যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্সের’ করা ২০২৪ সালের সংস্করণে বিশ্বের সপ্তম দুর্বল পাসপোর্টের তকমা পেয়েছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট। গতকাল বিশ্বের ১৯৯টি দেশের পাসপোর্ট সূচক প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ এ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ এ সূচকে শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকায় বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে ৯৭তম স্থানে রয়েছে ফিলিস্তিন। হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্সের চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত সংস্করণেও বাংলাদেশের পাসপোর্ট বৈশ্বিক সূচকে একই অবস্থানে অর্থাৎ ৯৭তম ছিল। এ ছাড়া গত বছরের ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০১তম। কোন দেশের পাসপোর্ট দিয়ে কত দেশে ভিসা ছাড়া বা অন অ্যারাইভাল ভিসায় প্রবেশ করা যায়, ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (আইএটিএ) তথ্যের ভিত্তিতে শক্তিশালী পাসপোর্টের এ সূচক তৈরি করে দ্যা হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্স। বিশ্বের ১৯৯ দেশের সূচকে কিছু কিছু দেশ যৌথ অবস্থান পাওয়ায় এ বছর হেনলি মোট ১০৩টি অবস্থান নির্ধারণ করেছে।
বিশ্বের কোন দেশের পাসপোর্ট কতটা শক্তিশালী তা নিয়ে প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটি র?্যাঙ্কিং প্রকাশ করে আসছে। গত ১৯ বছর প্রতি তিন মাস অন্তর এ সূচক প্রকাশ করা হয়। ২০২৪ সালের সূচকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখন্ডের সঙ্গে যৌথভাবে ৯৭তম অবস্থানে রয়েছে। চলতি বছরের সংস্করণ অনুযায়ী, বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে বিশ্বের ২২৭টি গন্তব্যের মধ্যে বর্তমানে ৪০টিতে ভিসা ছাড়া কিংবা অন অ্যারাইভাল ভিসায় ভ্রমণ করা যায়।
বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে আগাম ভিসা ছাড়া ইউরোপের কোনো দেশে ভ্রমণ করা সম্ভব নয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে মালদ্বীপের পাসপোর্ট (৫২তম)। মালদ্বীপের পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই বিশ্বের ৯৪টি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। এরপরই আছে ভারত (৮২তম), ভুটান (৮৭তম) এবং শ্রীলঙ্কা (৯৩তম)। গত সূচকে শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৯৬তম থাকলেও চলতি সূচকে দেশটির পাসপোর্টের অবস্থানের উন্নতি হয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেপালের (৯৮তম), পাকিস্তানের (১০০তম) এবং আফগানিস্তানের (১০৩তম) তুলনায় শক্তিশালী অবস্থানে আছে।
হ্যানলির এই সূচকে চলতি বছর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট নির্বাচিত হয়েছে সিঙ্গাপুর। দেশটির পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই কিংবা অন অ্যারাইভাল ভিসায় বিশ্বের ১৯৫টি গন্তব্যে ভ্রমণ করতে পারেন। এরপরই যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান এবং স্পেন। এসব দেশের নাগরিকরা ভিসা ছাড়া কিংবা অন অ্যারাইভাল ভিসায় বিশ্বের ১৯২টি গন্তব্যে ভ্রমণ করতে পারেন। হেনলি পাসপোর্ট সূচকে যৌথভাবে তৃতীয় স্থানে আছে রেকর্ড সাতটি দেশ অস্ট্রিয়া, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ কোরিয়া ও সুইডেন। এসব দেশের পাসপোর্টধারীরা ১৯১টি গন্তব্যে ভিসা ছাড়া কিংবা অন অ্যারাইভাল ভিসায় প্রবেশ করতে পারেন। এ ছাড়া চতুর্থ স্থানে যৌথভাবে থাকা বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা ১৯০টি দেশে ভিসা ছাড়া বা অন অ্যারাইভাল ভিসায় প্রবেশ করতে পারেন। সূচকে পঞ্চম স্থানে রয়েছে যৌথভাবে অস্ট্রেলিয়া এবং পর্তুগাল। এ দুই দেশের নাগরিকরা বিশ্বের ১৮৯টি দেশে ভিসা ছাড়া বা অন অ্যারাইভাল ভিসায় ভ্রমণ করতে পারেন। আর যৌথভাবে ষষ্ঠ স্থানে থাকা গ্রিস ও পোল্যান্ডের পাসপোর্টধারীরা ১৮৮টি গন্তব্যে ভিসা ছাড়া বা অন অ্যারাইভাল ভিসায় যেতে পারেন।
হ্যানলির এ পাসপোর্ট সূচকে একেবারে তলানিতে রয়েছে আফগানিস্তান (১০৩তম)। যুদ্ধবিধ্বস্ত এ দেশটির পাসপোর্টধারীরা মাত্র ২৬টি দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের ১০ দেশ হচ্ছে- ১. সিঙ্গাপুর ২. ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান ও স্পেন ৩. অস্ট্রিয়া, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ কোরিয়া ও সুইডেন ৪. বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য, ৫. অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল ৬. গ্রিস ও পোল্যান্ড ৭. কানাডা, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি ও মাল্টা ৮. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৯. এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত, ১০. আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, স্লোভাকিয়া ও স্লোভেনিয়া। অপরদিকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল ১০ দেশের পাসপোর্ট হচ্ছে- ১. আফগানিস্তান (১০৩তম) ২. সিরিয়া ৩. ইরাক ৪. পাকিস্তান ও ইয়েমেন ৫. সোমালিয়া ৬. লিবিয়া ও নেপাল ৭. বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনি ভূখন্ড ৮. উত্তর কোরিয়া ৯. ইরিত্রিয়া ১০. ইরান ও সুদান।