২১ বছর আগের কথা। বাংলাদেশ সে সময় ক্রিকেট দুনিয়ায় নতুন সদস্য। টেস্টে একেবারেই আনকোরা। ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে এই নতুন বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় ইনজামাম-উল হকদের পাকিস্তানের। মুলতানের সেই লড়াইয়ে শুধু পাকিস্তানকেই নয়, বিশ্বকেই চমকে দিয়েছিল টাইগাররা। ম্যাচে পাকিস্তান এক উইকেটে জয় পায়। তবে এক ইনজামাম দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়াতে রক্ষা পেয়েছিল তারা। মুলতানের সেই অধরা জয়টা দীর্ঘদিন বাংলাদেশের মানুষকে আঘাত করেছে। মাঝে মধ্যেই সেই ক্ষতটা তাজা হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা হলেই মুলতানের কথা উঠত। মুলতানে খেলা সেই বাংলাদেশ দলের কেউ নেই বর্তমান দলে। পাকিস্তান দলেরও এখন আর কেউ নেই। তাই বলে মুলতানের সেই ক্ষতটা সাকিব-মুশফিকদের হৃদয়ে কম ছিল না। ২১ বছর পর সেই ক্ষতটা শুকিয়ে দিলেন তারা। মুলতানের ক্ষত শুকিয়ে গেল রাওয়ালপিন্ডিতে।
পাকিস্তানের মাটিতে জয় হাতছাড়া হওয়ার পর বিদেশে জয় পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরও ছয় বছর। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে প্রথমবার ভিন দেশে টেস্ট ম্যাচ জয় করে টাইগাররা। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কিংসস্টোনে ৯৫ রানে পরাজিত করে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে তামিম ইকবালের ১২৮ রানের ইনিংসটা এখনো নিশ্চয়ই মনে আছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তামিম। এরপর সেই সফরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরের ম্যাচে ৪ উইকেটে পরাজিত করেন সাকিব আল হাসানরা। দ্বিতীয় ম্যাচে দুরন্ত বোলিং করে ম্যাচসেরা হন সাকিব (প্রথম ইনিংসে ৩/৫৯ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৭০)। এরপর চার বছর পর ভিন দেশে আবারও টেস্ট জেতে বাংলাদেশ। এবার হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৪৩ রানে জয় পান টাইগাররা। ২০১৭ সালে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ২০২১ সালে ফের হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ জয় করে টাইগাররা। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দারুণ এক জয় পায় বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। বে ওভালে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে শরিফুল-এবাদতদের বোলিংয়ের সামনে নুয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জয় করে ৮ উইকেটে। নিউজিল্যান্ডের মাটিও টেস্টে জয় করা হয়ে যায় বাংলাদেশের। এরপর থেকেই বিদেশের মাটিতে টেস্টে জয় খরায় ভুগছিল বাংলাদেশ। অবশেষে সেই জয়ের দেখা পেল পাকিস্তানের মাটিতে।
কী দুরন্ত এক জয়! পাকিস্তানের মতো সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলাই খেললেন সাকিব আল হাসানরা! নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪৪৮ রান করেই ইনিংস ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। তাদের বিশ্বাস ছিল, এ রানেই বাংলাদেশকে ফলোঅন করিয়ে নিবে! মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত এক ইনিংসে (১৯১) বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে লিড নেয় ১১৭ রানের। পাকিস্তানি অধিনায়ক শান মাসুদ নিশ্চয়ই তখন আঙুল কামড়াচ্ছিলেন! নিজের সিদ্ধান্তটা নিজেই হয়তো মানতে পারছিলেন না! পাকিস্তান বাংলাদেশকে চতুর্থ ইনিংসে টার্গেট দেয় ৩০ রানের। মাত্র ৬.৩ ওভার খেলে ১০ উইকেটের জয় তুলে নেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ক্রিকেটাররা দারুণ একটা ম্যাচ জয় করে ইতিহাস গড়লেও প্রাণ খুলে উচ্ছ্বাস করতে পারলেন না। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কারণে সুদূর পাকিস্তানে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তারা। তবে এই জয়, বাংলাদেশের মানুষকে হয়তো আরও একটু সাহস জোগাবে। আরও একবার মাথা তুলে দাঁড়াবার আত্মবিশ্বাস এনে দিবে!