হার্ট কিংবা হৃৎপিণ্ডের অসুখ বললেই কিছু চেনা উপসর্গ মনের মধ্যে ভেসে ওঠে। ধূমপান হার্টের সমস্যা বাড়ায় এটা আমাদের সবারই জানা। আবার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যায় হার্টের সমস্যা বাড়ে। হার্ট বা হৃৎপিণ্ড আমাদের মানবদেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। রক্তের মাধ্যমে পুরো শরীরের অসংখ্য কোষে অক্সিজেন পরিবহনের কাজে মূল ভূমিকা পালন করে হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক কার্যকলাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। হৃদরোগে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। তবে একটু সচেতনতা এ থেকে রক্ষা করতে পারে অনেকাংশে। কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে আপনিও হতে পারেন একটি সুস্থ-স্বাভাবিক হৃৎপিণ্ডের অধিকারী। চলুন জেনে নেই হৃৎপিণ্ড ভালো রাখার জন্য কিছু নিয়ম।
>> শরীরের ডায়েট এবং ওজন রাখুন নিয়ন্ত্রণে
খাদ্যাভ্যাসের অনিয়ম শরীরে বাড়তি মেদ এবং স্থূলতা তৈরি করে। এর ফলে হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ পড়ে। হতে পারে করোনারি আর্টারি ডিজিজ, পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ এবং স্ট্রোকসহ নানান ব্যাধি। তাই নিজের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন। স্বাস্থ্যকর খাবার খান। নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। চিকিৎসকের পরামর্শে ঠিক করুন আপনার নিজস্ব ডায়েট মেন্যু।
>> ধূমপান ছাড়ুন
একজন ধূমপায়ী নিজেই ডেকে আনেন হৃদরোগ। আর সব ভালো ভালো অভ্যাসের পাশে এই একটিমাত্র বদভ্যাস আপনাকে মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারে। হার্টের সমস্যার পাশাপাশি ধূমপানের কারণে হতে পারে লাঞ্চের ব্যাধি, ক্যানসার, সময়ের আগেই বুড়িয়ে যাওয়াসহ আরও অনেক সমস্যা। তাই দীর্ঘায়ু চাইলে আজই ধূমপান ছাড়ুন। ইচ্ছে থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
>> শরীরচর্চা করুন
নিজেকে সুস্থ রাখতে শরীরচর্চার বিকল্প নেই। নিয়মিত ব্যায়াম আপনাকে বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে। আপনি যতই অলস জীবনযাপন করবেন ততই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়বে আপনার। হজমের সমস্যা হবে, কোলেস্টেরল বাড়বে, বাড়বে ব্লাড সুগারও। প্রতিদিন মাত্র এক ঘণ্টা ব্যায়াম করে এসব স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আসতে পারেন শূন্যের কাছাকাছি।
>> কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আনুন
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তবে কোলেস্টেরল দু ধরনের হয়। এইচডিএল হলো ভালো কোলেস্টেরল, এটি বেশি থাকাই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে এলডিএল স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। নিয়মিত পরীক্ষা করুন আপনার এলডিএল নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা! না থাকলে ডাক্তারের পরামর্শে ডায়েট ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন করুন।
>> রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা এমনিতেই লাইফস্টাইল ডিজিজ। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, স্ট্রেস আপনার উচ্চ রক্তচাপের কারণ। হার্টের অসুখ আজকাল লাইফস্টাইল ডিজিজে পরিণত হয়েছে। জিনগত ফ্যাক্টর তো পরিবর্তনশীল নয়। কিন্তু জীবনযাত্রায় ছোটখাটো পরিবর্তন আনলেই হার্টের অসুখ প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু দুশ্চিন্তা করার সমস্যাটিকে আমরা কখনোই খুব একটা গুরুত্ব দেই না। স্টেসের কারণে রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটালেও আমরা ভাবি না কিভাবে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অথচ এ কারণে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক। নিজেকে স্ট্রেসমুক্ত রাখুন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
>> মানসিক চাপ মুক্ত থাকুন
মানসিক অবস্থার প্রভাব পড়ে আমাদের স্বাস্থ্যে। যদি সবসময় দুশ্চিন্তা, হতাশা, বিষণ্নতার মধ্যে থাকেন এমন মানুষ অনেক বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহন করেন। তাই, যতটা সম্ভব নিজের মনকে শান্ত রাখুন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত ডিপ্রেশন বা হতাশা থেকে হার্টের সমস্যায় ভোগেন। আজকাল কম বয়সীদের মধ্যেও এর প্রবণতা বাড়ছে। নেগেটিভ ইমোশনগুলোর সঙ্গে হার্টের অসুখের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। হতাশা কিংবা একাকীত্ব হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক মাসল ডিজিজ বা হার্ট ইসকোমিয়ার মতো অসুখের আশঙ্কা বাড়ায়। জীবনে অনেক সমস্যা থাকবে। কিন্তু চেষ্টা করুন তার মাঝেই ভালো থাকাকে খুঁজে নিতে। মেডিটেশন করুন, প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। হার্টকে ভালো রাখুন।
পরিশেষে হার্টের সমস্যার অন্যতম কারণ যথাযথ শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করা। অথচ একটু সচেতন হলেই হার্টকে ঠিকঠাক রাখা যায়। হার্টের সমস্যা একবার ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ তো খাবেনই সঙ্গে স্ট্রেস ও ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠাও জরুরি। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত মেডিটেশন ও যোগাসন করুন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফাঁকা জায়গায় বুক ভরে নিঃশ্বাস নিন। মনে রাখবেন, হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য হৃত্স্পন্দন বাড়ানোর ভালো উপায় হচ্ছে ব্যায়াম। এ জন্য ঘরে বসে ফ্রি-হ্যান্ডও করতে পারেন। এককীত্ব কাটিয়ে উঠতে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। জাঙ্কফুড এড়িয়ে চলুন। তেলেভাজা খাবারও বর্জন করুন। ধূমপান তো একেবারেই না।