দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং সংকট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত-আহতদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া, হত্যাকারীদের বিচার, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমন্ডল মিলনায়তনে আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস : পর্যালোচনা, প্রস্তাব ও মতবিনিময়’ সভায় এসব প্রস্তাব জানান তারা। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি এ সভার আয়োজন করে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় সভায় সভাপ্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বক্তব্য রাখেন গবেষক মাহা মির্জা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা, সুফি দার্শনিক কাজী জাবের আহমেদ, চলচ্চিত্রকর্মী আকরাম খান প্রমুখ।
সংগঠনটির পক্ষে ১৩ দফা প্রস্তাব পেশ করেন গবেষক মাহা মির্জা।
এসব দাবির মধ্যে আরও রয়েছে, সংবিধান কমিশনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা প্রকাশ করা এবং জনমতের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করা। অবিলম্বে ‘মব ভায়োলেন্স’ বা দলগত সহিংসতা, খুন, ভাঙচুর, ত্রাসসৃষ্টি; মন্দির, মাজার, মসজিদ, কবরস্থান, শিল্পকর্ম, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এবং বাড়িঘরে হামলা রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জড়িতদের বিচার করা। সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, ’৭৪-এর বিশেষ ক্ষমতা আইন ও শ্রমিক পরিষেবা বিলসহ মতপ্রকাশের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী নিবর্তনমূলক সব আইন বাতিল। খাদ্যদ্রব্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
শিল্পশ্রমিকদের ন্যূনতম জাতীয় মজুরি ঘোষণা, শ্রমিক হত্যার বিচার করা এবং শ্রমিকদের বকেয়া মজুরিসহ সব ন্যায্য দাবি পূরণে মালিকদের বাধ্য করা। প্রকৃতি ও কৃষকবান্ধব কৃষিব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কমিশন গঠন। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল চুক্তি নবায়ন না করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নয়, সন্ত্রাসী দখলদারি তৎপরতা বন্ধ করা। ছাত্র সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা। স্বাস্থ্যরক্ষা ও চিকিৎসাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং পাবলিক হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ শুরু করা। পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে সেনাশাসন প্রত্যাহারের রোডম্যাপ ঘোষণা। উত্তরাধিকার সূত্রে জমি-সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার নিশ্চিত করা। মানব পাচার ও প্রবাসে বাংলাদেশি নারী পুরুষের নিপীড়ন প্রতিরোধে বিশেষায়িত সেল গঠন করা। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ইইউ, ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সব চুক্তি প্রকাশ এবং জনস্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো বাতিলের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ।
সভায় আনু মোহাম্মদ বলেন, সরকারের এত সোর্স থাকার পরও আহত ও নিহতদের তালিকা বের করতে এত সময় কেন লাগছে? নিহতদের পরিবারকে কেবল ১ লাখ টাকা ধরিয়ে না দিয়ে তাদের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, সরকার পতনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু ও ভিন্ন মতাদর্শের ওপর যে হামলা হচ্ছে- সেটা দমন করার বিষয়ে সরকারের কণ্ঠে জোর নেই।
এই যে সময়গুলো চলে যাচ্ছে এটা দেশের জন্য বিপজ্জনক। এর ফলে সুবিধা হচ্ছে স্বৈরশাসকদের, ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের। অনতিবিলম্বে এসব বন্ধে সরকারকে জোড়ালো পদক্ষেপ নিতে হবে। সভায় অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, জুলাই আগস্ট গণ অভ্যুত্থানে আহতও নিহতদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আহতদের সুষ্ঠু চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে না বলে আমরা প্রতিনিয়ত খবর পাচ্ছি।