রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিশ্বের যত নিউ মিডিয়া

প্রতিদিন ডেস্ক

বিশ্বের যত নিউ মিডিয়া

যেভাবে পেল জনপ্রিয়তা

 

সংবাদপত্রের আর্টিকেল ও ব্লগ থেকে শুরু করে সংগীত, পডকাস্ট যেগুলো ডিজিটালি প্রচার করা হয় তা-ই নিউ মিডিয়া। ওয়েবপোর্টাল, ইমেল, মোবাইল ফোন, স্ট্রিমিং অ্যাপ এবং  যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেকোনো ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট রূপই নিউ মিডিয়া হিসেবে গণ্য...

২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করা ফেসবুক ও ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করা টুইটার সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত নিউ মিডিয়ার উদাহরণ। এর সঙ্গে রয়েছে ইনস্টাগ্রাম, লিংকড ইন, ইউটিউব আর লাখ লাখ ব্লগ। মিডিয়া সমাজের আয়না। যুগের পরিবর্তন একেবারে বদলে দিয়েছে মিডিয়ার ধরন। নয়া মাধ্যমের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি একই সঙ্গে ‘পারসোনাল মিডিয়া’ এবং ‘ম্যাস মিডিয়া’। এই মাধ্যমে কারও ‘গেইট কিপিং’ বা খবরদারি বা সম্পাদনার কাটাছেঁড়া ছাড়াই ঘটনা সরাসরি দেখানো সম্ভব। সেই দৃশ্য কোটি মানুষ সরাসরি দেখতে ও মন্তব্যও করতে পারে। আরব বসন্ত থেকে ওয়াল স্ট্রিট, তাহরির স্কয়ার থেকে গণজাগরণ মঞ্চ এবং দুনিয়া কাঁপানো যৌন নিপীড়ন বিরোধী ‘মি টু’ আন্দোলন, সবখানেই নয়া মাধ্যমের জয়জয়কার।  প্রচলিত মিডিয়াব্যবস্থায় একটা বিশেষ শ্রেণির ঝোঁক থাকলেও নিউ মিডিয়াতে ঝুঁকে পড়েছে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। নিউ মিডিয়ার প্রতি এই আকর্ষণ দিন দিন বাড়ছেই। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নয়া মাধ্যমের জনপ্রিয়তাও।

 

 

সময়ের বিবর্তনে ‘গতানুগতিক’ গণমাধ্যমের ওপর মানুষের নির্ভরতা কমছে। সে জায়গা নিয়ে নিচ্ছে ‘নিউ মিডিয়া’ ও অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো। এজেন্ডা নির্ধারণের জন্য মানুষ এখন আর গণমাধ্যমের ওপর তেমন নির্ভরশীল নয়। ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তারা নিজেরাই এজেন্ডা ঠিক করে নিতে পারছে। নিজেদের মতো প্রকাশ করতে পারছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দুই রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ফেসবুকের মাধ্যমে অনুসারী তৈরি করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে নিজেদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যগুলো প্রচারে তারা যতটা না গণমাধ্যমের সহায়তা নিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি সহায়তা নিয়েছেন নিজস্ব ফেসবুক পেজের।

প্রত্যেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছেই ফেসবুক অতি পরিচিত নাম। ফেসবুক এমন একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেখানে কয়েকশ মিলিয়ন মানুষ তাদের চিন্তাভাবনা শেয়ার করার জন্য সংযুক্ত হয়। ফেসবুক এ সাইন আপ করার পর ইউজার তার প্রোফাইল তৈরি করাসহ ছবি আপলোড, ভিডিও আপলোড এবং চ্যাট করতে পারে। এ ছাড়াও বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপের মাধ্যমেও কমিউনিটি গঠন করার সুযোগ থাকে। আরেকটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হচ্ছে টুইটার। এটি ফেসবুক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে আপনি খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে (২৮০ ক্যারেক্টার) আপনার মতামত জানাতে পারবেন। টুইটার কমিউনিটি গড়ে তোলার উপায় হচ্ছে আপনি কাউকে ফলো করবেন এবং অন্যরা আপনাকে ফলো করবে। টুইটারের একটি বিশেষ ফিচার হচ্ছে হ্যাশট্যাগ। আপনি হ্যাশট্যাগ ইউজ করে নির্দিষ্ট একটা টপিকের ওপর টুইট করতে পারবেন অথবা টুইট খুঁজতে পারবেন।

আগে কোনো একটি নিউজ ছাপা হওয়া বা প্রচার হওয়ার পরে সেটি সম্পর্কে দর্শকদের মূল্যায়ন কেমন তা জানার কোনো উপায় ছিল না। কিংবা জানার উপায় থাকলেও সেটাকে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। পত্রিকায় চিঠিপত্র কলাম ছিল ঠিকই কিন্তু সেখানে খবর সম্পর্কে মানুষের মতামতের চেয়ে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে লেখা হতো বেশি। কিন্তু অনলাইন বা সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এটা আর সম্ভব নয়। একটা নিউজ অনলাইনে আপলোড হলে সেখানে অনেকেই মতামত দিচ্ছেন। কোন নিউজ পাঠক কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, তা বোঝা যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় পাঠকদের প্রতিক্রিয়া দেখে। সাধারণত যেসব সংবাদ মানুষের জীবনের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ এবং যেসব সংবাদে মানুষের জীবনের নানা গল্প প্রতিফলিত হয়, সেগুলোকে পাঠকরা বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন।

হোয়াটসঅ্যাপ : হোয়াটসঅ্যাপ মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থা মেটা মালিকানাধীন বর্তমান সর্বাধিক জনপ্রিয় বার্তা আদান-প্রদানকারী এবং ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল পরিষেবা। হোয়াটস্যাপ ব্যবহারকারীদের টেক্সট, ভয়েস বার্তা প্রেরণ, ভয়েস ও ভিডিও কল করা, ছবি ও নথি প্রেরণ, ব্যবহারকারীর অবস্থান এবং অন্যান্য সামগ্রী শেয়ার করার সুযোগ দেয়। হোয়াটসঅ্যাপের ক্লায়েন্ট অ্যাপ্লিকেশন মোবাইল ডিভাইসে চলে এবং কম্পিউটার থেকেও অ্যাক্সেস করা যায়। এটি ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় বার্তা আদান-প্রদানকারী অ্যাপ্লিকেশন হয়ে ওঠে। এটি অন্যান্য ম্যাসেজিং অ্যাপের তুলনায় অধিক সুবিধা প্রদান করে। এটি ব্যবহারকারীর ফোনে থাকা ফোন নম্বরের তালিকা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নম্বর সংগ্রহ করে নেয়। ফলে আলাদা করে অ্যাকাউন্ট যোগ করার প্রয়োজন হয় না। এ ছাড়া স্মার্টফোনে বিনামূল্যে ব্যবহারযোগ্য মেসেঞ্জারে ব্যক্তিগত হালনাগাদ, এর ব্যবহারকারী যেখান থেকে চ্যাট করছেন সে এলাকা চিহ্নিত করা, গ্রুপ তৈরি এবং গ্রুপের জন্য আলাদা আইকন তৈরি করা যায়।

২০০৯ সালে ইয়াহুর সাবেক কর্মী ব্রায়ান অ্যাক্টন ও জান কউম মিলে হোয়াটসঅ্যাপ তৈরি করে।

ইউটিউব : যদিও ইউটিউবকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয় না কিন্তু এটি আসলে একটি সামাজিক যোগাযোগেরও মাধ্যম। আমরা সবাই এটিকে ভিডিও শেয়ারিং সাইট হিসেবেই জানি। আপনি ইউটিউবে ভিডিও দেখার পাশাপাশি ভিডিও শেয়ার করতে পারবেন, ভিডিও আপলোড করতে পারবেন, লাইক, কমেন্ট করতে পারবেন।

গুগল প্লাস : গুগল প্লাস নতুন সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে অন্যতম। গুগল ২০১১ সালে এটি শুরু করে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এটি অনেক জনপ্রিয়তা পায়।

ইন্সটাগ্রাম : ইন্সটাগ্রামকেও অনেকটা নতুন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বলা চলে। ২০১০ সালে এর যাত্রা শুরু হয়। ইন্সটাগ্রাম মূলত একটি স্মার্টফোন এপ্লিকেশন। এখানে আপনি ছবি আপলোড করতে পারবেন, ছবিতে ডিজিটাল ফিল্টার এড করতে পারবেন এবং তারপর অন্য ইন্সটাগ্রাম ইউজার অথবা অন্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এ শেয়ার করতে পারবেন। ২০১২ সালে ফেসবুক এটি কিনে নেয়।

পিন্টারেস্ট : পিন্টারেস্ট একটি ইউনিক সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইট। এখানে আপনার একটি ভার্চুয়াল পিনবোর্ড থাকবে যেখানে আপনি ইমেজ কালেকশন ক্রিয়েট করা, ম্যানেজ করা এবং শেয়ার করতে পারবেন।

ইয়েল্প : ইয়েল্প আরও একটি ইউনিক সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। এটি ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটা আপনাকে লোকাল বিজনেস, যেমন- রেস্টুরেন্ট, হেয়ার সেলুন, সুপারশপ খুঁজে পেতে সাহায্য করে। বাংলাদেশে এর তেমন একটা প্রচলন নেই।

সাউন্ডক্লাউড : সাউন্ডক্লাউড একটি অনলাইনভিত্তিক সাউন্ড শেয়ারিং সাইট। আপনি এখানে মিউজিক অথবা অডিও রেকর্ড করতে পারবেন, আপলোড করতে পারবেন এবং আপনার তৈরি করা অডিও অথবা মিউজিক শেয়ার করতে পারবেন।

ফ্লিকার : ফ্লিকার হচ্ছে অনলাইন ফটো শেয়ারিং এবং ইমেজ/ভিডিও হোস্টিং সার্ভিস সাইট। এখানে আপনি আপনার ছবি/ভিডিও আপনার ফ্রেন্ড অথবা অন্য যে কারও সঙ্গে শেয়ার করতে পারবেন, আপনার মতো করে ছবিগুলো সাজিয়ে রাখতে পারবেন।  আর আপনি চাইলে অন্যান্য যে কারও ছবিও দেখতে পাবেন।

কাসমেটস : কাসমেটস বেশ পুরনো একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এটি মূলত ইউজারদের স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির ফ্রেন্ডদের সঙ্গে কানেক্ট থাকার জন্য শুরু হয়।  প্রথম দিকে এটি শুধু আমেরিকার মানুষ ব্যবহার করত। পরে এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

 

বিনোদনের নতুন দুনিয়া

বিনোদন জগতের নতুন এক মিডিয়া সার্ভিস হচ্ছে ওভার-দ্য-টপ (ওটিটি)। এর মাধ্যমে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজন শুধু ইন্টারনেট সংযোগ। কোনো ক্যাবল কিংবা স্যাটেলাইট টেলিভিশনের দরকার না হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে অনলাইন দর্শক সংখ্যা ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা। ওটিটি হচ্ছে মূলত এক ধরনের স্ট্রিমিং মিডিয়া পরিষেবা যা দর্শকদের কাছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি সরবরাহ করা হয় দর্শকদের। বাংলাদেশের বাইরে অন্যান্য দেশে আগে থেকেই এই প্ল্যাটফরম প্রচলিত আছে। যার মধ্যে কিছু জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফরম হচ্ছে : Netflix, Amazon Prime, Mx player, Hoichoi ইত্যাদি। বিদেশি OTT ছাড়াও বাংলাদেশের এই নতুন জাতীয় প্ল্যাটফরমের বিকাশকারীদের পাশাপাশি তারকারাও এটির মাধ্যমে দর্শকদের মাঝে নিজেকে উপস্থাপন করার জন্য কাজ করছেন।

যার ফলে স্যাটেলাইট টেলিভিশন, ইউটিউবে প্রকাশ ছাড়াও তৈরি হচ্ছে অনেক সিনেমা ও সিরিজ যা প্রকাশিত হচ্ছে এই প্ল্যাটফরমে।

মানুষের কাজের পরিসর বেড়েছে। জীবনযাপনে এসেছে অনেক পরিবর্তন। সেই সঙ্গে ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, তাই দর্শক রুটিন করে টিভি বা সিনেমা হলে গিয়ে নাটক সিনেমা দেখছে না। নিজের সুবিধামতো সময় কাটাচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের মনোজগতে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে নিত্যনতুন প্রযুক্তির সমাহার। ২০১০ সালের পর থেকে ইউটিউব মাধ্যমের বিস্তার ঘটতে থাকে। সেখানে ভিউ, লাইক এবং কমেন্টের অপশন থাকায় একটি কন্টেন্ট কতজন দেখল কী মন্তব্য করল সেটা আবার সবাই দেখতে পাচ্ছি। করোনাকালে দর্শকদের বিনোদন চাহিদা পূরণে বিকল্প মাধ্যম হিসেবে অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরমের গুরুত্ব বেড়েছিল। দর্শক বিনোদন খুঁজে নিয়েছিল নেটফ্লিক্স, আমাজন কিংবা হটস্টার, জি ফাইভ প্ল্যাটফরমে।

ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের বদৌলতে নাটক, মিউজিক্যাল শো, রিয়েলিটি শো, সংবাদ, তথ্যচিত্রের বেশির ভাগই ইউটিউব বা কোনো না কোনো অ্যাপসে পাওয়া যাচ্ছে। দর্শক তার প্রয়োজনমতো সুবিধাজনক সময়ে বড় বাজেটের আকর্ষণীয় শো দেখতে পাচ্ছেন।  দর্শক এখন টিভি ছেড়ে অনলাইনের দিকে ঝুঁকছেন।

 

ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের প্রসার এতই বেড়েছে, এখন যেকোনো নাটক, সিনেমা কিংবা গান মুহূর্তেই দর্শকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। শিল্পী ও নির্মাতারা দর্শক ও শ্রোতাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছেন।

 

নিউ মিডিয়ার চ্যালেঞ্জ

অনলাইন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘সিটিজেন জার্নালিজম’ বা নাগরিক সাংবাদিকতার দ্রুত বিকাশ হয়েছে। মানুষ তার স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে নানা ধরনের ছবি ও ভিডিও আপলোড করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব ছবি এবং ভিডিও দারুণভাবে ছড়িয়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু এর বিপজ্জনক দিকও রয়েছে।

যারা সিটিজেন জার্নালিজম করছেন তাদের অনেকের সাংবাদিকতার একাডেমিক প্রশিক্ষণ বা পেশাগত দক্ষতা নেই।

একটি মূলধারার সংবাদমাধ্যম চাইলেই যে কোনো ছবি, ভিডিও এবং খবর প্রচার করতে পারে না। খবরের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করতে হয়। কিন্তু সিটিজেন জার্নালিজমে সেটির কোনো বালাই নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে নানা ধরনের ভুয়া খবর, পুরনো ছবি এবং ভুল ছবি অনায়াসে ছড়িয়ে দিচ্ছে। অনেকে সেগুলো দেখে বিশ্বাসও করছেন। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, অনেক শিক্ষিত এবং সচেতন মানুষ এসব নিউজ অনলাইনে শেয়ার করছেন। যার কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন প্ল্যাটফরমে বস্তনিষ্ঠ সংবাদ যতটা না ছড়ায়, তার চেয়ে অনেক দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে গুজব ও ‘ভুয়া সংবাদ’। গুজবের কারণে মানুষ আতঙ্কিত হতে পারে, কারও ঘরবাড়ি ভাঙচুর হতে পারে বা কেউ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হতে পারে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দিতে পারে, কেউ মারধরের শিকার হতে পারে, কেউ খুনও হতে পারে। পণ্যের কেনাকাটা বেড়ে বা কমে যেতে পারে, শেয়ারবাজারে ধস নামতে বা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তেও পারে।  মানুষের রটনা এবং শোনা কথার গতি মূলত সংবাদের চেয়েও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে।

 

অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ছেন অনেকে

বিশ্বব্যাপী নতুন কাজ খোঁজা এবং প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগের জনপ্রিয় মাধ্যম লিংকড-ইন। এতে নতুন নতুন চাকরির কথা যেমন জানা যাবে, তেমনি যাঁরা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুসন্ধান করছেন, তাঁরা আপনাকে খুঁজে পাওয়ার সুযোগও রয়েছে। কাজ খোঁজার ক্ষেত্রে পছন্দের নির্দিষ্ট কোনো বিষয়, এলাকা বা দেশ উল্লেখ করার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি যদি চান, নতুন চাকরির জন্য আপনাকে কেউ খুঁজে পাবে না, এমন সুযোগও রয়েছে। বিশ্বের প্রফেশনাল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোর মধ্যে লিংকডইন শীর্ষে অবস্থান করছে। পৃথিবীর ২০০টির অধিক অঞ্চল এবং দেশে ৯০০ মিলিয়ন মানুষ লিংকডইন ব্যবহার করেন, যার মধ্যে কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই ২০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে। পেশাদার বা শিক্ষার্থী, উভয়ের জন্যই নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে বা চাকরির সুযোগ খুঁজতে লিংকডইন বেশ কাজে আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডন্ট বারাক ওবামা একবার মজা করে বলেছিলেন, তার মেয়াদকাল শেষে তিনি লিংকডইনে চাকরি খুঁজবেন।  মোট কথা হচ্ছে, চাকরি খোঁজা কিংবা নেটওয়ার্ক স্থাপন, উভয় ক্ষেত্রেই বেশ কাজে আসতে পারে লিংকডইন।

 

চলছে ই-বার্তার যুগ

এখন চলছে ই-বার্তার যুগ। হাতে হাতে মোবাইল সঙ্গে ইন্টারনেট। চাইলেই ই-মেইল পাঠানো যাচ্ছে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে। ই-মেইলে লেখা চিঠির পাশাপাশি ছবি ভিডিও সবই পাঠানো যায় আজকাল। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট বার্তা আদান-প্রদানের পুরো মাধ্যমটিকেই বদলে দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার আধিপত্যের এই যুগে খুব সহজেই মিলছে ইলেকট্রনিক বার্তা পাঠানোর সুযোগ। হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার, সিগন্যাল এমন অ্যাপগুলো বার্তা পাঠানোর জন্য, অডিও ভিডিও সব মাধ্যমেই যোগাযোগের কাজ করে থাকে।

এছাড়া জিমেইল, ইয়াহু মেইলের মতো ওয়েবসাইটগুলো বহু আগে থেকে ইমেইল পাঠানোর জন্য ব্যবহারকারীদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়।  এ ছাড়া জুমের মতো ভিডিও মিটিং প্ল্যাটফরমগুলো গত কয়েক বছরে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত কাজে আকাশছোঁয়া সাফল্য পেয়েছে। মানুষ আজকাল এসব যোগাযোগমাধ্যম ছাড়া প্রায় অচল বলা চলে। ব্যবসায়িক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও ই-বার্তা এখন অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর