ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১১ মার্চ।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসজুড়ে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে জোরেশোরে প্রচারণা চললেও অনেক ছাত্রসংগঠনের বিরুদ্ধে নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশাসন বলছে, প্রমাণসহ অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুৃটির কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকবে। আর আচরণবিধি অনুযায়ী ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে প্রচারণা বন্ধের নিয়মের কারণে রবিবারও প্রার্থীদের বিরত থাকতে হবে প্রচারণা থেকে। তাই বৃহস্পতিবারই ছিল ক্যাম্পাসে প্রচারণা চালানোর শেষ দিন। তবে প্রার্থীরা চাইলে হলগুলোতে প্রচারণা চালাতে পারবেন।
আজ ছাত্রসংগঠনগুলোর প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পদচারণায় মূখর ছিল ক্যাম্পাস। ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল, বামপন্থি জোট ও কোটা আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদসহ অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রার্থীরা দিনভর ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও শিক্ষার্থীদের সাথে কুশল বিনিময়ের সাথে সাথে লিফলেট বিতরণ করেছেন। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে সাদা-কালো ব্যানারে ছেয়ে গেছে ক্যাম্পাসের বিশেষ বিশেষ জায়গা আর হলসমূহের প্রবেশদ্বার।
এদিকে, জোরেশোরে প্রচারণা চললেও নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ এসেছে একাধিক সংগঠনের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডাকসু নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থীদের নিয়ে মিছিল করে ছাত্রদল। এতে অংশ নেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, ঢাবি শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
তবে, ডাকসুর আচরণবিধির ৪(গ) ধারা অনুযায়ী, ‘ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটার/প্রার্থী ব্যতীত অন্য কেউ কোনোভাবেই কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচারণা চালাতে পারবেন না।’
উল্লেখ্য, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ওই চার নেতার কেউই ভোটার বা প্রার্থী নন। কিন্তু ওই মিছিলে অংশ নিয়ে তাদের ছাত্রদলের প্যানেলের পক্ষে স্লোগান দিতে এবং নির্বাচনে তাদের পক্ষে ভোট চাইতে দেখা যায়।
বিষয়টি নিয়ে ছাত্রদলের সহ-সভাপতি(ভিপি) পদপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের নিয়মানুযায়ী ছাত্রদলের নিয়মিত রাজনৈতিক কার্যক্রম। ভোটাররা ছাড়া কেউ আমাদের প্রচারণায় অংশ নেয়নি। নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছে খোদ ছাত্রলীগের প্যানেলের বিভিন্ন প্রার্থীর বিরুদ্ধে। আচরণবিধির ৩(ক) ধারা অনুযায়ী ‘কোনো প্রকার যানবাহন, মোটরসাইকেল প্রভৃতি ব্যবহার করে মিছিল বা শো-ডাউন করা নিষিদ্ধ। তবে গতকাল দুপুরে কেন্দ্রীয় সংসদে ছাত্রলীগের সদস্যপ্রার্থী রাকিবুল ইসলাম রাকিবের পক্ষে সাইকেল ও মোটর সাইকেল ব্যবহার করে শো-ডাউন দিতে দেখা যায়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন স্থাপনার দেয়ালে হ্যান্ডবিল লিফলেট লাগানো নিষেধ থাকলেও ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনসহ অনেকের লিফলেট বিভিন্ন হলের দেয়ালে লাগানো হয়েছে।
এর আগে, ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণায় চরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর যৌথ প্যানেলের বিরুদ্ধে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকালে বামপন্থি প্যানেলের সহ-সভাপতি(ভিপি) প্রার্থী লিটন নন্দীর নেতৃত্বে একটি ড্রামসদৃশ বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল এবং প্যানেলের প্রচারণা চালায় তারা। আচরণবিধি অনুযায়ী প্রচারণায় ব্যান্ড পার্টির ব্যবহার নিষেধ। পরে এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার বরাবর একটি অভিযোগও দাখিল করেন ছাত্রলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান সনজিত চন্দ্র দাস। তবে লিটন নন্দী এটা কোন ব্যান্ড পার্টি ছিল না বলে দাবি করেন।
ছাত্রসংগঠনগুলোর আচরণবিধি ভঙ্গের ব্যাপারে কথা বলতে ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা এসএম মাহফুজুর রহমানের সাথে একধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানী ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’কে বলেন, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগই যথেষ্ট নয়। পর্যাপ্ত প্রমাণ লাগবে। প্রমাণসহ অভিযোগ আসলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো লিখিত কোন অভিযোগ পায়নি বলেও জানান তিনি। স্ব-প্রণেদিত হয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কোন সুযোগ আছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উভয় ক্ষেত্রেই প্রমাণ লাগবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন