রংপুরের বদরগঞ্জে এখন নৈসর্গিক দৃশ্য রচনা করে রেখেছে আমের মুকুল। এর মৌ মৌ গন্ধ আর সঙ্গে মৌমাছির গুনগুন শব্দে মুখরিত গোটা অঞ্চল। এই সঙ্গে কৃষকের স্বপ্নও অবারিত। কারণ তারা আম আর লিচুর মুকুলকে ভিত্তি করে মধু আহরণের পরিকল্পনা করেন। এ থেকে তারা বাড়তি আয় করেন। উপজেলার কালুপাড়া ইউনিয়নের কুমারপাড়া এলাকার আম-লিচু বাগান চাষি মাহফুজ ওয়াহিদ চয়ন বলেন, সরিষার সময়ই শুধু মৌ চাষ হয়। কিন্তু আম-লিচু বাগানেও যে মৌ চাষ করা যায়- এটা আগে কখনো মাথায় আসেনি। সাতক্ষীরা হতে আসা একদল মৌয়াল আমার আম-লিচু বাগানে মৌচাষের কথা বললে আমি রাজি হয়ে যাই। তখনই শুরু হয় আম-লিচু বাগানে মৌ চাষ। মূলত আম-লিচু বাগানে মৌ চাষের কারণে পরাগায়ন বেশি হয়, ফলনও বৃদ্ধি পায়। এটাই আমার লাভ। সাতক্ষীরা থেকে আসা মৌয়াল মোকারম হোসেন জানান, এই লিচুবাগানে মৌমাছির বাক্স রয়েছে আড়াইশটি। সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে বাক্সগুলো থেকে মধু সংগ্রহ করা হবে। এই মধু সংগ্রহ অভিযান চলবে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। আশা করছি, প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১২ মণ মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। চলতি মৌসুমে এই বাগান থেকে ৫০ মণ মধু সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রতি মণ মধু বিক্রি করা হয় ৬-৭ হাজার টাকায়। এই মধু দেশের বিভিন্ন কোম্পানির চাহিদা মিটিয়ে ভারতে রফতানি করা হয়।
ভারতীয় মধু কোম্পানিগুলো সস্তা দামে মধু কিনে বিদেশে রফতানি করে। তিনি আরও জানান, এই পেশার সঙ্গে যুব সমাজের একটি বড় অংশ জড়িত। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় সম্ভাবনাময় এই মধু চাষ শিল্পের তেমন কোনো অগ্রসর হচ্ছে না। মধু চাষে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসত, তেমনি দূর হতো বেকার সমস্যা।
বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের জীববিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, আম-লিচু ক্ষেতে মৌমাছি পরাগায়নে সহায়তা করে। মার্চের শুরু হতে আম-লিচুর মুকুল হতে মধু আহরণ শুরু হয়। সারা দেশে চাষিদের যদি আম-লিচু বাগানে ফলের পাশাপাশি মধু চাষের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়- তাহলে সব কৃষকই অনেক লাভবান হবেন। একটি জমিতে ১০৮টি কাঠের ফ্রেমে প্রতি সপ্তাহে চাষিরা ৩ মণের অধিক মধু সংগ্রহ করতে পারেন। উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় বলেন, ১০ বছর আগে বদরগঞ্জ উপজেলায় ফলের বাগান ছিল ১৫০ হেক্টরে। বর্তমানে তা বেড়ে ৭০০ হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে। আম লিচুর পাশাপাশি মৌ চাষ করে কৃষকরা একদিকে যেমন নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে পারেন, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির চাকা সচলেও সহযোগিতা মিলতে পারে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, উপজেলার বহু আম ও লিচু বাগানে এখন মধু চাষ হচ্ছে। এটি একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনার দিক।