বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

নিউ মিডিয়া : গণমাধ্যমের নতুন ধারা

বাংলাদেশ প্রতিদিন ডেস্ক

নিউ মিডিয়া : গণমাধ্যমের নতুন ধারা

নিউ মিডিয়া হলো নয়া গণমাধ্যম। বিংশ শতাব্দীর শেষে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির পারস্পরিক ক্রিয়ায় উপস্থাপনার নতুন মাধ্যম হলো- নিউ মিডিয়া বা ডিজিটাল মিডিয়া। মূলধারার গণমাধ্যম হলো- সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বেতার। একই সঙ্গে রয়েছে হালের অনলাইনগুলো। এগুলো ছাড়াও অন্য যে মাধ্যমগুলো থেকে তথ্য মিলছে বা যে মাধ্যমগুলো আমরা তথ্য আদান-প্রদানে ব্যবহার করছি, সেগুলোই হলো নিউ মিডিয়া। একে বিকল্প গণমাধ্যমও বলা হয়। নিউ মিডিয়া বা ডিজিটাল মিডিয়া ইন্টারনেট-নির্ভর। এ কারণেই নিউ মিডিয়া বলতে প্রথমেই বিবেচনায় আনা হয় এর ইন্টারনেট সংযুক্তির বিষয়টি।

২০০৪ সালে ফেসবুক ও ২০০৬ সালে টুইটার যাত্রা শুরু করে। সঙ্গে রয়েছে ইন্সটাগ্রাম, লিংকডইন, ইউটিউব আর লাখ লাখ ব্লগ। বর্তমান সমাজ যে পথে ধাবিত, মিডিয়া তার উল্টো পথে চলতে পারে না। যুগের পরিবর্তন বদলে দিয়েছে মিডিয়ার চালচিত্র। প্রিন্ট থেকে টেলিভিশন, সেখান থেকে আজকের ওয়েব মাধ্যম। প্রযুক্তির কল্যাণে দুনিয়া এখন হাতের মুঠোয়। মুক্ত অর্থনীতি, পণ্য সংস্কৃতি এবং দেশ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি মিডিয়াকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করবে, সেটাও তো স্বাভাবিক। সেই প্রভাবের তালে তালেই সখ্য গড়ে উঠল অন্ধকার দুনিয়ার সঙ্গেও। মোট কথা, একদা যে আদর্শের ভিত্তিতে মানব সমাজে সংবাদমাধ্যম জন্ম নিয়েছিল, তার সংস্করণ, নতুন রূপ বা বিকল্প রূপ হলো আজকের নিউ মিডিয়া। সহজভাবে বললে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অনলাইনভিত্তিক যোগাযোগ পরিসরই নিউ মিডিয়া।

নিউ মিডিয়ায় যে কেউ সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ মানুষ যা দেখছে, যেভাবে দেখছে সেটাই তুলে ধরছে নিউ মিডিয়ায়। শুধু তাই নয়, নিউ মিডিয়া দ্রুততার সঙ্গে তথ্যই দিচ্ছে না, সমাজের নানা স্তর থেকে নিয়ে আসছে বহুমুখী বিশ্লেষণ। যা সাংবাদিকতার বিবর্তনে নতুন মাইলফলক তৈরি করেছে। আগে বিভিন্ন বিষয়ে মানুষ গণমাধ্যমের ওপর নির্ভর করত। কিন্তু এখন চিত্র ভিন্ন। নিউ মিডিয়ার কারণে মানুষ ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের সেই স্বাধীনতা ভোগ করার সুযোগ পাচ্ছে। মূলধারার গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আসছে এই নিউ মিডিয়ার কারণে। সময়ের দাবি পূরণে বাধ্য হচ্ছে তারা। টিভি চ্যানেলগুলোর বিভিন্ন টকশো ও অনুষ্ঠানে দর্শককে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হচ্ছে। ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবে তাদের আধেয় প্রকাশ করতে হচ্ছে। আসতে হচ্ছে অনলাইন সংস্করণে। নাগরিক সাংবাদিকতাকে সাদরে গ্রহণ করতে হচ্ছে। এ ধরনের সাংবাদিকতার সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। নিউ মিডিয়ার সম্ভাবনা বিশাল। এর কার্যকারিতা ও ক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে।

বিশ্বের সব দেশেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নাগরিক সাংবাদিকতা। আন্তর্জাতিকভাবে নাগরিক সাংবাদিকতার মঞ্চ তৈরির জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে ওপেন গ্লোব, দ্য থার্ড রিপোর্ট, নিমবাস, অলভয়েস নামের ওয়েবসাইটগুলো। নিউ মিডিয়ায় মানুষের অংশীদারিত্ব অনেক বেশি, সে অর্থে তা বেশি গণতান্ত্রিক। কেবল নগর বা শহরে নয়, নিউ মিডিয়ার সুফল পৌঁছে গেছে অজপাড়াগাঁয়েও। ফলে রাজনৈতিক আলোচনা এখন কেবল ক্লাব কিংবা চায়ের দোকানে নয়, হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। সাধারণ একজন নাগরিকের জন্য নিউ মিডিয়া নিয়ে এসেছে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ। সহজেই যে কেউ দিতে পারছে তার রাজনৈতিক বক্তব্য বা মতামত। রাজনৈতিক যোগাযোগ ও সমমনাদের মেলবন্ধনও তৈরি হচ্ছে নিউ মিডিয়ার মাধ্যমে। এটি হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষের মতপ্রকাশের জায়গা। যেখানে জমে উঠছে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির আলোচনা, সংগঠনের সঙ্গে সংগঠনের আলাপ। জড়ো হচ্ছে একটা ছাতার নিচে। স্পষ্ট হচ্ছে দলের সঙ্গে দলের মতবিভেদ।

সহজ ও কার্যকর যোগাযোগের সুযোগ থাকায় অনন্য হয়ে উঠেছে নিউ মিডিয়া। ব্যাপ্তির বিশালতার কারণে মূলধারার গণমাধ্যমকেও এখন নিউ মিডিয়ায় জায়গা খুঁজে নিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে দিন দিন নিউ মিডিয়া আরও বেশি করে গণমানুষের যোগাযোগমাধ্যম হয়ে উঠছে।

সাংবাদিকতা নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। সামনের সময় মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজমের। মোবাইল ব্যবহার করেই সংবাদের সব কাজ হবে। বর্তমানের সাংবাদিকতা গতানুগতিক ধারার মধ্যে প্রশিক্ষিত হয়ে আসে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রত্যেকে সাংবাদিক হয়ে যাচ্ছে এবং নিজেদের সাংবাদিক দাবিও করছে।

তবে মূলধারা সেটাকে চ্যালেঞ্জ করছে এই জায়গা থেকে যে, সোশ্যাল মিডিয়ার সংবাদ সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ হচ্ছে না। নিউ মিডিয়া আর যাই হোক তাকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দিতে তার যথাযথ নিয়মাচার, রীতিনীতি, পদ্ধতি ও মানের আলোকে তার গ্রহণযোগ্যতার ও বৈধতার দিকটার প্রতি আমাদের যত্নবান হওয়া আজ সময়ের দাবি। যত দিন যাচ্ছে ততই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে নিউ মিডিয়া। অংশগ্রহণও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। একসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডার্ক ওয়েবের তৎপরতা, হ্যাকারদের অপতৎপরতা। সুতরাং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের সচেতন হওয়া উচিত। মানবতা, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার রক্ষায় নিউ মিডিয়া ভূমিকা রাখবে সেটাই কাম্য।

গতিময় বিশ্বকে ভবিষ্যতে নিউ মিডিয়া আরও বদলে দেবে। এই জগতে বিচরণ করতে, এই আকাশে ভাবনার পাখা মেলতে আমাদের যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে। আলোটুকু গ্রহণ করতে হবে, অন্ধকারকে দূরে সরিয়ে। আর তাতেই প্রকৃত মুক্তি নিহিত।  তাই সব দ্বিধা বা সংশয়ের ঊর্ধ্বে উঠে নতুনকে বরণ করে নতুন মিডিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।  বোধকরি সেটাতেই সবার মঙ্গল, গোটা বিশ্বের মঙ্গল।

সর্বশেষ খবর