শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

একজন সন্‌জীদা খাতুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

একজন সন্‌জীদা খাতুন

শ্রেণিধর্মনির্বিশেষে আজ জাতি উদ্যাপন করবে তাদের প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ। সাম্প্রদায়িক ধ্যানধারণার বিরুদ্ধে গিয়ে আজ ঐক্যবদ্ধ হবে বাংলাদেশ। জঙ্গিবাদের বিষাক্ত ছোবল উপেক্ষা করে নিজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জয়গান গাইবে সব বাংলাভাষী। কিন্তু কীভাবে শুরু হয়েছিল বাঙালির

এ উৎসব— তরুণ প্রজন্মকে তা জানতে হবে। নববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছিল সেই ষাটের দশকে। এর গোড়াপত্তন যারা করেন তাদের মধ্যে অন্যতম সাংস্কৃতিক অঙ্গনের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বর্তমান সভাপতি সন্জীদা খাতুন। সঙ্গে ছিলেন সমকালীন অন্যরা। সন্জীদা খাতুনের ভাষ্যে, আনুষ্ঠানিকভাবে রমনায় প্রথম ১৯৬৭ সালে পালন করা হয় পয়লা বৈশাখ। কিন্তু এর আগে ঢাকার ইংলিশ প্রিপারেটরি স্কুলের সঙ্গে সরু একটা জায়গায় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে প্রথম বর্ষবরণ পালন করেন সন্জীদা খাতুনরা। সেটি ছিল স্কুলটির বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান। ১৯৬৩ সালে যাত্রা করা স্কুলটির প্রথম অনুষ্ঠান পালন করা হয় পরের বছর ১৯৬৪ সালে। সে সময় স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কিছু নববর্ষের গানও ছিল। পঁয়ষট্টিতে কোনো অনুষ্ঠান পালন করা হয়নি। তবে পরের বছর আবার অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলো। সিদ্ধান্ত হলো স্কুলের অনুষ্ঠান না করে আয়োজন করা হবে নববর্ষের অনুষ্ঠান। বন্ধুদের কাছ থেকে সন্জীদা খাতুনদের অনুরোধ করা হলো, যেন তারা একটি সুন্দর নববর্ষের অনুষ্ঠান উপহার দেন। সেই শুরু। আজও পয়লা বৈশাখ উদ্যাপিত হয়ে আসছে। ষাটের দশকে এটি মূলত শুরু হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বাঙালি সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তবে এর পর থেকে এটি আর জাগরণের অংশ থাকেনি। উৎসবে রূপ নিয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে নতুন বছরকে বরণ। এটি এখন পরিণত হয়েছে বাঙালির অন্যতম প্রধান উৎসবে।

১৯৬৭ সালের কথা। ড. নওয়াজেশ আহমেদ প্রস্তাব দিলেন, পয়লা বৈশাখ রমনার বটমূলে করলে কেমন হয়। সবাই একমত হলেন। ওই সময় পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু হলো রমনার বটমূলে। সে হিসাবে এবার রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের ৫০ বছর হতে চলেছে। সে সময় এই বটমূলে যখন আয়োজন করা হতো বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, পাশেই পসরা সাজিয়ে বসতেন দোকানিরা। সেখানে খাওয়ানো হতো পান্তা-ইলিশ। আর এই পান্তা-ইলিশ বিক্রি করতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা।

রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ আয়োজনের ৫০ বছর পদার্পণ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুন বলেন, ‘১৯৬৭ সালে বর্ষবরণের প্রথম আয়োজনে রবীন্দ্রনাথের “আলোকের এই ঝরনাধারা” গানটি গেয়েছিলাম। সেদিন গানের মাধ্যমে আমরা মনের মধ্যে জমে থাকা ময়লা ও আবর্জনা দূর করার কথা বলেছিলাম। অবিকশিত হওয়া বোধকে বিকশিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। সে সময় পাকিস্তান সরকার আমাদের বাঙালিত্বের পরিচয় প্রকাশের যে কোনো আয়োজনেরই বিরোধিতা করেছিল। সেদিন আমরা সুরের আশ্রয়ে নীরব দ্রোহ করেছিলাম। বাঙালি সংস্কৃতির স্বাধিকারকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিলাম। সেই স্বাধিকার বোধের চেতনার কারণেই একসময় স্বাধীনতা এসেছে। সে-সময়কার অনুষ্ঠানে সবাই যে খুব মনোযোগ দিয়ে গান শুনতেন তা নয়। তবে বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনটিতে পরস্পরকে অভিনন্দন জানানোর ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। সে সময়ই উৎপত্তি হয় “শুভ নববর্ষ” শব্দের।’

সন্জীদা বলেন, ‘জানি, শুধু মঞ্চে গান করে মানুষকে জাগানো সম্ভব হবে না। এমনটা হলে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা হতো না। তাই মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদ রুখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। এটাই হোক বর্ষবরণের প্রত্যয়।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর