বুধবার, ২২ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

অস্ত্র গোলাবারুদে উদ্বৃত্ত দেশ

রপ্তানির উদ্যোগ নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি

অস্ত্র গোলাবারুদে উদ্বৃত্ত দেশ

খাদ্যশস্যের পর এবার অস্ত্রশস্ত্রেও উদ্বৃত্ত দেশ হিসেবে নাম লিখাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এই উদ্বৃত্ত অস্ত্র বিদেশে রপ্তানির ব্যাপারেও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় (বিওএফ) উৎপাদিত অস্ত্র, বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ বিদেশে রপ্তানির ব্যাপারে মতামত চেয়েছে। একইসঙ্গে অস্ত্র ও বিস্ফোরক রপ্তানির ক্ষেত্রে কী ধরনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে সে ব্যাপারেও অবহিত করতে বলা হয়েছে।
অস্ত্রশস্ত্র রপ্তানি সম্পর্কিত চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে সিনিয়র বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি। এ ব্যাপারে খুব শিগগিরই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে মতামত জানিয়ে দেওয়া হবে।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান অস্ত্র-গোলাবারুদ রপ্তানি করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে বাংলাদেশ হবে সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে তৃতীয় অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ। জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ প্রথম চার কোটি ডলারের অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানি  করেছিল। ৩১ বছর পর আবার এই উদ্যোগ নেওয়া হলেও বর্তমানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানির কোনো আইন বা নীতিমালা নেই। পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ‘অস্ত্র ছাড়া সবকিছু’ (এভরিথিং বাট আর্মস) এই নীতি অনুসরণ করে আসছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২১ মে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, বিওএফ বর্তমানে যে পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক উৎপাদন করেছে তা দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ হয়ে উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। সমরাস্ত্র কারখানা ইতিমধ্যে পর্যাপ্ত অস্ত্র ও গোলাবারুদ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। এমনকি দেশের চাহিদা মেটানোর পর অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিদেশে রপ্তানি করারও সক্ষমতা রয়েছে বিওএফ-এর। প্রধানমন্ত্রী সমরাস্ত্র কারখানার উৎপাদন সক্ষমতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দেশের চাহিদা মেটানোর পর অস্ত্র, বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ বিদেশে রপ্তানির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।’ প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিদেশে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানির বিষয়ে মতামতসহ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করার বিষয়টি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। বাণিজ্যমন্ত্রণালয় জানায়, এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অস্ত্র রপ্তানির অনুমোদন চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল বিওএফ। তবে রপ্তানি নীতিতে (২০১২-১৫) বাংলাদেশে তৈরি অস্ত্র, বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ বিদেশে রপ্তানি করার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ ব্যাপারে সমরাস্ত্র কারখানার প্রস্তাবে তাৎক্ষণিকভাবে অনুমোদন দেওয়া সম্ভব হয়নি। এবার এ বিষয়ে যেহেতু সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা রয়েছে তাই গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান রপ্তানি নীতি আদেশের পরিশিষ্ট-১-এ রপ্তানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকা দেওয়া রয়েছে। পরিশিষ্টের ৮.৬ অনুযায়ী ‘আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও সংশ্লিষ্ট উপকরণ’ রপ্তানি নিষিদ্ধ। পরিশিষ্ট-২-এ শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানি পণ্যের তালিকা দেওয়া রয়েছে, সেখানেও অস্ত্র ও গোলাবারুদ নেই। এতে আরও বলা হয়েছে, রাসায়নিক অস্ত্র (নিষিদ্ধকরণ) আইন, ২০০৬-এর তফসিল ১, ২ ও ৩-এ বর্ণিত রাসায়নিক দ্রব্যাদি উক্ত আইনের ৯ ধারার বিধান মোতাবেক রপ্তানি নিষিদ্ধ বা রপ্তানিযোগ্য হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানি করতে হলে প্রচলিত রপ্তানি নীতিতে সম্ভব হবে না। তবে আগামী তিন বছরের জন্য যে নতুন রপ্তানি নীতি তৈরি করা হচ্ছে সেখানে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হলে আর কোনো বাধা থাকবে না। খুব শিগগিরই নতুন রপ্তানি নীতি (২০১৫-১৮) মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সমরাস্ত্র উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে বিওএফ তার উৎপাদন পরিসর অনেক সম্প্রসারিত করেছে। ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক মান সংস্থার (আইএসও) সনদ পেয়েছে বিওএফ। এ পর্যায়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া গেলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার পাশাপাশি এক্ষেত্র প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছে বিওএফ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানায়, গাজীপুরের জয়দেবপুরে অবস্থিত সমরাস্ত্র কারখানাটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু ১৯৭০ সালে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ পরিচালিত এই কারখানা মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৮২ সালে এর আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে পাঁচটি কারখানা পরিচালনা করছে বিওএফ। চীন, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, জার্মানি ও ইতালির প্রযুক্তি সহায়তায় বিওএফ বর্তমানে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সংস্থা।

সর্বশেষ খবর