উচ্চশিক্ষায় বিদেশমুখিতা কমাতে এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে দেশেই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০২ সালে যাত্রা শুরু করে নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। ইতিমধ্যেই সাফল্যের ১৮ বছর পার করেছে এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
রাজধানী ঢাকার এয়ারপোর্ট সংলগ্ন আশকোনায় সুবিশাল ভবন নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর স্থায়ী ক্যাম্পাস। এই ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- ঢাকার আশেপাশে জেলা গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাংগাইল, বি.বাড়িয়া থেকে খুব সহজে যাতায়াত করতে পারবে শিক্ষার্থীরা।
বিমান, রেল, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং আন্তজেলা বাস পরিবহনের বৃহত্তর জংশন হচ্ছে এয়ারপোর্ট স্টেশন। দেশের যে কোন জায়গা থেকে সকল ধরনের পরিবহনের মাধ্যমে এখানে পৌঁছা যায় সহজেই। এই এয়ারপোর্ট স্টেশনের সন্নিকটেই অবস্থিত নর্দান ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস।
অনেক অভিভাবক চিন্তায় থাকেন ছেলেমেয়েদের ঢাকা পড়ালেখা করতে পাঠালে কোথায় থাকবে? কীভাবে থাকবে? আশ-পাশের জেলা আগত শিক্ষার্থীদের আলাদা করে হোস্টেলে থাকার দরকার হবে না, ক্লাস শেষে দিনে দিনেই বাড়ি ফিরে যেতে পারবে।
এয়ারপোর্ট বা কাওলা বাসস্টেশন থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে এই ইউনিভার্সিটির মনোরম ক্যাম্পাস। ৮ তলা ভবনের এই স্থায়ী ক্যাম্পাস দেখে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। এই ভবনের গঠনশৈলী এতটাই আধুনিক যে, সব দিক থেকেই আলো বাতাস ভবনের ভেতর প্রবেশ করতে পারে। ভবনটির তিন দিকেই রয়েছে রাস্তা। ভবনের রাস্তার পাশেই রয়েছে সুন্দর মসজিদ। শিক্ষার্থীদের খেলার উৎসব চলে দিনভর।
প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ও মনোমুগ্ধকর এই ক্যাম্পাস। চারপাশে সবুজে ঘেরা, রয়েছে খোলা-মেলা জায়গা ও খেলার মাঠ। মূল ভবন দক্ষিণামুখী হওয়াতে প্রতিনিয়ত দখিনা বাতাস প্রবহমান এই ক্যাম্পাসে। রাজধানী বুকে লাল কৃষ্ণচূড়ার শামিয়ানা আর শুভ্র কাশফুলের দোলা বসন্ত ও হেমন্ত ঋতুতে এখানে দৃশ্যমান।
স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ এবং অন্যান্য সুবিধা
কেন্দ্রিয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক মাল্টিমিডিয়া সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক মানের প্রায় একশত স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ। পড়ালেখার ফাঁকে গ্রুপ স্টাডি ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য পর্যাপ্ত বইসমৃদ্ধ লাইব্রেরি ও স্টাডিরুম। নিচ তলায় আছে প্রার্থনাগার, শারীরিক অনুশীলনের জন্য রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক মানের জিমনেসিয়াম ও ইনডোর খেলার রুম। আছে ১২০০ আসনবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানের অডিটরিয়াম। ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, আইসি তৈরির জন্য রয়েছে ভিএলএসআই ল্যাব, কম্পিউটার শিক্ষার্থীদের জন্য আছে অ্যাডভান্সড ইন্টেলিজেন্ট মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সিস্টেমস বা এইমস ল্যাব। এছাড়াও আছে সার্কিট ল্যাব, ফিজিক্স ল্যাব, কেমিস্ট্রি ল্যাব, প্রোগামিং ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব, কমিউনিকেশন ল্যাব, ডিজিটাল ডিজাইন ল্যাব, মাইক্রোপ্রসেসর ল্যাব ও ইলেকট্রনিকস ল্যাবসহ প্রায় ৩১টি ল্যাব।
প্রথম পথযাত্রা
২০০২ সালের অক্টোবরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। বর্তমানে এখানে প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়ন করছে। গত ১৮ বছরে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন বিষয়ে পাস করে সাফল্য দেখাচ্ছেন কর্মজীবনে। সব কিছুর পেছনে কর্তৃপক্ষের রয়েছে শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোর চেষ্টা। নিয়মিত ও খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ৩০০ জন।
বিভাগসমূহ
ব্যবসায় প্রশাসন, সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, হিউম্যানিটিস এন্ড স্যোসাল সায়েন্স, আইন এবং হেলথ সায়েন্সসহ মোট পাঁচটি অনুষদে দশটি বিভাগে ১৬টি বিষয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনা করে থাকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অব আইটি প্রফেশনালস বা সিডিআইপির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে গ্রাফিকস ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, গেম ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অ্যাকাউন্টিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ডিজিটাল মার্কেটিং ও প্রফেশনাল জাভা প্রশিক্ষণসহ ১০টি কোর্স করার সুযোগ।
শক্তিশালী ও আধুনিক লাইব্রেরি
শুরু থেকেই এনইউবি শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রন্থাগার সেবা দেয়ার ওপর জোর দিয়ে আসছে। সপ্তাহে সাত দিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে গ্রন্থাগার। দৈনিক সংবাদপত্র ও রেফারেন্স বই পড়ার জন্য রয়েছে আলাদা কর্নার। শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের জন্য গ্রন্থাগারে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের ২০টি দৈনিক পত্রিকা রাখা হয় নিয়মিত।
গ্রন্থাগারে রয়েছে লক্ষাধিক বই এবং জার্নাল-ম্যাগাজিন আছে প্রায় ৫ হাজার। এছাড়া গ্রন্থাগারে ব্যবহারকারীদের সহায়ক সেবা দেয়ার জন্য রয়েছে গবেষণা প্রতিবেদন, বিশ্বকোষ, অভিধান, হ্যান্ডবুক, ম্যানুয়েল ও এনজিও প্রকাশনা। গ্রন্থাগারে রয়েছে ইলেকট্রনিক সম্পদের (ই-রিসোর্স) বিশাল সম্ভার। ব্যবহারকারীরা ই-বুক, ই-জার্নাল ও ই-ম্যাগাজিন পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারেন। রয়েছে কয়েক হাজার ই-বুক ও ই-জার্নাল। গ্রন্থাগ্রারে ব্যবহারকারীদের জন্য রয়েছে ওয়াইফাই সংযোগসহ কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ। শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারে না এসেও যেকোনো বইয়ের শিরোনাম, লেখক, কল নম্বর, কি-ওয়ার্ড, প্রকাশক ও প্রকাশকাল অনুযায়ী খুঁজতে পারেন ই-লাইব্রেরির সুবাদে। গ্রন্থাগারে শিক্ষকদের জন্য রয়েছে পৃথক বসার ব্যবস্থা।
সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ও ক্লাব এবং ফোরাম
শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ও বাজার উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে এনইউবিতে ২০টি ক্লাব ও ১০টি ফোরাম রয়েছে। এসব ক্লাব ও ফোরাম বছরজুড়েই জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। এছড়াও পিঠা উৎসব, বসন্তবরণ, চৈত্র সংক্রান্তি, শিক্ষামেলা জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো বিশেষ জমকালো আয়োজনে পালিত হয় এখানে। উচ্চশিক্ষার নিরন্তন পরিবেশ থাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা কার্যক্রম সুন্দর ও সুচারূভাবে সম্পন্ন করতে পারে। অরাজনৈতিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ায় নেই কোন হানাহানি, নেই ক্লাস বন্ধ হওয়ার চিন্তা, নেই সেশন জটের ভয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরার জন্য রয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্র’। যেখানে রয়েছে অসংখ্যা বই ও নথি। এই গবেষণা কেন্দ্র থেকে অনেক অজানা তথ্য শিক্ষার্থীরা সংগ্রহ করতে পারে এবং ফেলোশিপের জন্য আবেদন করে তারা।
শিক্ষাবৃত্তি
নর্দান ইউনিভার্সিটিতে প্রতি বছর তিনবার অর্থাৎ স্প্রিং, ফল ও সামার সেমিস্টারে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে ১০% থেকে ১০০% পর্যন্ত ছাড়। প্রতি সেমিস্টারের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা বৃত্তি দেয়া হয়। রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় স্পেশাল বৃত্তির ব্যবস্থা।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা