৫৪ বছর পেরিয়ে গতকাল ১৮ নভেম্বর ৫৫ তে পা রেখেছে দেশের অন্যতম প্রচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে জীবন দিয়েছেন অনেকেই। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞ অনেক শিক্ষক। তাদেরই একজন পদার্থবিদ্যা বিভাগের সাবেক প্রবীণ অধ্যাপক প্রফেসর ড. অরুণ কুমার দেব।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি বেহাত হয়ে আসছে। ভূমি দস্যুরা দখলে নিয়েছিল শত শত একর জায়গা। সেই ভূমি পুনরায় উদ্ধার করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ প্রকল্প অনুমোদন দেন। সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে হামলা মামলার শিকার হয়েছেন সীমানা প্রচীর নির্মাণ কমিটির সভাপতি প্রফেসর অরুণ কুমার। ১৭'শ একরের বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রায় ২৩'শ একরের বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করতে অরুন কুমার দেবের অবদান অনস্বীকার্য।
এ ভূমি উদ্ধার করতে গিয়ে তিনি পাড়ি দিয়েছেন গহীন জঙ্গল। কখনো কখনো পাড়ি দিয়েছেন বড় বড় পাহাড়। হঠাৎ একদিন গহীন জঙ্গলে সীমানা নির্ধারণ করতে গিয়ে দুই পায়ে কাটা বিঁধে প্রফেসর অরুন কুমারের। তার পরেও কাজ চালিয়ে যান তিনি। পরে বয়সের ভারে সেই কাটাযুক্ত দুই পায়ে পচন ধরে। সে পচনে তার দুই পা হারাতে হয়েছে। এখন বিছানায় কাতরাচ্ছেন তিনি। কেউই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। উপরন্তু দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখা হয়েছিল তার পেনশন। সেজন্যই টাকার অভাবে সুচিকিৎসা করাতে না পেরে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে তাকে। দেশের বাইরে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করলে সেটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, চবি ক্যাম্পাসের ভূমি দখল রোধ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৫০ বছর পর ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে দীর্ঘ ১৩ কিলোমিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. ইখতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
সেসময় সীমানা প্রাচীর নির্মাণের দায়িত্ব পান ড. অরুণ কুমার দেব। সফলভাবে সে দায়িত্ব পালন করায় ৬৫ ভাগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছিল। পরে ২০১৯ সালের জুন মাসে প্রফেসর ড. অরুণ কুমার দেব শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসরে যান।
সীমানা প্রাচীর নির্মাণকালে পায়ে কাঁটা বিঁধলে দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে থাকার পর শেষ পর্যন্ত তিনটি আঙ্গুল কেটে ফেলতে হয় তার। তবে বিশ্ববিদ্যায়ের এক স্টেট কর্মকর্তার অভিযোগের ভিত্তিতে প্রবীণ এ শিক্ষকের পেনশন দীর্ঘ এক বছর বন্ধ রাখা হয়। ফলে, টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা না করাতে পেরে পর্যায়ক্রমে দু'টি পা'ই কেটে ফেলতে হয় তার।
বর্তমানে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে যেতে বলা হলেও পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে যেতে পারছেন না তিনি।
এ অবস্থায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সময়মত পেনশন না দেওয়ায় যে ক্ষতির সম্মুখীন তিনি হয়েছেন, তার ক্ষতিপূরণ চেয়ে গত ২০ অক্টোবর রেজিস্ট্রার বরাবর একটি আবেদন পত্র জমা দেন ড. অরুণ কুমার দেব। তবে তা গৃহীত হয়নি বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান বলেন, এ ধরনের কোনো নিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রফেসর ড. অরুণ কুমার দেব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সঠিক সময়ে আমাকে আমার পেনশনের টাকা দিয়ে দিতো, তাহলে হয়তো আজ আমাকে পঙ্গু হয়ে বিছানায় কাঁতরাতে হতো না। আমি তো নিজের জন্য কিছু করিনি। জীবনের সবটুকু দিয়েই ভূমি দস্যুদের হাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষা করতে চেয়েছি। সবচেয়ে বেশি অবাক লাগে, যে ভূমি দস্যুরদের সাথে যুদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা দখল মুক্ত করেছি, সে ভূমি দস্যু খ্যাত জাকিরের অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার পেনশন বন্ধ রেখেছিল।
তিনি আরও বলেন, আজ আমি খুব অসহায়। জীবনে কখনো কোন বিষয়ে ছোট হইনি। জীবনের শেষ বয়সে এসে বর্তমান উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করছে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া তো দূরের কথা উল্টো কথা শুনতে হচ্ছে। আমার আকুতি, বাকি জীবনটা যাতে সুন্দর করে পার করতে পারি। সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা