শিরোনাম
বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

কোমলমতি শিশুরা যখন বিকৃত যৌনতার শিকার

ছবি তোলার কথা বলে কিংবা ভালো কাজ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে রাজধানীর সায়েদাবাদ ও সদরঘাটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পথশিশুদের মুগদায় নিজের স্টুডিওতে নিয়ে আসতেন শিশুসাহিত্যিক টিপু কিবরিয়া। বিকৃত মানসিকতা থেকে তিনি নয় বছর ধরে পথশিশুদের দিয়ে পর্নো ছবি তৈরি করে তা ইন্টারনেটে বিক্রি করছিলেন। আর টিপু তার বিদেশি খদ্দেরদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন নতুন ছেলেশিশু সংগ্রহ করে পর্নো ছবি তৈরি করতেন। ঘটনাটি গণমাধ্যমে উঠে আসার পর পুলিশের তদন্তে জানা যায়, রাজধানীর মুগদায় টিপুর স্টুডিওতে চার-পাঁচ শ শিশুর ছবি রয়েছে, যা উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে এই শিশুদের দিয়ে তৈরি করা কয়েক হাজার পর্নো ছবিও উদ্ধার করে এ মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি। চলতি বছরের জুলাইয়ের প্রথমে এই শিশুসাহিত্যিককে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করে গ্রেফতার করা হয়। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে বাংলাদেশের সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ প্রতিরোধ দল টিপু ও তার দলের অন্যদের শনাক্ত করে। এদিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জে জামিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় যৌন নির্যাতনের পর ১৪ বছর বয়সী এক ছাত্রকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর রবিবার মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মাদ্রাসাটি বন্ধ ঘোষণা করে। এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ নয়জনকে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
এদিকে সম্প্রতি সমকামিতায় রাজি না হওয়ায় রাজধানীর উত্তরায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ও লেভেলের ছাত্র জুবায়ের আহমেদকে পুকুরে চুবিয়ে হত্যা করেন কিশোরটির ফুটবল প্রশিক্ষক আলজেরীয় নাগরিক আবু ওবায়েদ। ওপরের ঘটনাগুলো ছাড়াও রাজধানীসহ সারা দেশে প্রতিনিয়ই শিশু-কিশোররা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এর কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও অনেক ঘটনাই গোপন থেকে যাচ্ছে। শিশু নির্যাতন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, গ্রামে অভিভাবকরা সুরক্ষার নামে কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। অথচ একটি কন্যাশিশুকে যে বয়সে বিয়ে দেওয়া হয় সে সময়ে শিশুটি মানসিকভাবে বিয়ের মতো সম্পর্কের জন্য প্রস্তুত নয়। এ কারণে বলা যায়, প্রতিটি কন্যাশিশুই বিয়ের পর ‘ম্যারিটাল রেপ’-এর শিকার হয়।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, দক্ষিণ এশিয়ায় বয়ঃসন্ধিকালে প্রতি চারজন কিশোরীর মধ্যে কমপক্ষে একজন তার সঙ্গীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। আর বাংলাদেশে এ হার সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৪০ শতাংশ। এতে আরও বলা হয়- ১৮ বছরের আগেই যেসব মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় তারা ১৮ বছরের পরে বিয়ে করা মেয়েদের তুলনায় বেশি সঙ্গীদের দ্বারা নির্যাতিত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘আমাদের দেশে শিশু অধিকার সুরক্ষায় আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। পথশিশু তো বটেই, এমনকি পরিবারের নিরাপদ গণ্ডির মধ্যে থেকেও শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তা ছাড়া গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদেরও এই নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষকদের দ্বারাও কোমলমতি শিশু নির্যাতিত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে কন্যাশিশুদের ছেলেশিশুদের চেয়ে তুলনামূলক বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতন ছাড়াও রয়েছে যৌন নির্যাতন। বিএনডব্লিউএলএর মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সালমা আলী বলেন, দৌলতদিয়া পতিতালয়ে জোরপূর্বক মেয়েদের পতিতা বানানো হচ্ছে। বিশেষ করে ফরিদপুরের একটি পতিতালয়ে ১০ থেকে ১৫ বছরের মেয়েদের জোরপূর্বক পতিতা বানানো হচ্ছে। তবে এসব ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট কাজ করছে। এলাকার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, চেয়ারম্যান অর্থাৎ স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। শিশুদের সুরক্ষায় মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, গ্রাম্য আদালত ও স্থানীয় সরকারকে এ বিষয়ে সক্রিয় থাকতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বা চেয়ারম্যানকে সচেতন থাকতে হবে। এ ছাড়া সরকারের মহিলা ও শিশু বিষযক মন্ত্রণালয়কে এ অনাচার রোধে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

সর্বশেষ খবর