বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্বপ্নের যাত্রায় দুই সেতু

এ মাসেই দ্বিতীয় ভৈরব রেল সেতুতে চলবে ট্রেন, শেষ পর্যায়ে তিতাস

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

স্বপ্নের যাত্রায় দুই সেতু

আরও এক ধাপ সময় কমছে পূর্বাঞ্চল ট্রেনের। চলতি মাসেই ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দ্বিতীয় ভৈরব ও তিতাস রেলওয়ে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হতে যাচ্ছে। এ দুটি সেতুর কাজ শেষ হলেই ট্রেন চলাচলে আরও ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় কমে আসবে বলে জানান রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। একইভাবে ডাবল লাইনে ক্রসিং ছাড়াই ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের সময় এবং যাত্রী হয়রানিও কমবে। বাড়বে ট্রেনের সংখ্যাও। এ দুটি সেতু পুরোপুরি চালু হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে। এর আগে ১ মার্চ থেকে আন্তনগর সব ট্রেনের ৫ থেকে ৬৫ মিনিট পর্যন্ত সময় কমানোর আদেশ জারি করে টাইম টেবিল বইয়ের সময়সূচি সংশোধন করা হয়। এ নিয়ে চলাচলরত ভ্রমণকারীদের সময় কমানোর পাশাপাশি সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে আরও এক ধাপ। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে টঙ্গী থেকে ভৈরব বাজার স্টেশন পর্যন্ত ডাবল রেললাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয় গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে। এই ডাবল লাইন চালুর ফলে এ অংশে এখন প্রতিদিন আন্তনগর ট্রেনসহ ৮৪টি ট্রেন চলাচল করছে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলের রেলপথে বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রা সময়ও অনেকাংশে কমেছে বলে রেলের টাইম টেবিল বই সূত্রে জানা গেছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ও ভৈরব সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মো. আবদুল হাই বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রেলওয়ে অ্যাপ্রোচসহ ৯৫৯ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু দুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৩৩ কোটি টাকা দেবে সরকারি তহবিল (জিওবি) ও ৮২৬ কোটি ২০ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে ভারতীয় ঋণ সহায়তা (এলওসি)। ইতিমধ্যে সেতু দুটির ৯৫ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ভৈরব সেতু ও তিতাস সেতু চালু হলে আরও অন্তত ১০ মিনিট সময় কমবে। এ ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সেতু দুটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি জানান। রেলওয়ে সূত্র জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-নোয়াখালীসহ পূর্বাঞ্চলীয় জোনে সরাসরি রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে ১৯৩৭ সালে মেঘনা নদীতে প্রথম সেতু নির্মিত হয়। দীর্ঘ ৮০ বছর পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ডাবল লাইন নির্মাণের সুফল তুলতে দ্বিতীয় ভৈরব সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুরনো ও নতুন—দুটি সেতু দিয়েই চলাচল করবে ট্রেন। একটি দিয়ে ডাউন ট্রেন অপরটিতে আপ ট্রেন চলাচল করবে। সেতুগুলো যাতে ডুয়েল গেজ হিসেবে ব্যবহার করা যায় এ জন্য সেতুর ওপর ডুয়েল রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। রেলওয়ে অ্যাপ্রোচসহ দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদিত হয় ২০১০ সালের ৯ নভেম্বর। ১২টি পিলার ও নয়টি স্প্যানবিশিষ্ট ৯৮৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ মিটার প্রস্থের ভৈরব সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন-এফকন জেভির সঙ্গে ভৈরব সেতু নির্মাণে চুক্তি হয়। একই বছর ২৫ ডিসেম্বর শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। প্রথম দফায় গত বছর ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দ্বিতীয় ধাপে মেয়াদ বাড়িয়ে তা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। একইভাবে ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তিতাস সেতু নির্মাণের চুক্তি হয় নিয়োজিত ঠিকাদার গ্যানন-এফএলসিএলের সঙ্গে। ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ১৯১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে তিতাস সেতুটি। সম্প্রতি রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক নির্মাণাধীন সেতু দুটি পরিদর্শন করেন। এ প্রকল্প পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন, রেলওয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আমজাদ হোসেন. পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ও সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী আবদুল হাইসহ মন্ত্রণালয় ও রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর