২৫ মার্চ, ২০২৩ ১৩:০১

রমজানে লেবুর চাহিদার সাথে বেড়েছে চারা বিক্রিও

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

রমজানে লেবুর চাহিদার সাথে বেড়েছে চারা বিক্রিও

রমজানের শুরুতেই ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে লেবুর। তাই লাভের আশায় অপরিপক্ক লেবুও বাজারে দেখা যাচ্ছে। এখন দিনাজপুরে প্রতি পিস লেবু বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা দরে। যদিও লেবু চাষীরা পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন প্রতি পিস ৪-৫ টাকা দরে। অন্যদিকে বিক্রি বেড়েছে লেবু চারা গাছের। তবে মধ্যস্বত্বভোগীরাই বেশী লাভবান হচ্ছে লেবু বিক্রিতে।

বাজারে চাহিদা ভাল, ফলনও ভাল এবং বারোমাস ফলন দেয় এরকম সীডলেস ও এলাচি জাতের লেবু চাষীদের পোয়াবারো। এখন দাম ভাল পেলেও বেশি ফলনের সময় দাম কমে আসে এবং প্রতি পিস মাত্র ১ টাকায় বিক্রি করতে হয় এবং এর নিচেও নেমে যায় দাম। এসময় এসব লেবু বিদেশে রফতানি কিংবা এর ব্যবহার বাড়াতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন লেবু চাষীরা। 

অল্প সময়ে স্বল্প খরচে অধিক লাভবান এবং স্বাবলম্বী হওয়া যায় সীডলেস ও এলাচি জাতীয় লেবু চাষে। এই লেবু চাষে সহজেই বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। লোকসানের কোনও সুযোগ নেই। বছরের সব সময়েই কম-বেশি লাভ হবেই লেবু চাষে। বাণিজ্যিকভাবে এই লেবু চাষে অনেকে নিজের ভাগ্য বদলিয়ে ফেলেছেন। সহজ প্রক্রিয়ার এই বারোমাসি লেবু চাষ করলেই লাখোপতি! এরকমই একজন লেবু চাষী দিনাজপুর সদরের চকরামপুর বাজার এলাকার গৌতম দাস। তিনি এখন পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে সবার কাছে উদাহরণ হয়ে দাড়িয়েছেন। তিনি চাকরি করার পাশাপাশি এই লেবুর বাগান গড়ে তুলেছেন। তার বাগানে এখন ভাইসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও সময় দেয়। লেবু চাষের পাশাপাশি তিনি এখন লেবুর কলম চারাও বিক্রি করেন। তার সফলতার খবরে প্রতিদিনই অনেকে চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

লিচু কিংবা আম বাগান, ধানের ক্ষেতের চারপাশে বেড়া দেওয়ার জন্য এই সীডলেস ও এলাচি জাতের বারোমাসি লেবু চাষ করলে অনায়সে তুলনামুলক কম খরচে অধিক লাভবান হতে পারবে যে কেউ। কেউ ২৪ শতক জমিতে শুধু এই লেবু চাষ করলেই কমপক্ষে খরচ বাদেই বছরে ১ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন। এই চাষে ঝামেলা কম। খরচ নেই বললেই চলে। অধিক ফলনের জন্য বছরে ৩ বার সার প্রয়োগ করলেই হবে। একবার করলেও চলবে। আর পাতা মুড়ানিসহ রোগ নিরাময়ে মাসে পারলে একবার স্প্রে করলেই হবে। এরপর বছরের সব সময় লেবু বিক্রি করে আয় করা যাবে- এমনটাই বললেন গৌতম দাস।

তিনি বলেন, ছয় বছর আগে আমাদের লিচু বাগানের চারপাশে বেড়া দেওয়ার জন্য ২০টি সীডলেস ও এলাচি জাতের বারোমাসি লেবুর চারা লাগাই। পরে আরও ১২০টি চারা আনি। চারাগুলো আমাদের ৭২ শতক লিচুর বাগানের চারপাশে বেড়া দেওয়ার মতো করে রোপন করি। এরপর বছরে কমপক্ষে ২ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করছি। বর্তমানে লেবু পাইকারি প্রতিটি ৫ টাকা থেকে ৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই লেবু চাষে লোকসান নেই বরং সারা বছর লাভবান হওয়া যায়। লেবু ছাড়াও চাহিদা বাড়ায় চারাও বিক্রি শুরু করেছি। বর্তমানে গুটি কলম চারা প্রতিটি ৫০ টাকা এবং লেবুসহ চারা গাছ প্রতিটি ৭০ টাকায় বিক্রি করছি।

তিনি আরও বলেন, আমার লেবু বাগানে এখন সাড়ে ৫শ গাছ রয়েছে। লেবু বারোমাস ফলন পাওয়া গেলেও এখন ফলন একটু কম হয়। তাই বর্তমানে লেবুর দাম বেশি। কিন্তু আর কিছুদিন পর এই লেবু ১ টাকা প্রতিটি বিক্রি করতে হয়। তাই সরকার যদি এই লেবু বিদেশে রফতানির সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় তাহলে আমার মতো অনেক কৃষক আরও লাভবান হতে পারবে। আবার বেকারত্ব দূরীকরণে এই চাষে ঝুঁকবে যুবকরাও। 

দিনাজপুর সদরের কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সেলিম জানান, বারোমাসি সীডলেস ও এলাচি জাতের লেবু চাষ করলে যে কেউ লাভবান হবেন। কারণ এই লেবু চাষে সমস্যা কম। খরচ কম, লাভ বেশি। এই লেবু চাষকে লাভজনক করতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়। 

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর