সমাজে বিদ্যমান নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে তা থেকে উত্তরণের পথে এগিয়ে যেতে শুরু হচ্ছে শীতকালীন মৌসুমী পথনাটক প্রদর্শনী। বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের আয়োজনে সারাদেশে পথনাটককে ছড়িয়ে দিতে শুরু হয়েছে এই আয়োজন।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সড়কদ্বীপে মাসব্যাপী এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, বিশিষ্ট নাট্যকার মামুনুর রশিদ প্রমুখ। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ গিয়াস। সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা।
এসময় মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, পথনাটক অসাধারণ একটা ব্যাপার। ২৮ বছর ধরে দেশের নানা সংকটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে পথনাটক। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মাঠ পর্যায়ে পথনাটক ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলো। আন্দোলন শেষ হওয়ার পর সবাই মনে করেছিলো পথনাটকের প্রয়োজন বুঝি শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু না পথনাটকের প্রয়োজন সবসময় রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণে পথনাটক কাজ করে যাবে এই প্রত্যাশা রাখি।
আমরা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি মন্তব্য করে তিনি বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তথ্য। তথ্য প্রযুক্তির কারণে এই তথ্য আমরা অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছি। পৃথিবীতে যাদের হাতে তথ্য ও কৃত্তিম বৃদ্ধিমত্তা আছে তারা সবকিছু পবিবর্তন করে ফেলতে পারে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ সম্পর্কে তিনি বলেন, পৃথিবী এগিয়ে গেলে আমরা বসে থাকতে পারি না। আমাদের মানুষ হতে হবে। মানুষ হওয়ার সবচেয়ে বড় উপায় বড় পড়া। আমাদের বই পড়তে হবে। পৃথিবীকে মানবিক করার প্রক্রিয়া কিন্তু ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।
গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘মৌসুমী পথনাটক প্রদর্শনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক, দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার বার্তা দিতে চাই। আমাদের দেশ অর্থনৈতিক দিকে থেকে এগিয়ে গেলেও আমরা চিন্তা চেতনার দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছি। আর এই চিন্তাচেতনা উর্ধ্বগামী করতে পারে সাংস্কৃতিক জাগরণ। সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে মননশীলতা বৃদ্ধি পাবে এই আশা রাখছি।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে পথনাটক প্রদর্শিত হয়। চারটি নাট্যদল এই পথনাটক পরিবেশন করেন। তা হল- ইসতিয়াক হোসেনের নির্দেশনায় ও আরণ্যক নাট্যদলের পরিবেশনায় ‘জল ও জননীর গল্প’, শেখ ফিরোজ আহমেদ বাবুর নির্দেশনায় ভিশন থিয়েটারের পরিবেশনায় ‘প্রতিপক্ষ রচনা’, কাজল মজুমদারের নির্দেশনায় মৈত্রী থিয়েটারের পরিবেশনায় ‘ত্যাজ রচনা’ ও ইকরামুল হাসান শাকিলের রচনায় পদাতিক নাট্যসংসদের পরিবেশনায় ‘নুরু মিয়ার কিচ্ছা’।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল