সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসন আমলে ব্যাংক খাত থেকে কমপক্ষে ২ লাখ কোটি টাকা লোপাটের কারণে বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আট-নয়টি বেসরকারি ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে হিমশিম খাচ্ছে। যা ব্যাংক গ্রাহকদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। কিছু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকও তারল্য সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। দুর্বল হয়ে পড়া এই ব্যাংকগুলোকে পুনর্গঠন ও মূলধন সহায়তার মাধ্যমে রক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে চিহ্নিত দুর্বল ব্যাংকগুলোর সম্পদ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে সম্পদের গুণমান ও ব্যবসার কার্যকারিতা। আন্তর্জাতিক ঋণদান সংস্থার সহায়তায় ব্যাংকগুলোর এসব মূল্যায়ন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা এবং কিছু ব্যাংকের সম্ভাব্য মূলধন সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক খাত সহায়তা প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রায় ২৭০ মিলিয়ন ডলার চেয়েছে। যেখান থেকে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সক্ষমতা শক্তিশালী করতে প্রায় ৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে। পুনর্গঠন এবং মূলধন সহায়তা ছাড়াও ব্যাংকের সম্পদের গুণমান এবং ব্যবসায়িক কার্যকারিতা মূল্যায়ন এবং সক্ষমতা কাঠামো বাড়ানো, ব্যাংক খাতকে স্থিতিশীল করার জন্য একটি কৌশল প্রণয়ন করা হবে। এ ছাড়াও আর্থিক সংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যাংক খাতকে স্থিতিশীল করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সহায়তা করার ওপর জোর দেবে।
বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল গত মাসের শুরুর দিকে এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করেছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে প্রকল্পের উপাদান নিয়ে আলোচনা করেছে। সূত্র মতে, গভর্নর ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতাগুলো মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি একটি সঠিক সম্পদ গুণমান পর্যালোচনা এবং ব্যাংক খাত পুনর্গঠনের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। কিছু ব্যাংকের সম্ভাব্য মূলধন, প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তার অনুরোধ করেন বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলকে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক খাত থেকে কমপক্ষে ২ লাখ কোটি টাকা লুট করেছে। এর ফলে বেশ কিছু সংখ্যক ব্যাংক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় আট থেকে নয়টি বেসরকারি ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। যা ব্যাংক গ্রাহকদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। কিছু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকও তারল্য সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এর চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, অনেকেই ব্যাংকের টাকা লুট করে বাংলাদেশ ছেড়েছেন এবং বেশির ভাগ ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করছেন না। নয়টি দুর্বল ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করার জন্য বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা অন্যান্য বহুজাতিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণের ব্যবস্থা করার জন্য বেসরকারি ব্যাংকের মালিকরা অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে অনুরোধ করেছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ব্যাংক খাত সংস্কার কর্মসূচির অধীনে কিছু ব্যাংকের মূলধন সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে। ব্যাংকের সম্পদের গুণমান মূল্যায়নের পর যদি আমরা দেখি ব্যাংকগুলোর মূলধন সহায়তার প্রয়োজন, আমরা প্রয়োজনীয় তহবিলের ব্যবস্থা করব।