‘আপনাদের এই ঋণ আমি কোনোদিনও শোধ করতে পারব না। আপনারা আমার পাশে না দাঁড়ালে হয়ত ছেলেকে বাঁচাতে পারতাম না। আমার ছেলের চিকিৎসায় টাকার জন্য আমি ভিখারির মতো মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছি, সরকারি হাসপাতালেও গেছি—কোথাও কোনো সহায়তা পাইনি। বরং সর্বস্তর থেকে বিতাড়িত হয়ে কেঁদেছি।
কিন্তু আমার বোবা কান্না কাউকে দেখাতে পারিনি। এক পর্যায়ে আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম ছেলেকে হয় তো আর বাঁচাতে পারব না।’ অশ্রুসজল চোখে কথাগুলো বলেন সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা অসহায় মা মিনারা বেগম।
জানা গেছে, মিনারা বেগমের ৮ বছর বয়সী ছেলে আরাফাতের দীর্ঘদিন আগে বাম হাতে আঘাত পেয়ে টিস্যু ইনজুরি হয়ে রক্তক্ষরণ ও পুঁজ তৈরি হয়।
এর কারণে ইনফেকশন হলে সে প্রচণ্ড ব্যথায় ছটফট করতে থাকে। টাকার অভাবে মা মিনারা তার কোনো চিকিৎসা করাতে পারেননি। ছেলেকে নিয়ে প্রথমে মাদারীপুর ২৫০ শয্যার হাসপাতালে যান তিনি। সেসময় চিকিৎসকরা জানান, বাচ্চাটার হাতের যে অবস্থা তার চিকিৎসা এখানে সম্ভব নয়। ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে হবে।
এরপর মিনার বেগম সমাজের বিত্তবান মানুষের দুয়ারে দুয়ারে সাহায্যের জন্য হাত পেতেছেন। কিন্তু কেউ তাকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করেনি। ছেলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এমন সময় মিনারা জানতে পারেন- বসুন্ধরা শুভসংঘ নামে একটি সংগঠন গরিব-অসহায় মানুষের পাশে থাকে।
বিষয়টি জেনে আশা নিয়ে মিনারা বেগম ছুটে যান সংগঠনের সভাপতির কাছে। তার নিকট ছেলের মারাত্মক অসুস্থতার কথা খুলে বলেন।
এ সময় সভাপতির নেতৃত্বে ‘শুভকাজে সবার পাশে’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে বসুন্ধরা শুভসংঘের বন্ধুরা মাদারীপুর বসুন্ধরা শুভসংঘের উপদেষ্টা ডা. সোহেল-উজ্জামান-এর কাছে গিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেন। তিনি কালবিলম্ব না করে আরাফাতকে তার কাছে নিয়ে আসতে বলেন।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মা মিনারা বেগম ও বসুন্ধরা শুভসংঘের বন্ধুরা আরাফাতকে নিয়ে ডা. সোহেল-উজ্জামানের কাছে নিয়ে যান। তিনি মাদারীপুর শহরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে বিনাখরচে নিজহাতে আরাফাতকে সুচিকিৎসা প্রদান করেন।
মা মিনারা বেগমকে নিশ্চিত করে ডা. সোহেল-উজ্জামান বলেন, ‘আরাফাতকে আর ঢাকায় নিতে হবে না। আপনার ছেলে এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে।’
এ সময় ডাক্তারসহ সংগঠনের মাদারীপুর জেলার সভাপতি ওহিদুজ্জামান কাজল ও বসুন্ধরা শুভসংঘের বন্ধুরা আরাফাতের ওষুধ ও পথ্য কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা করেন। মিনারা বেগম খুশিতে আবেগাপ্লুত হয়ে ডা. সোহেল-উজ্জামানসহ বসুন্ধরা শুভসংঘের বন্ধুদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বিডি প্রতিদিন/মুসা