দরজায় কড়া নাড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ(ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। শিক্ষার্থীদের বহুল আকাঙ্খিত এই নির্বাচনের বাকি আছে আর মাত্র পাঁচ দিন। মঙ্গলবার সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনী তফসিলে ঘোষিত সকল কাজ সম্পন্ন করলো প্রশাসন।
এদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে মঙ্গলবারও প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন কেন্দ্রীয় ও হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। রবিবার প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় নেমেছে স্বতন্ত্র ও ছাত্রসংগঠনগুলোর মনোনীত প্রার্থীরা।
সোমবার প্রত্যেক প্রার্থীকে দেওয়া হয়েছে ব্যালট নম্বর। পরে ব্যালট নম্বরসহ ব্যানার ও লিফলেট ছাপিয়েছেন প্রার্থীরা। আচরণবিধিতে রঙ্গিন পোস্টার, ব্যানার বা লিফলেট ছাপানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাদাকালো ছবি ব্যবহার করেই প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাদাকালো ছবি ও ব্যালট নম্বর সংবলিত ব্যানার ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় শোভা পাচ্ছে। হল থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের সর্বত্র প্রার্থীদের পদচারণায় নির্বাচনের আমেজ জমে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে নির্বাচনী প্রচারণায় নামে ছাত্রলীগ। সংগঠনটির (ভিপি) সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী ও সহ-সভাপতি (এজিএস) প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন মধুর ক্যান্টিন থেকে প্রচারণায় নামেন। তারা সংগঠনটির প্যানেল নিয়ে কলাভবন, কার্জন হল, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ও টিএসসি এলাকায় প্রচারণায় অংশ নেন। এছাড়াও হল সংসদসমূহে ছাত্রলীগের প্রার্থীরা প্রচারণায় নেমেছেন।
ছাত্রলীগের সার্বিক প্রচারণার বিষয়ে সংগঠনটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের প্রচারণা পুরোদমে চলছে। প্রার্থীরা লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে তাদের প্রচারণা চালাচ্ছেন । শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। আশা করি, নির্বাচনটি একটি প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক হবে এবং ছাত্রলীগ তাতে জয়লাভ করবে।
এদিকে, ছাত্রদলের প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও জিএস পদপ্রার্থী আনিছুর রহমান অনিকের নেতৃত্বে কলাভবন, কার্জন হল ও মল চত্বর এলাকায় প্রচারণা চালানো হয়। এছাড়া বিকেলে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেও প্রচারণা চালান তারা। প্রচারণার ক্ষেত্রে আবাসন সংকট, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে যান চলাচল ইত্যাদি বিষয়ের উপর জোর দিচ্ছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা প্রচারণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিকীকরণসহ নানা বিষয়কে সামনে রাখছি। আশা করি, নির্বাচনে আমরা ভালো ফলাফল উপহার দিতে পারবো।
ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুর, জিএসপ্রার্থী রাশেদ খাঁনের নেতৃত্বে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ প্যানেলের প্রচারণা সকাল থেকে শুরু হয়। সমাজকল্যাণ ইন্সটিটিউট ও লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি ইন্সটিটিউটের পাশাপাশি কলাভবন ও কার্জন হল এলাকায় ঘুরে ঘুরে নিয়মিত প্রচারণা চালান তারা। জগন্নাথ হলে প্রচারণা চালায় এই প্যানেলের প্রার্থীরা।
ওই হলের শিক্ষার্থীরা তাদের ভালো সাড়া দিয়েছেন বলেও জানান তারা। প্রচারণার সার্বিক বিষয় নিয়ে নুরুল হক নুর বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা ছিল তা এখনো কিছুটা আছে বলেও মন্তব্য করেন তিন।
বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর দুই জোট প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য যৌথ প্যানেলে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীসহ অন্যান্য প্রার্থীরা কলাভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ও অপরাজেয় বাংলা ও কার্জন হল এলাকায় প্রচারণা চালান। সকালে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করে তারা। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা প্রদক্ষিণ করে।
জোটের প্রচারণার বিষয়ে জোটের জিএস পদপ্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীর বলেন, আমরা প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রথম বর্ষ থেকেই বৈধ সিটের ব্যবস্থা, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ইত্যাদিকে বিষয়গুলোকে সামনে আনছি। বিশেষ করে মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মেয়েদের কাছ থেকেও আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি।
এছাড়াও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ(বিসিএল), বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী, স্বতন্ত্র স্বাধিকার জোট, স্বতন্ত্র জোট, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের প্রার্থীদেরও প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। কেন্দ্রীয় ও হলগুলোর স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নিজেদের হলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে ভোট প্রাথর্না করছেন তারাও। সাংবাদিকতা ছেড়ে স্বতন্ত্রভাবে ডাকসুর জিএস পদপ্রার্থী এম আর এম আসিফুর রহমানও সকাল থেকে অপরাজেয় বাংলা, বটতলা, মধুর ক্যান্টিন, ডাকসু ভবন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে প্রচারণা চালান।
আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ বামজোটের বিরুদ্ধে-
ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণায় আ্চরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ এসেছে বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর যৌথ প্যানেলের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান সনজিত চন্দ্র দাস ডাকসুর রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বরাবর এই অভিযোগ দায়ের করেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বামপন্থি প্যানেলের সহ-সভাপতি(ভিপি) প্রার্থী লিটন নন্দীর নেতৃত্বে এক ধরনের ড্রামসদৃশ বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করা হয় এবং প্যানেলের প্রচারণা চালানো হয়।
উল্লেখ্য, ডাকসু নির্বাচনের আচরণবিধি ৩(ক) ধারা অনুযায়ী, কোনো প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র জমাদান, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার বা নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো ধরনের যানবাহন, মোটরসাইকেল, রিকশা, ঘোড়ার গাড়ি, হাতি, ব্যান্ড পার্টি ইত্যাদি নিয়ে কোনোরূপ শোভাযাত্রা, শোডাউন বা মিছিল করা যাবে না।
এই অভিযোগ সম্পর্কে লিটন নন্দী বলেন, এটি একটি ভূয়া অভিযোগ। এটি কোনো ব্যান্ড পার্টি ছিল না। আমাদের নিজস্ব গানের মিছিল ছিল। একটা প্যারেড ড্রাম ছিল, যেটা আমাদেরই একজন বাজিয়েছে। বরং যারা এই অভিযোগ করেছে, তারাই বিভিন্ন সময়ে আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর