জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘শিবির’ নাটকের অবতারণা করেছে বলে অভিযোগ করেছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’।
আজ থেকে শুরু হয়েছে সংগঠনটির লাগাতার প্রশাসনিক ভবন অবরোধ কর্মসূচি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘উপাচার্য অপসারণ মঞ্চ’ তৈরি করে সেখানে এই কর্মসূচি পালন করেছে তারা। উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত এই অবরোধ কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটির মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন। অবরোধের পাশাপাশি আগামীকাল সোমবার সর্বাত্মক ধর্মঘট কর্মসূচি পালিত হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, জাবিতে চলমান সাড়ে ১৪শ' কোটি টাকার অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শাখা ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা ঈদ সেলামি দেয়ার অভিযোগ উঠার পর থেকে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে গত তিন মাস ধরে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে আসছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশের সমন্বয়ে গড়ে উঠা ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ সংগঠনটি। তারই অংশ হিসেবে গত ২২ অক্টোবর সন্ধ্যায় উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে মশাল মিছিল কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচি চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গী মোড় থেকে দুই সাবেক ছাত্রকে আটক করে প্রক্টরিয়াল টিম। দুই ছাত্রের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১তম ব্যাচের ছাত্র সাদ শরীফের বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ উল হাসান।
বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আটককৃত দুই ছাত্রের মধ্যে একজনের (সাদ শরীফ) বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। তার মোবাইল ফোন ঘেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলের সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগের প্রমাণও আমরা পেয়েছি। সেগুলো যাচাই বাছাই চলছে। কেউ যদি শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার পায়তারা করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উপাচার্য অপসারণ আন্দোলনের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সাথে সাদ শরীফের যোগাযোগ ছিল- বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন দাবির সূত্র ধরে উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা দাবি করছেন উপাচার্যের অপসারণ দাবির চলমান এই আন্দোলনে জাবিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইন্ধন রয়েছে। কিন্তু উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের এমন দাবিকে ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর ব্যানারের মুখপাত্র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘যে কোনো আন্দোলন দমাতে বা আন্দোলনের সাথে যুক্ত কাউকে দমাতে চাইলে তাকে শিবির বলা বা স্বাধীনতা বিরোধী ট্যাগ দেওয়া হলো ক্ষমতাসীনদের পুরনো অপকৌশল। আমরা বুয়েটে দেখলাম আবরার নামে ছেলেটাকে শুধু শিবির বলে হত্যা করে ফেলা হলো। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল ভারতের সাথে বাংলাদেশের করা চুক্তিগুলোকে যৌক্তিক জায়গা থেকে বিরোধিতা করেছিলো সে। আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করার জন্য শিবির ‘নাটক’ সাজানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র মোটরসাইকেলেকে যাচ্ছিলো তাকে ধরে শিবির বানানো হলো। এখন প্রাক্তন কোনো ছাত্রের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা জনের যোগাযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু এর দ্বারা প্রমাণ হয় না যে আন্দোলনের সাথে সে যুক্ত আছে। এই আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, সাংস্কৃতিক জোটসহ বাম, আওয়ামী ও বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সমন্বয়ে। এই সর্বদলীয় সংগঠনের মতামতের ভিত্তিতে আন্দোলন চলছে। কোথাকার একজনকে শিবির বলে ধরে এনে তাকে আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ঠ করে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’
রায়হান রাইন আরো বলেন, ‘তবে কার কি পরিচয় কিংবা কে শিবির করে সেটা বের হলেই প্রমাণ হয়ে যায় না যে ফারজানা ইসলাম দুর্নীতি করেননি। ফারজানা ইসলামের দুর্নীতি ঢাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে পথ বেছে নিয়েছে তা হলো শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত বিষয়।’
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম পাপ্পু বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের শিবির ট্যাগ দিয়ে প্রশাসন আবারো বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করেছে। তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন-সংগ্রামের ঐতিহ্যকে ভূলুণ্ঠিত করার পায়তারা করছে। তাদের এ পায়তারা সফল হবে না। উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন