জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একাডেমিক সেশনের সময় গণনা করা হয় জুলাই-জুন মাস পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রতি বছর তাই জুলাই-জুন মাস পর্যন্ত পৃথক একটি একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়। ক্যালেন্ডারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো চিহ্নিত থাকার পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ দিন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটির দিনগুলোও চিহ্নিত থাকে। এটিকে সামনে রেখেই বিভাগগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য একাডেমিক রুটিন তৈরি করে। তৈরি হয় একাডেমিক বিভিন্ন পরিকল্পনা।শিক্ষা সফর, সেমিনার, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সময়সূচি ইত্যাদি। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এই ক্যালেন্ডার মেনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে নিজেদের সচল রাখেন। কিন্তু শিক্ষক রাজনীতির জটিলতার কারণে দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তৈরি হয়নি ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের একাডেমিক ক্যালেন্ডার। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শ্রেণির সদস্যকেই পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রণীত একাডেমিক ক্যালেন্ডারটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুন মাসের ৩০ তারিখে। সাধারণত প্রতি বছর জুলাই মাসের পূর্বেই নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্যালেন্ডার তৈরি এবং বিতরণের কাজ সম্পন্ন হয়। কিন্তু এ বছর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তৈরিই হয়নি একাডেমিক ক্যালেন্ডার। যার পেছনে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি কেন্দ্রিক জটিলতা।
জানা যায়, একাডেমিক ক্যালেন্ডারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্ষদ ১৯ সদস্য বিশিষ্ট সিন্ডিকেট কমিটির তালিকা দেয়া থাকে। আর এই তালিকায় এ বছর ৩টি পদের নাম নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের ২২(১)(এফ) ধারা অনুযায়ী রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট ক্যাটাগরিতে ২টি এবং ২২(১)(আই) অনুযায়ী ১টি সহ মোট তিনটি পদ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। গত মেয়াদে রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচনের সিনেটর হিসেবে জাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির এবং বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন মোল্লা রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই শেষ হয়েছে তাদের মেয়াদ।
এদিকে গত বছর ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচনে তারা আবারও সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু নতুন এই সিনেট থেকে কারা সিন্ডিকেট সদস্য হবেন তার জন্য এখনো নির্বাচন হয়নি। ফলে পদ দুটিতে কারা সদস্য হবেন? নাকি শূন্য থাকবে সদস্য পদ? এ নিয়ে চলছে বিতর্ক। প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, আইন অনুযায়ী এই ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেট সদস্য কারা এ বিতর্কের জন্যই ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ক্যালেন্ডার এখনো তৈরি করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, শরীফ এনামুল কবির এবং মোতাহার হোসেন মোল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাছাড়া বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের প্রশাসনের বিরোধী হিসেবেও তারা পরিচিত। জাবির আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্যেও বিভাজন তৈরি হয়েছে এই ব্যক্তিদের ঘিরেই। ফলে শিক্ষক রাজনীতিতে প্রভাবশালী এই দুই ব্যাক্তিকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারের সিন্ডিকেট সদস্য তালিকায় রাখবেন, নাকি ফেলে দেবেন তাই নিয়ে দোলাচলে বর্তমান উপাচার্যের প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম কে ক্যালেন্ডারের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, একটু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে এটি এখনো তৈরি হয়নি। দ্রুতই যাতে তৈরির কাজ শুরু হয় তার জন্য আমি আজকে (গতকাল) কথা বলবো।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা