দেশে ধান-চালের সংকট না থাকলেও বাড়ছে চালের দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বন্যায় দীর্ঘ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সড়ক ও রেলপথ বন্ধ থাকে। গুরুত্বপূর্ণ এ পথে পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় চালের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। ক্রেতারা বলছেন, ত্রাণ বিতরণে পণ্যটির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। চালের পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট দেখাচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বন্যার অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে খোলাবাজারে বিক্রি বাড়াতে হবে। চালের সরকারি-বেসরকারি পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। বাজার তদারকি করলে চালের দাম কমে আসবে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়েছে। তাই চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা দেখি না। এখন বন্যার অজুহাতে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এই চাল অনেক আগেই উৎপাদন হয়েছে। তবে এখনো চাঁদাবাজি বন্ধ হয় নাই। চাঁদাবাজির হাতবদল হয়েছে। অনেক জায়গায় চাঁদাবাজির কথা শুনতেছি। আমি মনে করি দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে। সরকারকে অনুরোধ করব কারা এর পেছনে জড়িত আছে- তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। এ ছাড়া খোলাবাজারে চাল বিক্রি বাড়াতে হবে বলে জানান তিনি।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সরু চাল নাজির/মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৬৪ থেকে ৮০ টাকা। এক মাস আগেও এসব চালের দাম ছিল ৬০ থেকে ৭৮ টাকা। এতে দেখা যায়, এক মাসে চালের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। চাল মাঝারি পাইজাম/লতা বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এক মাস আগে এসব চাল বিক্রি হয়েছে ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায়। অর্থাৎ এক মাসে চালের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। মোটা চাল স্বর্ণা/ইরি গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়। যা এক মাস আগেও ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ এক মাসে দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ ছাড়া শুধু গত সপ্তাহে মোটা চালের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। কেজি প্রতি ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বিরোই, পাজাম, বালাম চাল পাইকারি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৭ থেকে ৭২ টাকা। আর মাঝারি চাল ব্রি২৮ এবং ব্রি২৯ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। চালের দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে বাবুবাজার চাল বিক্রেতা মেসার্স ভুইয়া রাইস এজেন্সির মালিক মো. বরকত উল্লাহ সোহেল বলেন, বন্যায় চালের সরবরাহ কমেছে। তাছাড়া ত্রাণ হিসেবে অনেকে চাল কিনতে আসছেন। ফলে চাল বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেড়েছে। সরবরাহের তুলনায় বিক্রি বাড়ায় মিলাররা দাম বাড়িয়েছে। তাই মোটা চাল কেজিতে ৪-৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।