সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঈদের দিনে খাবেন কিন্তু ওজন বাড়বে না!

ডা. সজল আশফাক

ঈদের দিনে খাবেন কিন্তু ওজন বাড়বে না!

কোরবানির অনিয়মে শরীর যদি বশে না থাকে? সমস্যা গুরুতর। উৎসব কি কাটবে শুকনো মুখে? একদমই না। তবে একটু বুদ্ধি করে আয়োজন করা দরকার। বিরিয়ানি মাস্ট। সঙ্গে মুরগি, মাটন, কাবাব, রোল। কোরবানির দিনগুলোর মেন্যু মোটামুটি এর আশপাশেই ঘোরাফেরা করবে। ফলাফল সযত্নে লালিত ফিগারের দফারফা। প্রথম ধাক্কাতেই বোল্ড হওয়া যাবে না। একটু শক্ত করে হাল ধরুন। আয়োজনের দিকে একটু সময় দিন। কৌশলে অনেক কিছুই ম্যানেজ করা যায়। এতে খাওয়াও হবে, শরীরও ঠিক থাকবে।

স্বাস্থ্যসম্মত করে তৈরি

করুন কোরবানির মাংস : * গরু বা খাসির মাংসে আছে যথেষ্ট স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড, যা শরীরের পরতে পরতে জমে বাড়িয়ে দেয় রক্তের টিজি (ট্রাইগ্লিসারাইড), কোলেস্টেরল, এলডিএল, ভিএলডিএলের মাত্রা। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় হৃদরোগের ঝুঁকি। যেহেতু কোরবানির মাংস একেবারে না খেলেই নয়, তাই এমনভাবে রান্না করতে হবে যাতে ফ্যাট বা চর্বি কম খাওয়া হয়। এজন্য-

* মাংসকে বড় টুকরো না করে ছোট করে কাটুন। *  মাংস কাটার সময় যতটা সম্ভব চর্বি কেটে বাদ দিন। * রান্না করা মাংস ফ্রিজে রেখে চর্বিটা জমা হলে পরবর্তী সময়ে খাওয়ার আগে চর্বিটা চামচ দিয়ে আঁচড়িয়ে বাদ দিন। *  চর্বিযুক্ত মাংস খাওয়া পরিহার করুন। বয়স্করা গরু বা খাসির পেছনের উরুর মাংস বেছে নিন। সেখানে চর্বি তুলনামূলক কম থাকে। কাবাব, গ্রিলড করা মাংসেও চর্বি কম থাকে। * ভাজা মাংসের চেয়ে প্রেসারকুকারে রান্না করা মাংস স্বাস্থ্যসম্মত। * চর্বির পরিমাণ কমানোর জন্য রান্নায় টমেটো, রসুন, আনারস, কামরাঙা, জলপাই, আমড়া, সিরকা, লেবু ইত্যাদি  যোগ করা যেতে পারে। * রান্নায় উদ্ভিজ্জ তেল, যেমন- সূর্যমুখী, জলপাই তেল, সরিষার তেল, সয়াবিন ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।

দিনের শুরুতে : চোখ খুলেই চিনি দিয়ে চা খাওয়া বন্ধ করুন। প্রয়োজনে মিষ্টির জন্য সুইটনার চলতে পারে। চা-এর বদলে অল্প গরম পানিতে লেবু চিপে খেতে পারেন। * ওজন বাড়াতে না চাইলে নিয়মিত ব্রেকফাস্ট ছেড়ে সকালের খাবারে রাখুন ৫০ গ্রামের মতো হুইট ফ্লেক্স। ওটস-ও খেতে পারেন, দুয়েকটা ফল খাবেন।

প্রতিবার অল্প করে খান : মাথায় রাখুন আপনি যেখানেই যাবেন অল্প করে খাবেন। একটু একটু করে খান। দিনে চারবারের বদলে ছয়বার খান। যেমন- সারাদিনে ২০০০ ক্যালরি খাওয়ার কথা থাকলে প্রতিবার ৪০০ ক্যালরি করে পাঁচবার খাবেন। দুপুরে হালকা কিছু খেয়ে বিকাল চারটার আগে খেতে পারেন ফ্রুট সালাদ বা খোসাসমেত দুয়েকটা ফল। ফলের রস খাবেন না। গোটা ফলই বেশি উপকারী। দাওয়াত থাকলে ঘরে কম করে খাবেন। * শুরু করুন এক গ্লাস পানি দিয়ে। দেখবেন খাই খাই ভাবটা আর থাকছে না। এরপর নজর সালাদের দিকে। সবজির আইটেম থাকলে অবশ্যই খাবেন। খাবার শেষে অবশ্যই বোরহানি কিংবা টক দই থাকবে। * হাতের কাছেই রাখবেন শসা, টমেটো, গাজর। প্রচুর ফল খাবেন। পানি খাবেন অন্তত ১২ গ্লাস। পানি ওজন কমায়। চর্বি যাতে শরীরে শোষিত না হয় সে জন্য খাবার গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে সালাদ এবং শেষে টক দই বা বোরহানি গ্রহণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া মাংস খাওয়ার পরপরই কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নিলেও শরীরে চর্বি জমার প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। * রাতের খাবার শেষ করবেন ৯টার মধ্যে। খাওয়ার পর ইসবগুলের ভূষি খেতে পারেন। আধা ঘণ্টা হেঁটে তারপর ঘুমাতে যান।

খেলেই গল্প শেষ নয় : ক্যালরি খরচের কথাটাও মাথায় রাখতে হবে। বলা বাহুল্য, এক্সারসাইজ ঈদের দিন আরও জরুরি। নিদেনপক্ষে গা-ঝাড়া দিয়ে ঘরের কাজকর্মে হাত লাগান। একটু হাঁটাহাঁটি করুন। আর মনের মধ্যে একটি কথা গেঁথে রাখুন, এই ঈদে কম করে খাব, আর ওজন বাড়তে দেব না একটুও।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

সর্বশেষ খবর