বাংলাদেশের আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মাঠে নেমেছেন নারী, পুরুষ, ছাত্র এবং জনসাধারণ। কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে মাঠে নামা মানুষ এ দাবি তুলেছেন। তারা গোটা রাজ্য ‘স্তব্ধ করার’ ডাক দিয়েছেন।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, মমতার পদত্যাগ দাবিতে গতকাল দুপুরে বিজেপি দুই ঘণ্টা ‘রাস্তা রোখো’ বা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। এতে অংশ নেন লাখো মানুষ। এ ছাড়া বিকাল থেকে বিজেপির মহিলা মোর্চার ব্যানারে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বাড়ি পর্যন্ত মোমবাতি মিছিল করা হয়েছে। অন্যদিকে আরজিকর কান্ডের প্রতিবাদে সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়া (এসইউসিআই) সকাল থেকে ১২ ঘণ্টার বাংলা বনধ্ েস্তব্ধ থাকে পশ্চিমবঙ্গ। এর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী আওয়াজ তোলেন, ‘দফা এক, দাবি এক, মমতার পদত্যাগ।’ আরজিকর হাসপাতালে ঘটে যাওয়া তান্ডবের প্রতিবাদ করে শুভেন্দু বলেন, ‘দফা এক, দাবি এক, মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগ। আমি এই রাজ্যের সব রাজনৈতিক দলকে বলব, স্তব্ধ করুন বাংলা। বনধ্ ডেকে করুন, যেভাবে পারেন করুন। সবাই মিলে করুন, স্তব্ধ করুন পশ্চিমবঙ্গ।’ খবরে বলা হয়, এমন আন্দোলন কখনো প্রত্যক্ষ করেননি মমতা ব্যানার্জি। তারপরও তিনি আগের দিন মন্তব্য করেন, ‘আমাদের বাংলায় ধর্মঘট হয় না। কারণ আমাদের ধর্মঘট বন্ধ করা আছে। যে ধর্মঘটে অংশ নেবে সে নিজেরটা নিজে বুঝে নেবে। কিন্তু আমি সবাইকে আবেদন করব সব খোলা রাখতে। বাংলাকে অচল করে দেওয়ার পরিকল্পনা করে, সন্ত্রাস করার একটা পরিকল্পনা চলছে বাম আর রামের।’ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, আরজিকরে তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় পুরো উত্তাল রাজ্য। জনতার প্রতিবাদ রাজ্য ছাড়িয়ে অন্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ক্ষোভে ফুঁসছে কলকাতা শহর। আরজিকর কান্ডে মমতার পদত্যাগের দাবি করে কাতারবদ্ধ হয়েছে বিজেপি ছাড়াও বাম সংগঠনগুলো। এদিকে আরজিকর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) আজ শনিবার ২৪ ঘণ্টা দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। আইএমএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আজ দেশব্যাপী শুধু জরুরি পরিষেবা ছাড়া আর কোনো পরিষেবা দেবেন না চিকিৎসকরা।
এদিকে ১৩ আগস্ট কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে চিকিৎসক মৃত্যুর তদন্ত কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে সিবিআইয়ের হাতে স্থানান্তর করা হয়েছে। গত বুধবার সিবিআইয়ের একটি দল হাসপাতাল পরিদর্শন করার পর তদন্ত শুরু করে। এ ঘটনায় পাঁচ চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। এ ছাড়া আরজিকর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাঙচুরের ঘটনায় ২৪ জনকে আটক করেছে কলকাতা পুলিশ।
আমাদের কলকাতা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কলকাতার আরজিকর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় অভিযুক্তের ফাঁসির দাবিতে বাধ্য হয়ে গতকাল পথে নামেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বিকালে কলকাতার মৌলালি থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত একটি পদযাত্রায় শামিল হন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র, রচনা ব্যানার্জি, সায়নী ঘোষ, জুন মালিয়া, শতাব্দী রায়, দোলা সেন, বিধায়ক অদিতি মুন্সি প্রমুখ। পরে সংক্ষিপ্ত ভাষণ থেকে মমতা বলেন, ‘শনিবার সব ব্লকে ব্লকে দোষীদের ফাঁসির দাবিতে এবং রাম-বাম-এর চক্রান্তের বিরুদ্ধে মিছিল করা হবে। আমরা চাই সত্য উদঘাটিত হোক। কিন্তু অসত্য ঘটনা নিয়ে কেউ কেউ ভুয়া ভিডিও তৈরি করে অসত্য সংবাদ দিয়ে মানুষের মনকে উত্তেজিত করে দিচ্ছে। সত্যটাকে লুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার সব খবর সত্যি নয়। কেউ কেউ পয়সা কামানোর জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তৈরি করেছে- ওগুলো পলিটিক্যাল পার্টি স্পনসর্ড।
এ সময় বাংলাদেশের ঘটনা উত্থাপন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিজেপি কী ভাবছে। বাংলাদেশে একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে, এত ছাত্র মারা গেল। বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলতে পারি না আমি, বলিও না, এটা সে দেশের ব্যাপার, সে দেশ দেখবে। কিন্তু আমরা শুধু ভদ্রতা করব আর আপনারা ভাববেন আমরা দুর্বল হয়ে গেছি, এটা নয়।’
মমতা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমার জন্ম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, মৃত্যুও হবে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। কারও ক্ষমতা থাকলে আমায় গায়ে শুধু টাচ করে দেখেন, কী ঘটে।’