আসন্ন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের জন্য আগামী ২৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মেসে অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে অধিকাংশ মেস মালিক। অন্যদিকে এই সময়ে খোলা থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও ক্লাস-পরীক্ষা চলবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি কয়েকজন শিক্ষক-অধ্যাপকের কাছে শুনলাম, শিক্ষার্থীদেরকে নাকি মেস ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি জানার পরেই সোমবার আমি মাননীয় উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাবিতে ছাত্রদের জন্য ১১টি ছাত্রীদের ৬টি মিলে মোট ১৭টি হল রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৬ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী থাকলেও হলগুলোতে মাত্র ৮,৬৫১ জন শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি ২৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে থাকতে হয় মেসে।
এতো সংখ্যাক শিক্ষার্থীকে মেস ছেড়ে চলে যেতে হবে এমন সিদ্ধান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা যদি ২৬ তারিখ মেস ছেড়ে চলে যাই তবে আবার ১ তারিখে রাজশাহী আসতে হবে। অনেক শিক্ষার্থীর বাড়িতে যাওয়া আসা করতে ২ দিনেরও বেশি সময় লাগে। আবার ১৫ আগষ্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদু-উল-আযহার ছুটি হবে। তাই প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত তাদেরকে বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিশ্বাস ম্যানশন মেসের আবদুল হান্নান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগেই পরীক্ষা চলছে। আবার সব বিভাগেই কোনো না কোনো দিন টিউটরিয়াল পরীক্ষা থাকেই। ফলে আমরা যারা মেসে থাকি তারা কী অপরাধ করছি যে ক্লাস-পরীক্ষা ছেড়ে আমাদেরকে বাড়ি চলে যেতে হবে।
জানা গেছে, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে গত ১৬ জুলাই বহিরাগতদের ভোটার এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২৭ জুলাই দিবাগত রাত ১২টার আগে বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে হবে। আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। ভোটার ব্যতীত অন্য কোনো এলাকার বাসিন্দা করপোরেশনের সীমানার ভেতরে অবস্থান নিতে পারবেন না। বহিরাগতদের ভোট এলাকা ছাড়ার নির্দেশনা ইতিমধ্যে প্রচার করার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নগর পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়ের আলম বলেন, কোনো মেস মালিককে শিক্ষার্থীদেরকে মেস ছেড়ে চলে যেতে হবে-এমন নোটিশ দিতে বলা হয়নি। প্রত্যেক থানা থেকে সংশ্লিষ্ট মেস মালিকদের জানানো হয়েছে যে, নির্বাচনের সময় মেস বর্ডারদের যেন কোনো গেস্ট না থাকে। নির্বাচনী নিরাপত্তার কথা ভেবেই গেস্ট না রাখার নির্দেশেনা দেয়া হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থীকে নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে মেস মালিকদেরর নোটিশ দিতে বলা হয়নি।
তবে মেস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঈসমাইল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনারের ওই নোটিশ দেখার পর আমি রাজশাহী নির্বাচন কমিশনার কার্যালয়ে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে জানায়, নির্বাচনের সময় ভোটার ছাড়া অন্য কেউ নির্বাচনী এলাকায় থাকতে পারবে না। তাই অনেক মেসে শিক্ষার্থীদেরকে মেস ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য নোটিশ করা হয়েছে। তবুও নির্বাচন কমিশন থেকে বিষয়টি যদি আমাদেরকে আরো ভালো করে অবহিত করা হয় তবে সেই অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নিব। মাত্র তিন-চার দিনের জন্য এতো সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভোগান্তি কাম্য নয়।’
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার