প্রকৃতির যেখানে-সেখানে নদী-নালা, পুকুর-ডোবাসহ বিভিন্ন জলাশয়ে সবুজ পাতার মাঝে মাঝে সাদা, বেগুনি ও হালকা গোলাপি রঙের কচুরিপানা ফুল। এখন নদী-নালা, পুকুর-ডোবাসহ বিভিন্ন জলাশয় যেন ফুলের চাদরে ঢাকা পড়েছে। মুক্ত জলাশয়ে এসব দৃষ্টিনন্দন ফুলের সৌন্দর্য সকল পথচারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছে কিংবা কাছে টানছে। মুগ্ধ হচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমিরা।
দিনাজপুরের গর্ভেশ্বরী, ইছামতি, ছোট যমুনা, তিলাই, নদীসহ বিভিন্ন পুকুর, ডোবা, নালায়, সড়কের পাশে মুক্ত জলাশয়ে ভাসছে কচুরিপানার ফুল। পাশ দিয়ে যেতে কচুরিপানার ফুল পথচারী-প্রকৃতিপ্রেমিদের কাছে টানছে এবং অনেকে এই সৌন্দর্যকে ক্যামেরা বন্দী করছেন। কচুরিপানা ফুলের গন্ধ না থাকলেও এর সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে।
চিরিরবন্দরের ইছামতি নদীর পাশ দিয়ে যাওয়া শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, ইছামতি নদীর অল্প পানিতে সাদা, বেগুনি ও হালকা গোলাপি রঙের অজস্র ফুল ফুটে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। যে কেউ পাশ দিয়ে গেলে চোখ এড়াতে পারবেন না। ভালো লাগবে। অনেকে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এসব ফুলের সৌন্দর্য দেখাতে আনে। অনেকে আবার সেলফি তুলছে আবার অনেকে ভিডিও ধারন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৌন্দয্য তুলে ধরছেন।
ফুলবাড়ীর শিবনগর ইউপির ত্রিমোহনী স্লুইসগেটে এই ফুলের শুভ্রতা দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় করে। কয়েক দিনের টানা বর্ষণে বিভিন্ন জলাশয়ের আটকে থাকা কচুরিপানা স্রোতের টানে নদীতে এসেছে। এখানে ছোট যমুনা ও তিলাই নদীর সংযোগ স্থলে স্রোতের সঙ্গে সঙ্গে কচুরিপানারও মিলনমেলা উপভোগ করছেন।
দিনাজপুর সরকারী কলেজের সহযোগি অধ্যাপক ও উদ্ভিদ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান দেলোয়ার হোসেন জানান, কচুরিপানা মুক্তভাবে ভাসমান একধরনের বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। দক্ষিণ আমেরিকায় এর আদী নিবাস। এটি বাংলাদেশের সবার কাছে কচুরিপানা, পানা, দল ইত্যাদি নামে পরিচিত। বর্ষাকালে বেশি জন্মায় ও দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাওর, পুকুর-জলাশয় ভরে যায়। এটি অবাধ ভাসমান গুল্ম ও নিচে থাকে এক থোকা লম্বা গুচ্ছমূল, ওপরে খর্বিত কাণ্ডে কিছুটা চওড়া পাতা। বাংলাদেশে কচুরিপানা একটি আগাছা হলেও এই উদ্ভিদটি মানুষ ও প্রকৃতির নানা উপকারে আসে। এটি দেশীয় মাছের বংশবিস্তার ও জলাশয়ের পানি ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে থাকে। কিছু কিছু মাছ এটিকে খাদ্য হিসেবেও গ্রহণ করে। এ থেকে তৈরি জৈব সার কৃষিকাজে রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পানির ওপর কচুরিপানার স্তূপ করে এর ওপর সবজিও চাষ করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল