সকাল থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) জহির রায়হান মিলনায়তন চত্বর ছিল উৎসবমুখর। বিশালাকার দুই সাউন্ড বক্সে বেজেছে প্রজাপ্রতির গান। বেলা যত বেড়েছে মিলনায়তন চত্বরে ততোই বেড়েছে অজস্র ক্ষুদে প্রজাপতির সংখ্যা। তাদের নাচ, গান আর ছোটাছুটিতে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো মিলনায়তন চত্বর। রঙিন ডানা না থাকলেও এই প্রজাপতিদের ছিল বাহারি রঙের পোশাক-টুকটুকে লাল, নীল, সবুজ, সাদা। তাদের রঙ আর উচ্ছ্বলতায় ক্রমেই ম্লান হয়ে যায় পাশেই জালের ভেতর বন্দি প্রজাপতির দলও। প্রজাপতির মতোই চঞ্চল এই ক্ষুদে শিশুরা আজ শুক্রবার এভাবেই দিনভর মাতিয়ে রাখে প্রজাপতি মেলা। তাদের ঘিরেই আবর্তিত হয় বর্ণিল এই মেলার পুরো কার্যক্রম।
তবে শিশুরা মূল আকর্ষণ হলেও বাদ যায়নি বড়রাও। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী কিংবা বৃদ্ধ প্রায় সব বয়সী মানুষই ঘুরতে আসেন মেলায়। স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের নিয়ে ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্পাসের আশেপাশের এলাকা থেকে মেলায় ঘুরতে আসেন অনেক বাবা-মা। প্রকৃতিতে প্রজাপতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নৃত্য পরিবেশন, প্রজাপতির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড়ানো, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি ও প্রকৃতি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা এসবে অংশ নিয়ে মেলাকে দিনভর উৎসবমুখর করে রাখে শিশুরা।
এছাড়াও অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য র্যালি, প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, জীবন্ত প্রজাপতি প্রদর্শন, বারোয়ারি বিতর্ক, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ এই স্লোগানকে ধারণ করে জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখার আয়োজনে ২০১০ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রজাপতি মেলা। আজ ৯ম বারের মতো অনুষ্ঠিত হয় প্রজাপতি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং প্রকৃতি নিয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক এই বর্ণিল মেলা। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম।
উদ্বোধনকালে উপাচার্য বলেন, “প্রজাপতি মেলায় যে এত লোক আসে এবং সারাদিন কাটায় এটি কিন্তু আমাদেরকে চমৎকার অনুভূতি দিয়ে যায়। আমাদের ক্যাম্পাসে অনেক ঘটনাই ঘটে সেগুলোর খবর আসে না কিন্তু প্রজাপতি মেলার খবর সবখানে ছড়িয়ে যায়। প্রজাপতি খেলার সাথী। বাচ্চারা দৌঁড়ে দৌঁড়ে প্রজাপতির পেছন পেছন যায়, রঙ দেখে। প্রজাপতির ছবি আঁকে। আর এভাবেই প্রকৃতির সাথে তাদের ভালোবাসার বন্ধন তৈরি হয়।”
মেলার আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো মনোয়ার হোসেন বলেন, “সৌন্দর্যের পাশাপাশি উপকারি প্রাণি হিসেবে প্রজাপতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতিতে প্রজাপতি কমে গেলে কৃষি এবং জলবায়ুতে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। দিন দিন অনেক প্রজাতির প্রজাপতিই হারিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতি থেকে দিন দিন কমে যাচ্ছে অনেক বন্যপ্রাণির সংখ্যা। আর এতে করে অস্তিত্বের সংকটে পড়ছে মানবজাতি। সুতরাং নিজেদের স্বার্থেই প্রজাপতি সহ প্রত্যেকটি প্রাকৃতিক উপাদান এবং প্রাণির প্রতি আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। আর এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই প্রতি বছর আমরা এই মেলার আয়োজন করছি।”
এসময় অন্যান্যের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মো. নুরুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) রহিমা কানিজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে এ বছর প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী (৪৫তম আবর্তন) ফাহমিনা সরকার বর্ষাকে ‘ইয়াং বাটারফ্লাই ইনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড’ এবং প্রজাপতি গবেষণায় সার্বিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জীবন বিকাশ কার্যক্রম নামক সংগঠনকে ‘বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড-২০১৮’ প্রদান করা হয়। মেলায় শিশু-কিশোরদের নৃত্যের একটি ভিডিও তুলে ধার হল-
বিডি প্রতিদিনি/২ নভেম্বর ২০১৮/হিমেল