রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

এখনকার ফুটবলারদের শেখার আগ্রহ নেই

প্রতাপ শংকর হাজরা

এখনকার ফুটবলারদের শেখার আগ্রহ নেই

ছবি : রাফিয়া আহমেদ

মুক্তিযুদ্ধ চলছে। পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুরা বিদ্রোহ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে মেসেজ এলো অস্থায়ী সরকারের কাছে, ফুটবল দল গঠন করে প্রোপাগান্ডার জবাব দিতে পারো। শামসুল হকের মাধ্যমে মেসেজটা পেলেন প্রতাপ শংকর হাজরা। তারপর স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু। জাতীয় দলের খ্যাতিমান এই খেলোয়াড়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- রাশেদুর রহমান

 

 

ফুটবলার হিসেবে বেড়ে ওঠার গল্পটা বলুন। আপনি তো বিখ্যাত হকি তারকাও ছিলেন।

ছোটবেলা থেকেই আমি খেলাধুলার প্রচুর সুযোগ পেয়েছি। যখন হাঁটতে শিখছি তখন থেকেই আমার কাছে ফুটবল আর হকিস্টিক ছিল। আমার বড় ভাই তারা শংকর হাজরা। তিনি খুব ভালো ক্রিকেট প্লেয়ার ছিলেন। স্কুল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন। ফার্স্ট ডিভিশন খেলেছেন। স্কুলের খেলার সরঞ্জাম কিনতে গেলে আমার জন্যও কিনে আনতেন। কাজেই হকি, ক্রিকেট, ফুটবল এগুলো আমি ছোটবেলা থেকেই পেয়েছি; যার ফলে খেলাধুলার শখটা সাংঘাতিক রকমের ছিল। বাড়িতে অবশ্য বিপরীত পরিবেশ। আমার বাবা-মা চাইতেন আমি খুব ভালো ছাত্র হই। লেখাপড়ায় ভালো করি। মা আমার খেলাধুলায় কোনো আপত্তি করেননি। বিশেষ করে বড় হওয়ার পর তো আমার মা আমাকে যে সহযোগিতা করেছেন তা চিন্তার বাইরে। তা ছাড়া আমার পরিবারটা বহু আগে থেকেই খেলাধুলার প্রতি আসক্ত ছিল। ১৯৫০ সালে রায়ট হয়েছিল এখানে। সেই রায়টের ফলে আমার দাদারা চলে যান কলকাতায়। তারা এখানে থাকলে বেশ নামকরা ক্রিকেটার হতে পারতেন। কলকাতায় গিয়ে রিফিউজি হয়ে আর সে রকম সুযোগ পাননি।

আমাদের বাড়ির সামনে একটা লন ছিল। খুব বড় নয়, একটা ব্যাডমিন্টন কোর্টের চেয়ে সামান্য বড়। সেই লনে আমরা খেলাধুলা করতাম। আমার আরও সমবয়সী অনেক ভাই ছিল। আমার সমবয়সী তিন ভাই। এ ছাড়া এক-দেড় বছরের ছোট-বড় মিলে একটা বড় গ্রুপ ছিলাম। আরমানিটোলায় দুটো বিল্ডিং নিয়ে একটা কমপাউন্ডে ছিল আমাদের বাড়ি। দুই দাদার নাতি-নাতনি মিলে ১২-১৪ জন। আমরা একসঙ্গেই খেলাধুলা করতাম। সেখান থেকেই ইন্টারেস্টটা বেড়ে যায়। এরপর স্কুলে ভর্তি হলাম। আরমানিটোলা স্কুলে খেলাধুলা করার জন্য ছাত্রদের সাংঘাতিক রকমের অনুপ্রেরণা দেওয়া হতো। আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি, তখন একটা সুযোগ পেয়েছিলাম। আমাদের পাড়ার এক বড় ভাই ছিলেন। হিমু নাম। তিনি আমাকে ওয়ারী ক্লাবে নিয়ে যান। আমার বয়স ১৪ বছর প্লাস। সেই বছর প্রথম হকিতে ফার্স্ট ডিভিশন খেলি। তারপর ’৬১ সালে ইস্ট পাকিস্তান টিমে খেলি। আমি সেকেন্ড ডিভিশন ফুটবল খেলি। ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের বি টিম ঢাকা স্পোর্টিং টিমে। আর ফার্স্ট ডিভিশন খেলি ভিক্টোরিয়ার হয়ে। ক্রিকেট ফার্স্ট ডিভিশন খেলি ’৫৮ সালে ওয়ারীতে। তখন তিনটি মৌসুমে তিনটি খেলা হতো। এ কারণে একজন খেলোয়াড় তিনটিতেই খেলতে পারতেন।

 

পাকিস্তান জাতীয় ফুটবল দলে খেলার কথা বলছিলেন। জাতীয় দলে কখন খেলতে শুরু করেন?

পাকিস্তান জাতীয় দলে আমি প্রথম ট্রায়াল দিই ’৬৩ সালে। সে সময় দর্শকরা সবাই ধরে নিয়েছিলেন, আমি সবচেয়ে জুনিয়র হিসেবে চান্স পাব। তবে পাকিস্তান টিম তখন প্রি-অলিম্পিক খেলতে যাবে। বড়দের ব্যাপার। আরও স্ট্রেন্থের দরকার। ফিজিক্যাল ডেভেলপমেন্টের দরকার। এজন্য বড়দেরই নিয়েছে। আমি সিলেক্ট হইনি। ’৬৪ সালে আমি প্রথম জাতীয় দলে স্ট্যান্ডবাই হই। পাকিস্তান একাদশের হয়ে ঢাকার মাঠে প্রথম ম্যাচ খেলি রাশিয়ান একটি স্টেট টিমের বিপক্ষে। সে সময় রাশিয়া ফুটবলে অন্যতম সেরা দল। লেভ ইয়াসিনদের সময়। তার দুটি খেলা দেখেছি আমি। ’৬৫ সালের ডিসেম্বরে আবার ট্রায়ালে অংশ নিয়ে সিলেক্ট হই শ্রীলঙ্কা ট্যুরের জন্য। সেখানে তিনটি টেস্ট ম্যাচ ও পাঁচটি এক্সিবিশন ম্যাচ খেলি। সেটাই ছিল আমার প্রথম বিদেশ সফর। সে সময় শ্রীলঙ্কা খুব ভালো দল ছিল। ঢাকার মাঠে শ্রীলঙ্কার অনেক ফুটবলার ছিলেন।

 

লেভ ইয়াসিনের খেলা দেখার কথা বলছিলেন। তার খেলা কেমন লাগল? ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলকিপার তিনি।

’৬৫ সালে রাশিয়ায় গিয়েছিলাম। সে সময়ই লেভ ইয়াসিনের দুটি ম্যাচ দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল ডায়নামো মস্কোর মাঠে। গোলকিপারকে ব্যাক পাস করলে রাশিয়ায় দর্শকরা সিটি বাজান। কান খোলা রাখাই দায়। কিন্তু ইয়াসিনকে ব্যাক পাস দিলে দর্শকরা তালি দেন। দুটি ম্যাচ দেখেছি। দুটি ম্যাচই ড্র। ডায়নামোর চেয়ে অপোন্যান্ট অনেক স্ট্রং ছিল। একটির নাম ছিল টর্পেডো মস্কো। ওরাই পরে লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু শক্তিশালী দল হয়েও লেভ ইয়াসিনের জালে কোনো গোল দিতে পারেনি।

মজার ব্যাপার হলো, লেভ ইয়াসিন মাঠে ঢুকছেন। দুটি ছেলে তাকে মালা পরিয়ে দিচ্ছে। মাঠ থেকে বেরোচ্ছে আবার মালা পরিয়ে দিচ্ছে। তিনি অনেক সম্মানিত রাশিয়ায়। সে সময় রাশিয়ান ফুটবল দলে সিগারেট খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু লেভ ইয়াসিনের জন্য সিগারেট খাওয়ার পারমিশন ছিল। এতেই বোঝা যায় তিনি কতটা সম্মানিত ছিলেন!

 

আপনাকে কর্নার স্পেশালিস্ট বলা হতো। কর্নার থেকেই সরাসরি গোল করতেন। ব্যাপারে বিস্তারিত একটু বলবেন?

এটা আমি ঠিক বলতে পারব না। আমি তো আর আমার খেলা দেখিনি। দর্শকরা দেখেছেন। তবে এখন লোকেরা এ রকমটাই বলে। ’৬৪ সালে আগা খান গোল্ডকাপের ফাইনালে করাচি পোর্ট ট্রাস্ট ও মোহামেডানের খেলা। সেখানে করাচির গোলকিপার ছিল পাকিস্তান জাতীয় দলের নেসার। লিকলিকে শরীর। অনেকটা লম্বা। আমার সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। আমরা ফাইনাল খেলছি ঢাকার মাঠে। মোহামেডান দক্ষিণ সাইডে আর করাচি উত্তরে। সময়টা অক্টোবর। শীতকালের শুরু। উত্তরের বাতাস বইছে। সে সময় আমি অনুশীলন করতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে। দেখতাম কর্নার থেকে বলটা মারলে বলটা ঘুরে গিয়ে গোলবারে লাগত। সেবার ফাইনালে প্রথম কর্নার কিক পাওয়ার পরই আমি সেটা ট্রাই করি এবং নেসারের মাথার ওপর দিয়ে বাঁক নিয়ে গোল হয়। ওটাই ছিল কর্নার থেকে করা আমার প্রথম গোল। এর জন্য আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এরপর ঢাকা লিগে আমি আরও ৫-৬টি গোল করি। ’৭২ সালে তো আজাদের বিপক্ষে কর্নার থেকে পরপর ৩ গোল করে হ্যাটট্রিক করেছিলাম। তবে সে সময় বৃষ্টির মৌসুমে ফুটবল লিগ হতো। এ কারণে বাতাসের সাহায্য তেমন একটা পাওয়া যেত না। বাতাসের সাহায্য ছাড়া এ টেকনিকটা কাজে লাগত না।

তা ছাড়া আমি অনেক লাকি ছিলাম। আমার দলে মোহাম্মদ ওমর ও মোহাম্মদ মুসাকে পেয়েছিলাম ভিক্টোরিয়ায়। ওমরের হেড ওয়ার্ক অসাধারণ। লম্বায় খুব বেশি নয়। ৫ ফিট ৭ হবে হয়তো। আমি কর্নার করলেই এ দুজনের হেডে গোল হতো। মুসা এবং ওমর আমার চেয়ে অনেক জনপ্রিয়। এ দুজন আমার দলে থাকায় অনেক সুবিধা হয়েছিল। কর্নার কিক নিলেই এ দুজনের একজন হেড নিতই। শুরুতেই এমন একটা সুযোগ পাওয়া ছিল ভাগ্যের ব্যাপার। এটা অনেক বড় অবদান রেখেছে। আমি গোল না করে করানোর দিকেই মনোযোগী ছিলাম বেশি। গোল করলেও খুশি হতাম। কিন্তু আমি মনে করতাম গোল করানোর চেষ্টা করাই ভালো। এজন্যই আমি কখনো পেনাল্টি শট নিইনি।

আমরা যে পরিশ্রম করেছি তা কেউ কল্পনাও করতে পারে না। স্কিল তৈরি করার জন্য আমি যে পরিশ্রম করেছি তা ছিল অসম্ভব ব্যাপার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে গ্যালারির পিলারে ২০ গজ দূর থেকে বিভিন্ন স্থানে শট মারার অনুশীলন করতাম। এখনকার দশজন মিলেও আমার একার মতো পরিশ্রম করে না। ওদের শেখার আগ্রহটাই নেই।

 

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সহঅধিনায়ক ছিলেন আপনি। সে সময়কার ইতিহাস আমাদের জাতীয় জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কী উদ্দেশ্য নিয়ে দল তৈরি হয়েছিল?

২৬ মার্চ আরমানিটোলায় আমাদের বাড়িটা পুড়িয়ে দেয় পাকিস্তান আর্মি। সেখান থেকে আমরা পেছন দরজা দিয়ে বেরিয়ে আর্মেনিয়ান চার্চে শেলটার নিই। পরদিন সকালে এসে বর্তমান হকি ফেডারেশনের সেক্রেটারি আবদুস সাদেক ও মোহন মিয়ার ছেলে আকমল আমাদের রেসকিউ করে ধানমন্ডিতে নিয়ে যান। তবে সেখানেও আমরা সেইফ ছিলাম না। আর্মি জেনে যায় আমাদের অবস্থান। আমরা গাড়ি করে বের হওয়ার পথেই দেখি আর্মির গাড়ি ঢুকছে ধানমন্ডির সেই বাড়িতে। আমাদের কেউ আহত বা নিহত হয়নি। তবে একটা ফুলপ্যান্ট ছাড়া আমার পরনে কিছু ছিল না। আকমলই সব জোগাড় করে দেয়। সেখান থেকে গ্রামের বাড়ি হয়ে ভারতে যাই। ভারতে যাওয়ার পথে শহীদজননী জাহানারা ইমামের ছেলে রুমী, নায়ক আসাদ ও মানিকনগরের মানিক আমাদের সঙ্গী ছিলেন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গান গাইত খুব পরিচিত মুখ মনিরুল আলম আমাদের লিডার ছিল। আমরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে ভারতে চলে যাই। তবে বাবা ঢাকাতেই ছিলেন। মোহামেডান ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মনিরুল ইসলামের কাছে আমি অনেক ঋণী। তার বাড়িতেই আমার বাবা ছিলেন ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। কেবল মুক্তিযুদ্ধের সময়ই নয়, আগে-পরেও অনেক সহযোগিতা করেছেন মনিরুল ইসলাম। বাবার পরে কেউ থাকলে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে আপনজন। এ কারণেই আমি কখনো মোহামেডান ছাড়তে পারিনি।

মনিরুল ইসলামের বাড়ি থেকেই পরে টাকা-পয়সা জোগাড় করে কলকাতায় রওনা দেন বাবা। আমরা আগরতলা দিয়ে ট্রেনে শিয়ালদহ আসি। আমরা দুটি দলে ভাগ হয়ে যাই। মোহামেডানের গোলকিপার বরিশালের নূরনবী আমাদের পরিবারের অন্যদের নিয়ে চলে যান। অন্য গ্রুপে আমরা মনোর নেতৃত্বে ফয়েজ আহমদ আর কামাল লোহানীরাসহ ৩০-৩৫ জনের একটি দল বর্ডার ক্রস করে আগরতলা হয়ে কলকাতায় চলে যাই। সেখানে পৌঁছে থিয়েটার রোডে ইমামের সঙ্গে দেখা। ইমাম আইএফএতে (ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন) দৌড়াদৌড়ি করে রিফিউজিদের নিয়ে একটা ফুটবল দল গঠনের চেষ্টা করছিলেন। আমিও তার সঙ্গে যোগ দিই। আগারতলায় এসে ৬০-৭০ জনের ট্রায়াল নিয়ে প্রথমত ২৫ জন সিলেক্ট করি। পরে কাজী সালাউদ্দিন ও এনায়েত যোগ দেওয়ায় ভালো একটা দল গঠন করা হয়। আগরতলায় দল গঠন করতে গিয়ে বড় একটা বিপদেই পড়েছিলাম। সেখানে স্থানীয় ক্লাবগুলোর মৌসুম শেষের দিকে ছিল। তিন-চারটি করে ম্যাচ বাকি। তারা ফুটবলার ছাড়তে চাচ্ছিল না। মারধর করার মতো অবস্থা। লুৎফর রহমান সাহেব বললেন, কী করা যায়? তাকে বললাম, আপনার কাছে কি অস্থায়ী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চিঠি আছে? তিনি একটা চিঠি বের করেন। তারপর তাপস বাবুকে নিয়ে স্থানীয় ক্লাবগুলোকে অনেক বুঝিয়ে ফুটবলারদের নিয়ে আসি।

কেন এই ফুটবল দল তৈরি হয়েছিল এবার সে প্রসঙ্গে আসি। শামসুল হক আমাকে এটা প্রকাশ করতে নিষেধ করেছিলেন বলে এত দিন আমি তা বলিনি। তবে এখন যেহেতু স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন অতীত হয়ে গেছে তাই প্রথমবারের মতো বলছি। ইন্দিরা গান্ধী একটা মেসেজে তাজউদ্দীন সাহেবকে জানিয়েছিলেন, ‘ভারতীয় মুসলিম কমিউনিটি এ যুদ্ধের ঘোর বিরোধী। কারণ, তারা মনে করে ভারতীয়রা হিন্দুদের সহায়তায় এ যুদ্ধ শুরু করেছে। এখানে বাংলাদেশের মুসলিমদের কোনো অংশগ্রহণ নেই।’ মূলত পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছিল। আর এ প্রোপাগান্ডাই বিশ্বাস করে ভারতীয় মুসলমানরা।

শামসুল হক বললেন, ‘আমাদের তো ফুটবল ছাড়া সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার কোনো পথ নেই। এটা আমাদের করতেই হবে।’ আমি বললাম, ‘আমরা তো দেশের জন্য মরতেই চেয়েছিলাম। এটা কেন করতে পারব না।’ মূলত পাকিস্তানি প্রোপাগান্ডার একটা জবাব হিসেবেই ফুটবল দল গঠন করা হয়েছিল।

কলকাতার করনানি স্টেট নামের ফ্ল্যাটবাড়ি ভাড়া করে ফুটবল দল গঠন করি। সেখান থেকে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় আমরা ফুটবল খেলি। একটা ঘটনার কথা বলি। বিহারের ছাপড়া জেলার সিওয়ান এলাকায় বাস থেকে নামলাম। সেখানে অনেক মুসলমান উপস্থিত ছিল। আমাকে তিন-চার জন এসে জিজ্ঞেস করল, নামাজ কীভাবে পড়তে হয়? বললাম, আমি তো হিন্দু। সবকিছু জানি না। তবে জানি আপনারা দিনে পাঁচবার নামাজ পড়েন। তারা আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে অন্যদের দিকে এগিয়ে গেল। সেখানে ২১ জনের ১৭ জনই মুসলিম ছিল। স্থানীয় মুসলমানরা আমাদের মুসলিম প্লেয়ারদের সঙ্গে কথা বলে খুবই সন্তুষ্ট হয়। পাকিস্তানি প্রোপাগান্ডা যে ভুল তার প্রমাণ পেয়েছিল তারা। পরদিন ছাপড়া জেলার সিওয়ান দলের বিপক্ষে আমাদের ম্যাচ। প্রথমে আমরা গোল খাই। দর্শকদের মধ্যে কোনো উৎসব নেই। আমরা যখন গোল করলাম, তখন সে কি উল্লাস। ৩-১ গোলে ম্যাচটা জিতি আমরা। স্থানীয় মুসলমানরা আমাদের জয়ে খুবই উল্লাস করেছিল। এরপর আমরা আরও অনেক মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ম্যাচ খেলেছি। বেনারসে খেলেছি। বিহার ও বাংলার বর্ডারেও খেলেছি। পত্রপত্রিকায় আমাদের ম্যাচ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। স্টেটসম্যান ও আনন্দবাজার কেবল খেলার কথাই নয়, মুক্তিযুদ্ধের কথাও লিখেছিল। বিদেশের মাটিতে বিদেশিদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানানোর অন্যতম একটা মাধ্যম হয়ে উঠেছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।

 

আমাদের ফুটবলের গৌরবময় সময়টা পেছনেই রয়ে গেল। অথচ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এমনকি কাতারের মতো দেশও পেছন থেকে কত দ্রুত সামনে চলে এলো। কাতার তো এশিয়ান কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল। আমরা ঠিকভাবে এগোতে পারলে কত দূর যেতে পারতাম? বিশ্বকাপ খেলা সম্ভব হতো কি?

স্পোর্টস নেশন বলে একটা কথা আছে। আমাদের সবাই কিন্তু খেলার সমর্থক। খেলোয়াড় খুবই কম। ইংল্যান্ডের মতো একটি দেশ যেখানে আমাদের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ সেখানে কত ক্রিকেটার, কত ফুটবলার। বাংলাদেশে কতজন আছে! আমাদের এখানে কি ৫ হাজার ফুটবলার আছে? হকিতে ২০০-এর ওপরে প্লেয়ার নেই। পেশাদার ফুটবলারও খুব বেশি নেই। এই সংখ্যার ফুটবলার নিয়ে বিশ্বকাপ খেলা যায় না। এই হলো বর্তমান অবস্থা। আর আমাদের যুগে ফুটবল খেললে লুইচ্চা বলে গালি দিত। তবে হ্যাঁ. ’৮০-এর দিকে বাদল রায়, সালাম, আসলাম, ইউসুফ, কায়সারদের নিয়ে যে ফুটবল টিমটি তৈরি হয়েছিল সেটা একটি চমৎকার দল ছিল।

আমাদের পরবর্তী যুগে এটাই ছিল শেষ ফসল। ’৮০ সালে এ দলটিই তো এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলেছিল। এ ধারাবাহিকতা থাকলে বিশ্বকাপে খেলা হতো কিনা বলা কঠিন তবে এশিয়ান কাপে আমরা হয়তো অনেক ভালো কিছু করতে পারতাম। অনেক দূর এগিয়ে যেত আমাদের ফুটবল।

একটা দুঃখের কথা বলি। মেয়েরা মা হতে না চাইলে দেশে সন্তান আসবে কোত্থেকে? স্কুলগুলো যদি খেলোয়াড় তৈরি করতে না চায় তবে খেলোয়াড় আসবে কোত্থেকে? একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন, আমি শুনেছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে। এ টাকা স্কুলে ছেলেমেয়েরা যে স্পোর্টস ফি দেয় তা। এ টাকা স্পোর্টসে খরচ হয় না। তাহলে স্পোর্টস নেশন হব কী করে!

জাপানের কথা আলাদা। ওরা প্রো-পিপল গভর্নমেন্ট। সেখানকার জিমনেসিয়ামের কথাই ধরি না কেন। টোকিওতে যে পরিমাণ জিম আছে আমাদের সারা দেশেও তা নেই। মাল্টি জিম তো আমাদের এখানে এলোই ’৯৬ সালে। একটা কথা আছে- ‘অ্যাথলেটিকস ইজ দ্য মাদার অব অল স্পোর্টস’। আর আমি বলি, জিমনেসিয়াম হচ্ছে ডেলিভারি রুম। আমাদের দেশে তো জিমনেসিয়ামই নেই যথেষ্ট পরিমাণে।

 

গত শতকের শেষ দশক থেকেই ফুটবলের জনপ্রিয়তা প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে যায়। এটা মেধা না দক্ষ সংগঠকের অভাবের কারণে? আপনার কাছে কী মনে হয়?

প্রধানত সাপ্লাই অব প্লেয়ার্স নেই। বাদল রায়রা যখন আসে তখন কিন্তু ফুটবল খুবই জনপ্রিয় খেলা। তার পরও ফুটবলে ধস নামে। কারণ, স্কুল যদি ফুটবলার সাপ্লাই না দেয় তাহলে ফুটবলার আসবে কোত্থেকে? ক্রিকেটের উত্থানও একটা কারণ। এখন ফুটবল না খেলে সবাই ক্রিকেট খেলতে চায়। কারণ, সেখানে টাকা আছে। ক্রিকেট যেমন অর্গানাইজড হয়েছে তেমন করে ফুটবল হতে পারেনি। আরও একটা কারণ, টেলিভিশন। গ্রামে-গঞ্জে ইউরোপিয়ান ফুটবল দেখা হয় টিভিতে। কিন্তু সেখান থেকে কোনো ফুটবলার উঠে আসছে না। ফুটবল দেখে মজা পান দর্শকরা। কিন্তু ফুটবলাররা এ খেলা দেখে শেখে না। এর ফলে মান বাড়ছে না। আমরা যেমন নতুন কিছু শেখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতাম তা এখনকার ওরা করে না। শেখার আগ্রহ থাকতে হবে তো।

তা ছাড়া এখনকার ক্লাব কর্তাদের অবস্থাও বিবেচনায় রাখতে হবে। আমাদের সময় প্রচুর অর্থ আর ঘাম ব্যয় করতেন ক্লাব কর্তারা। এখন তো রেডিমেড জিনিস পেয়ে যায় তারা। পেয়ে দালাল বনে যায়। এটা বদলাতে হবে। তাহলে কিছুটা ডেভেলপমেন্ট হবে আশা করা যায়।

 

অসংখ্য মাঠ হারিয়ে গেছে নানাভাবে। এখন তো শহরে ছেলেমেয়েদের খেলার জায়গাই নেই। এটা কি ফুটবলের দুরবস্থার একটা কারণ নয়?

মাঠের একটা ইতিহাস বলি। আমার বাড়ি শ্রীনগরের দোগাছি গ্রামে। সেখানে হাজরাদের মাঠ নামে একটা খেলার মাঠ ছিল। শাহ মোয়াজ্জেম সাহেব উপপ্রধানমন্ত্রী থাকার সময় মিথ্যা দলিল করে মাঠটি দখল করে মাঠের মাটি বিক্রি করে পুকুর বানিয়েছেন। তার মতো ব্যক্তিরা যদি মাঠ কেটে পুকুর করেন তাহলে অন্যরা কী করবে! ঢাকায় মাঠের কথা কী আর বলব? এখানে স্টেডিয়াম হলে বড় বড় কর্তারা বিদেশে যান। সেখান থেকে ঘুরে এসে একেকটা আবর্জনা তৈরি করেন। সিটি প্ল্যানাররাও ঠিকমতো প্ল্যান করছেন না। লাখ লাখ মানুষের জন্য ছোট্ট একটা মাঠ! ছেলেরা খেলবে কোথায়? মাঠ না থাকাও ফুটবলের দুরবস্থার একটা বড় কারণ।

 

বর্তমান ফুটবলকে কোন দৃষ্টিতে দেখছেন?

একটা ঘটনার কথা বলি। মোহামেডান ক্লাবে খেলে এমিলি। তাকে ৩৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এত টাকা পাবে একজন ফুটবলার- শুনে আমি খুব খুশি হলাম। ভাবলাম ছেলেটা বোধহয় অনেক ভালো খেলে। কিন্তু খেলা দেখতে গিয়ে অবাক হলাম। ফার্স্ট হাফে পাঁচটি বল ধরে সে। দৌড়ায় দেড় কিলোমিটার। সেকেন্ড হাফে ছয়টার মতো বল ধরে। এর মধ্যে একটা পাস ভালো দেয়। ওই একটা পাসের জন্য এত টাকা! আমি বলে এলাম, আড়াই লাখ টাকা মূল্যের প্লেয়ার ও। এখন ফুটবলে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। যোগ্যতার চেয়ে বেশি অর্থ দিয়ে ফুটবলার পুষছে ক্লাবগুলো। যোগ্যতা অনুযায়ী অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

আমার ট্রেনিং প্রোগ্রাম শোনো। ভোরে অন্ধকার থাকতে আমি মাঠে যেতাম। পাঁচ বছর আমি ধারাবাহিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে অনুশীলন করেছি। ওই সময় পূর্ব পাকিস্তান অ্যাথলেটিকস দলের অন্যতম তারকা আরজান খান, হাফিজউদ্দিন, আলতাফ, জাহাঙ্গীর, ফয়েজরা এ মাঠে প্র্যাকটিস করতেন। তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কালো পাথরের সিন্ডার ট্র্যাক করে দিয়েছিল। ভোরে তাদের সঙ্গে দৌড়াতাম কেবল ফুটবল খেলার সময় যেন দৌড়টা ঠিকমতো দিতে পারি এজন্য। ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করতাম। স্টেমিনা বিল্ড-আপ করতাম। এটা শেষ করে ফুটবল নিয়ে নেমে পড়তাম। ইয়াকুব নামে এক পিয়ন ছিল। তাকে আমি নাতি ডাকতাম। আমাকে সে নানা ডাকত। তার কাছেই আমার সরঞ্জামাদি জমা থাকত। আমি যখন অনুশীলন শেষ করে বাড়ি ফিরছি তখন আমার বন্ধুরা মাঠে আসছে। পরিশ্রম করতে হবে। তবেই না যোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।

 

এবারের লিগে অনেক ম্যাচ হয়ে গেল। বেশ কয়েকটি ম্যাচেই দারুণ ফুটবল খেলা হয়েছে। গতি বেড়েছে খেলায়। একে কীভাবে দেখছেন?

কোচের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। ট্রেনিং সেশনে কোচ কী করছেন তার ওপর নির্ভর করে দল কেমন খেলবে। ’৯৫ সালে হকিতে আমি কোচ ছিলাম। ইন্ডিয়ায় খেলতে গেলাম। সেখানে ভারতের বিপক্ষে আমাদের প্লেয়াররা মাঝমাঠ পার হতে পারছে না। প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা মাঝমাঠে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। আমি খুঁজে বের করলাম এর কারণ, ফিজিক্যাল ফিটনেস। আমি তাদের দৌড়াতে বললাম। আমার নাম হয়ে গেল ‘কোচ অব থারটি রাউন্ডস’। এভাবে দলের খেলায় অনেক পরিবর্তন আসে। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নামব। তাহির জামান, শাহবাজরা খেলে পাকিস্তানে। ওই ম্যাচে আমার দৃষ্টিতে ম্যাচটা আমরা জিতেছি। দুটি ফিল্ড গোল করেছিলাম। পাকিস্তান পেনাল্টিতে তিনটি গোল করে ম্যাচটা জেতে। এখন খেলায় স্পিড বেড়েছে। এটা কোচের কৃতিত্ব অনেকটা। তবে এটা দারুণ ব্যাপার যে, গতি বাড়ছে খেলায়। খুশির খবর।

 

বিদেশি অনেক নামিদামি ফুটবলার এখন লিগে খেলছেন। বিশ্বকাপ খেলা তারকারাও আছেন। ওদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেলছেন স্থানীয় ফুটবলাররাও। এতে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে?

আমার দেখা ঢাকার মাঠে খেলা সেরা ফুটবলার পাকিস্তানের কালা গফুর, ইরানের নালজিগার ও এমেকা। এ তিনজন যখন ঢাকার মাঠে খেলত তখন বাদল রায়, আসলামরা কিন্তু তাল মিলিয়ে খেলত না; কোনো কোনো সময় ওদের চেয়েও ভালো খেলত।

স্ট্যান্ডার্ড অব স্পোর্টস ডিপেন্ডস অন মাস পার্টিসিপেশন। নট ইনডিভিজুয়াল পার্টিসিপেশন। আমি যখন খেলছি, তখন প্রিয় বন্ধুকে সবসময়ই সাপোর্ট করে গেছি। তবে খেলার মাঠে আমি সবসময়ই ভালো হতে চেয়েছি। সেরা হতে চেয়েছি।

ফুটবলার হলো একটা জাতি। তাদের মধ্যে মনোভাবে পার্থক্য তেমন একটা নেই। কিন্তু সমস্যাটা হয় যখন কোচ কোনো বিশেষ ফুটবলারকে বেশি ফেভার করে। ক্লাব কর্তারাও অপ্রয়োজনীয়ভাবে বেশি প্রশংসা করে একজনকে অনেক ওপরে তুলে দেয়। তখনই উঁচু-নিচু স্তর তৈরি হয়ে যায়। দলের মধ্যে ব্রাহ্মণ-নমশূদ্র শ্রেণি তৈরি করা যাবে না। আমরা দেখেছি একসময় বিদেশিরা কেবল তাদের স্বজাতীয়দেরই পাস দেওয়ার চেষ্টা করত। ক্লাব কর্তাদের এবং কোচদের এ আচরণ বাদ দিতে হবে। সব ফুটবলারকে একই দৃষ্টিতে দেখতে হবে। তখন আমাদের ফুটবলারদের মধ্যে ‘ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স’ থাকবে না। বিদেশিদের মধ্যেও আর ‘সুপিরিয়রিটি’ ভাবটা থাকবে না। তাহলে যদি কিছু একটা হয়।

 

একটা সময় ধারণা করা হতো, ফুটবলে স্পন্সরের অভাব। এখন কিন্তু স্পন্সর কোনো সমস্যা নয়। যে কোনো টুর্নামেন্টেই বাফুফে স্পন্সর পাচ্ছে। তাহলে পরিবর্তনটা হচ্ছে না কেন?

ফুটবলে পতনটা ঠেকানোই যাচ্ছে না। পরিবর্তনটা কেন হচ্ছে না তা আমাকে জিজ্ঞেস না করলেই ভালো হয়। সঠিকভাবে সিআইডি তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে ফুটবলের পতনের কারণটা কী! কেন ফুটবলের এ অবস্থা তাও জানা যাবে। তদন্ত তো কেবল শুরু হলো। সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে আমি কখনই কিছু বলিনি। শুরু থেকেই তাকে খুব পছন্দ করেছি। ফুটবলার হিসেবে তার পাশে ছিলাম সবসময়। কিন্তু এখন আর তার পক্ষে কথা বলতে পারছি না।

 

ফুটবলে বিশ্বমানের যোগ্যতা অর্জন করতে হলে কী ধরনের উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন?

একটা কোচের সাকসেস কখন? টিম জিতলে? আমার কাছে তা নয়। একটা কোচের সাকসেস হলো তার ট্রেনিংয়ে কয়টি ফুটবলার জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। তার মানে হলো সেই কোচ ইনডিভিজুয়াল ফুটবলারের মান বৃদ্ধিতে বেশি সচেতন। আর ব্যক্তির উন্নয়ন হলে তো দলেরই উন্নয়ন হবে।

 

ফুটবলের অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায়টা কী হতে পারে বলে মনে করেন?

আমাকে ক্ষমতা দিলে আমি প্রথমেই জনগণকে বলতাম, ১৫ বছর অপেক্ষা কর। অনেক দিন গেছে। কিছুই পাইনি। ’৬০ থেকে কিছুই পাইনি। এই ১৫ বছরের মধ্যে আমি স্কুলে গিয়ে খেলার শিক্ষককে খেলার শিক্ষক হতে বলতাম। আর ক্রীড়ামন্ত্রীকে বলতাম, ফুটবল, অ্যাথলেটিকস ও হকিকে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। বাংলাদেশের সব স্কুলে খেলা ম্যান্ডেটরি করতে হবে। খেলাধুলার জন্য আলাদা করে নম্বর দিয়ে উৎসাহ দিতে হবে। এ নম্বর সার্টিফিকেটে যোগ করার ব্যবস্থাও করতে হবে। এভাবেই ফুটবলের উন্নয়ন হতে পারে।

 

ফুটবলের উন্নয়নে মিডিয়ার ভূমিকা কী হতে পারে বলে মনে করেন?

প্রথমত, মিডিয়াকে সৎ হতে হবে। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, মানুষের মধ্যে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন তৈরি করতে হবে। মেসি, রোনালদো আর নেইমারদের দেখে দেখে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেই হবে না। কীভাবে তাদের মতো হওয়া যায় তা তুলে ধরতে হবে। ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় ‘কীভাবে বড় ফুটবলার হওয়া যায়’ নামে প্রোগ্রাম চালু হতে পারে। কেবল ফুটবলার কেন, অন্য খেলাগুলোকেও প্রমোট করতে পারে মিডিয়া।

ধন্যবাদ।

সর্বশেষ খবর