মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নানাভাবে চলছে বর্বরতা। হামলা, নির্যাতন আর বর্বরতার মুখে ফের হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে নতুন করে বহু রোহিঙ্গা ঢুকেও পড়েছে। তাদের কয়েকজনের ভাষ্য নিয়ে গতকাল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডয়েচে ভেলে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘাতের কারণে নির্যাতনের মুখে আবারও বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা। তাদের লক্ষ্য করে কীভাবে হামলা চালানো হচ্ছে- তা জানিয়েছেন পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা। তাদের একজন সাঈদ। তিনি গত মাসে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করতে তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নিরাপত্তার স্বার্থে ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন তিনি। সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করতে যাওয়ায় বিদ্রোহীরা তাদের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে। ফলে আবারও হাজার হাজার রোহিঙ্গা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশে পালিয়ে এসে সাঈদ জানান, সেখানকার মানুষদের (রোহিঙ্গা) ওপর নির্যাতন চলছে। তিনি বলেন, ‘আমি নিজের চোখে এসব দেখে এসেছি। অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন অনেকে। সবাই এখন নিজের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত।’ তার ভাষ্য অনুযায়ী, গত জুন মাসে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে সক্রিয় একটি সশস্ত্রগোষ্ঠী সাঈদকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ধরে নিয়ে যায়। স্বাধীনতার দাবিতে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে আরাকান আর্মি। সাঈদসহ যুদ্ধে যোগ দেওয়া অন্য রোহিঙ্গার কাজ ছিল জিনিসপত্র আনা-নেওয়া করা, বাংকার খনন, সেনাবাহিনীর জন্য পানি সরবরাহ করা ইত্যাদি। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের কোনো প্রশিক্ষণ দেয়নি। সেনারা পুলিশ স্টেশনের ভিতরে অবস্থান করে। বাইরে বের হয় না।’ তিনি জানান, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির থেকে দুই হাজার রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, জান্তার পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিলে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে। একপর্যায়ে সেখানকার একটি মুসলিমপ্রধান গ্রামের পাহারার দায়িত্ব দেওয়া হয় সাঈদকে। সেখান থেকেই পালিয়ে আসেন তিনি।
চলতি মাসের শুরুর দিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন ২২ বছরের মোহাম্মদ জোহর। তার বোনের স্বামীকে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছিলেন তিনি। এ সময় হামলায় নিহত হন বোনের স্বামী। জোহরের দাবি, আরাকান আর্মির ড্রোন হামলা হয়েছে। তিনি সবখানে মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন। নদীর পাড়েও মৃতদেহ পড়েছিল। জোহার আরও বলেন, ‘সেখানে আরাকান আর্মি খুব শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। মিয়ানমারের সেনারা তাদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। তারা একে অপরের ওপর বোমা হামলা করছে। তাতে মারা যাচ্ছেন মুসলিমরা।’ এরকমভাবেই নিজের মেয়েকে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা বিবি ফাইজাও মৃত্যু আর বর্বরতার বিবরণ দেন। প্রসঙ্গ, বাংলাদেশ সরকারের ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্যানুযায়ী, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তীব্র সংঘাত শুরু হলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রায় ১৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মি- উভয়ই সংঘাতের সময়ে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাইড রাইটস জানিয়েছে, বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি ড্রোন ও মর্টার হামলা চালিয়ে সীমান্তে ১০০ রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষকে হত্যা করেছে। শুধু তাই নয়, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা রোহিঙ্গারাও আরাকান আর্মিকে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করছে। তবে আরাকান আর্মি সাধারণ রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে এমন হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।