মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বদলে যাবে মাতারবাড়ী

জিন্নাতুন নূর

বদলে যাবে মাতারবাড়ী

কক্সবাজারের পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী। সাগরের কাছাকাছি অবস্থিত মহেশখালী উপজেলা মূলত সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা— ছোট এ তিনটি দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এ দ্বীপের চেহারা আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যেই বদলে যাবে। ভাগ্য বদলে যাবে এ এলাকার বাসিন্দাদের। কারণ, মহেশখালীতে বাস্তবায়ন হচ্ছে জ্বালানি খাতের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প। এখানে গড়ে তোলা হচ্ছে বিশাল এক এনার্জি হাব। বিদ্যুৎ বিভাগের দেওয়া তথ্যে, বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে এখানে তৈরি হবে ছয়টি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তিনটি এলএনজি (লিকুডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) টার্মিনাল। জ্বালানি তেল পরিবহনে করা হচ্ছে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল। কয়লা খালাসের জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে বড় টার্মিনাল। আর এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এ এলাকায় হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হবে। মহেশখালীর এনার্জি হাব বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২ লাখ ৫ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সরকার বেশ কয়েকটি বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। আর এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যে পরিমাণ কয়লা প্রয়োজন তা আমদানি করা হবে। জাহাজে আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে সাগরের কাছেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। আর সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা যদি সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন হয় তাহলে আগামী এক দশকেই মহেশখালী থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্র : কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার যৌথ উদ্যোগে এ অঞ্চলে নির্মাণ হবে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এজন্য মালয়েশিয়ার সঙ্গে যৌথ মূলধনি কোম্পানি গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে ব্যয় হবে প্রায় ২০০ কোটি ডলার বা ১৬ হাজার কোটি টাকা। মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি তেনেগা ন্যাশনাল বারহেড ও পাওয়ারটেক বারহেডের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে পিডিবির এ চুক্তি হতে যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সমান অংশীদারিত্ব থাকবে। এরই মধ্যে পিডিবি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপনের জন্য সেই এলাকায় জমিও অধিগ্রহণ করেছে। এ ছাড়া মহেশখালীতে ৭০০ মেগাওয়াটের আরও একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সিঙ্গাপুরের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা বা ১২৫ কোটি ডলার। সরকার ও এডিবির অর্থায়নে মাতারবাড়ীতে ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের আরও একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এর বাইরেও এখানে আরও বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা আছে।

এলএনজি টার্মিনাল : বর্তমানে দেশে চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি আছে। আর এ ঘাটতি মেটাতে মহেশখালীর উপকূলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়াও এলএনজি টার্মিনাল গড়ে তোলা হবে। প্রাথমিকভাবে এ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। পরে এ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা। আগামী বছর থেকে এ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতে পারে। ভারতের রিলায়েন্স গ্রুপও মহেশখালীতে একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। কারণ, রিলায়েন্স বাংলাদেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে চায় আর তারা সরবরাহকৃত এলএনজি গ্যাস দিয়েই এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে আগ্রহী। সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে বাংলাদেশের সামিট গ্রুপও মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে।

এসপিএম প্রকল্প : সমুদ্রের জাহাজ থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরাসরি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড পর্যন্ত জ্বালানি তেল সরবরাহে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল (এসপিএম) প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে মহেশখালীতে। ডাবল পাইপলাইনসহ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, মহেশখালীতে যেসব অবকাঠামো গড়ে উঠছে তা বাস্তবায়ন হলে আসছে দিনে এ দ্বীপটিই হয়ে উঠবে দেশের অন্যতম শিল্পাঞ্চল।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুসারে সরকার মহেশখালী দ্বীপকে একটি এনার্জি হাব হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে। জনবসতি কম ও সাগরপথে পণ্য পরিবহন সহজ হওয়ায় এখানে এনার্জি হাব গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মহেশখালী বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এর ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু হবে। এ কাজ শেষ হলেই আমরা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের মূল কাজে যাব। এরই মধ্যে আমরা একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য টেন্ডারে গিয়েছি। যৌথভাবে আরেকটি টেন্ডারকাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। ইতিমধ্যে তরলীকৃত এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য চুক্তি হয়ে গেছে। এর অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে আসছে সেপ্টেম্বরে। আশা করছি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ শেষ করবে ২০১৮ সালের মার্চে।’ প্রতিমন্ত্রী জানান, ‘এখানে কয়লা থেকে কমপক্ষে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। এজন্য কয়লা আমদানিতে মহেশখালীতে জেটিও নির্মাণ করা হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর