি চালিয়ে নিষ্ঠুরভাবে প্রিয় নবীর দৌহিত্রকে হত্যা করে। আর এভাবেই ইমাম হোসাইন (রা.) মুসলিম জাতির সামনে জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে ইসলামের সুমহান আদর্শের পতাকা সমুন্নত রাখার দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করে যান। এই শোকাবহ ঘটনার বাইরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, ১০ মহররম আল্লাহ রব্বুল আলামিন পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এই দিনেই কিয়ামত বা পৃথিবী ধ্বংস হবে। এই দিনে মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম (আ.) ও মা হাওয়ার (আ.) পৃথকভাবে পৃথিবীতে আগমনের ঘটনা ঘটে এবং শত শত বছর পর এই দিনই আরাফার ময়দানে তাদের পুনরায় সাক্ষাৎ লাভ ঘটে। হাদিসে আরও বর্ণিত আছে, এই দিনেই তারা মহান আল্লাহর ক্ষমা লাভ করেন। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে আজ সকালে শিয়া সম্প্রদায় রাজধানীতে হোসনি দালান ও মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ থেকে তাজিয়া মিছিল বের করবে। বিকালে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। আশুরার তাজিয়া মিছিল উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ শহর-নগরনির্বিশেষে সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর