প্রখ্যাত লেখক ও কলামিস্ট আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কারো মধ্যে এরকম কোনো জাতীয় বা আন্তর্জাতিক লক্ষ্য নেই।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে ‘ছাত্র-শিক্ষক উন্মুক্ত আলোচনা’ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আবাসিক হলগুলোতে গণরুম-গেস্টরুম নির্যাতন বন্ধ এবং প্রথম বর্ষ থেকে বৈধ সিটের দাবিতে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
উন্মুক্ত আলোচনায় শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ, আন্তর্জাতিক সর্ম্পক বিভাগের ড. তানজীনউদ্দীন খান প্রমুখ। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক, সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ আরও অনেক।
অনুষ্ঠানে আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় লক্ষ্যের মধ্যে থাকতে পারে, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলা। আর আন্তর্জাতিক লক্ষ্যের মধ্যে থাকবে, সব জাতি ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে উন্নত বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলা। বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপক প্রশ্ন তোলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এরকম কোনো লক্ষ্য না থাকার ফলে শুধু লেখাপড়া কেন, বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া, কোথাও একটা চাকরি পাওয়া, মেধাবীরা দেশের বাহিরে চলে যাওয়া, এসব লক্ষ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কি ভালো চলতে পারে? এরকম লক্ষ্য নিয়ে হলগুলোতে টর্চার সেল কীভাবে বন্ধ করা যাবে? কত দিনের জন্য বন্ধ করা যাবে?
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলোর দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, সব সমস্যার সমাধান পর্যায়ক্রমে করতে হবে। এজন্য দলমত নির্বিশেষে সকলের সদিচ্ছা, দূরদর্শিতা এবং ঐক্যমত্য দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-শিক্ষকের উপলদ্ধি হওয়া দরকার যে বিশ্ববিদ্যালয়কে পর্যায়ক্রমে উন্নত করা দরকার। এজন্য একটি অগ্রযাত্রিক দল প্রয়োজন যারা উন্নত নৈতিক শক্তি ও জ্ঞান দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে জাতীয়তা ও সৃষ্টিশীলতার নীতি অবলম্বন করতে হবে। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করতে হবে। এই নীতিও এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। সমস্যাকে সাময়িক মনে করে এর সমাধান করা যাবে না। সমস্যা সমাধানের জন্য দূরদর্শিতা ও চিন্তাশীলতা প্রয়োজন।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমরা সবাই, ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, শিবিরের কথা বলি। কিন্তু আমাদের হল প্রশাসন নিয়ে কথা বলতে হবে। হল প্রাধ্যক্ষ এবং হাউস টিউটররা নানা রকম সুবিধা পান, তাহলে কেন তারা ছাত্রদের স্বার্থ দেখবেন না?
তিনি আরও বলেন, হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি অসহায় থাকে। তাই হলে আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর এই সিট ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল না, দেবে হল প্রশাসন। অনিয়মিত ছাত্রদের বের করে দিতে হবে। হলগুলো ডিজিটালাইজ করতে হবে। সত্যিকার অর্থে হলে গেইট ও সিসিটিভি থাকতে হবে।
অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, আমরা কোনোভাবেই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চাই না। কেননা আমাদের ছাত্ররাজনীতির একটা গৌরবময় ঐতিহ্য আছে। ছাত্ররাজনীতির নামে হলে হলে টর্চার সেল, শিক্ষার্থী নির্যাতন, দখলদারিত্ব এগুলো বন্ধ করতে হবে।
ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদেরই কথা বলতে হবে। ডাকসু বা শিক্ষকদের কয়েকজন প্রতিবাদ করলেও কোনো পরিবর্তন হবে না। কোনো শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হলে তাকেই আগে কথা বলতে হবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন