সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

সোলার বিদ্যুতে পাতকুয়া

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

সোলার বিদ্যুতে পাতকুয়া

ঠা ঠা বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে খ্যাত নওগাঁর সাপাহারে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব উদ্ভাবনে পানীয় জল সমস্যা সমাধানে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ‘পাতকুয়া খননের মাধ্যমে স্বল্প সেচে সবজি চাষ প্রকল্প’। বরেন্দ্র এলাকার চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, গোমস্তাপুর, নওগাঁর নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার ও পত্নীতলার কিছু অংশে মাটির নিচে বালির কোনো লেয়ার না থাকায় সেখানে কোনো গভীর নলকূপ বা অগভীর নলকূপ কিছুই বসানো সম্ভব হয় না। ফলে প্রতি বছর খরা মৌসুমে ওই সব এলাকায় পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দেয়। এ বিষয়ে সাপাহার বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, তিনিসহ অন্যান্য প্রকৌশলী বেশ কয়েক বছর ধরে ওইসব এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন উপায় নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন। অবশেষে তাদের নিজস্ব উদ্ভাবনে একটি পরিকল্পনা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠালে সরকার তা গ্রহণ করে বরেন্দ্র এলাকায় পাতকুয়া খননের মাধ্যমে স্বল্প সেচে সবজি চাষ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন করেন। এরপর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রায় কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে সাপাহার উপজেলায় ১৪০টি পাতকুয়া স্থাপনের জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ওপর দায়িত্বভার ন্যস্ত করা হয়। বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই তিন শ্রেণির ঠিকাদারের মাধ্যমে উপজেলার পিছলডাঙ্গা, সিংগাহার, ধর্মপুর, বাহাপুর, বাসুলডাঙ্গা, মদনশিং, ফুরকুটিডাঙ্গা, করল ডাঙ্গাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ৬০ থেকে ৭০টি পাতকুয়া খনন কাজ প্রায় সমাপ্ত করেন। বর্তমানে কূপগুলোর বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়ে অনেকেই সুবিধা ভোগ করছে এবং কিছু অংশে খনন কাজ অব্যাহত রয়েছে। প্রতিটি পাতকুয়া মেশিনের মাধ্যমে ১০০ থেকে ১২০ ফুট খনন করা হয়।

এরপর ওই খননকৃত কূপে ৪৬ ইঞ্চি ব্যাসের রিং বসানো হয় এবং কূপের ওপরে লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে নির্মিত ৩২ ফুট ব্যাসার্ধের একটি ঢাকনা স্থাপন করা হয়ে থাকে। এরপর কুয়া হতে পানি উত্তোলনের জন্য ঢাকনার উপরিভাগে ২৫০ ওয়াটের ১৬টি সোলার প্যানেল বসানো থাকে। এ ছাড়া ঢাকনাটি এমনভাবে বসানো হয় যাতে বৃষ্টির পানি ঢাকনা চুয়ে কূপের মধ্যে পড়তে পারে। যার ফলে সুফলভোগী ওই কৃষক-কৃষাণীরা পানীয় জল সংগ্রহসহ সকাল ৯টা হতে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সোলারের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে তাদের শাক-সবজিতে দিতে পারে। কূপগুলোতে কোনো ব্যাটারি কিংবা বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় শুধু দিনের মধ্যে প্যানেলের মাধ্যমে যতটুকু পানি কূপ হতে উত্তোলন করা হয় সারা রাতে তা আবার যেন পূর্বের লেয়ারে ফিরে আসতে পারে। বর্তমানে সাপাহার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিনন্দন পাতকুয়াগুলো যেমন এলাকায় শোভাবর্ধন করছে তেমনি এলাকার সুফলভোগীরাও ওই কূপ হতে স্বল্প সেচে সবজি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। মাটির নিচের সুপেয় পানীয় জলের অভাবে এলাকার মানুষ এক সময় পুকুরের পানি পান করত। দু-একটি গ্রামে মানুষ ৮০-৯০ ফুট কুয়া খনন করে পানীয় জলের সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা করতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কারও কারও প্রাণ পর্যন্ত দিতে হতো। এখন সে এলাকাগুলোতে মেশিনের সাহায্যে সোলার চালিত পাতকুয়াগুলো স্থাপন করে সুপেয় পানীয় জলের সমস্যা সমাধানে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর