চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ির বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন। তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। আছে আরও দুটি শিশু সন্তান। কিন্তু ঘরে ঢুকে যায় পানি। তাই গত বৃহস্পতিবার বিকালেই উঠে যান বাড়ির ছাদে। সে ছাদেই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও দুই শিশু নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটান। চিন্তা ও শঙ্কায় কাটে প্রতিটি মুহূর্ত। এখনো নামেনি পানি। স্থানীয় বাসিন্দা প্রতিবেশী মো. মহসিন বলেন, ‘পরিবারটি নিয়ে আমরা অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলেও প্রাকৃতিক এ দুর্যোগের সময় তাদের করার কিছুই নেই। সবার শঙ্কা ছিল অসুস্থ মহিলাকে নিয়ে।’
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে যায় চট্টগ্রামের অন্তত নয়টি উপজেলা। এর মধ্যে চট্টগ্রামে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফটিকছড়ি, মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডে। ফটিকছড়ি উপজেলার ২২ ইউনিয়নের সবকটিই তলিয়ে যায়। কার্যত বৃহস্পতিবার থেকে অসংখ্য পরিবার পানিবন্দি। ডুবে গেছে ঘরবাড়ি। অনেকেরই ভরসা এখন ত্রাণ। নিজের ঘরে কখন আগুন জ্বলবে তার কোনো হিসাব নেই। বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন ও তরুণরা আছেন উদ্ধারকাজে। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন ত্রাণ। কিন্তু নৌকা বা ইঞ্জিন বোটের অভাবে ত্রাণের বহরগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ডুবে যাওয়া গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না। অনেক জায়গায় স্রোতের কারণেও পৌঁছানো যাচ্ছে না। অনেক জায়গায় আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছাতে আকুতি করছে। ফটিকছড়ি উপজেলার উদ্ধারকাজে যাওয়া তরুণ আইনজীবী ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ৩০ জনের একটি টিম উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ নিয়ে আসি। সবাই উপজেলার সুয়াবিল, দাঁতমারা, হারুয়ালছড়ি ও সুন্দরপুর ইউনিয়নে বিভক্ত হয়ে কাজ করছি। কিন্তু এখানে এসেও বেশি ডুবে যাওয়া প্রত্যন্ত গ্রামে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না। সব দিকে পানি আর পানি। সুয়াবিলের একটি গ্রামে দেখা যাচ্ছে চারদিকে পানি, মাঝখানে একটি বাড়ি। আমরা সেখানে পৌঁছার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। অধিকাংশ ঘরই পানির নিচে।’ জানা যায়, চট্টগ্রামের হালদা ও মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এরই মধ্যে নদীর পানি প্রবেশ করে মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি, বাঁশখালী, পটিয়া, বোয়ালখালী, রাউজান, কর্ণফুলী ও হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলার অন্তত ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে বেশি প্লাবিত হওয়া ফটিকছড়ি, মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডের অনেক বাসিন্দা এখনো আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য আকুতি করছেন। এসব এলাকা এখন নেটওয়ার্কের বাইরে। সংকট আছে শুকনো খাবারের। চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, ‘চট্টগ্রামের নয়টি উপজেলা পানিতে কমবেশি প্লাবিত হয়। এদের উদ্ধারে কাজ চলছে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসন থেকে শুকনো খাবারসহ নানাভাবে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’