২ জুলাই, ২০২২ ২০:৪৫

রাবির আবাসিক হলে শ্বাসরুদ্ধকর এক রাত

মর্তুজা নুর, রাবি

রাবির আবাসিক হলে শ্বাসরুদ্ধকর এক রাত

রুমে রুমে অভিযান চালিয়ে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নামিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের সিটে তুলতে শ্বাসরুদ্ধকর একরাত কাটাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার রাতভর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে এ অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে হলেই রাত্রিযাপন করেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্ব ঘোষণা দিয়ে হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নামিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের তুলে দিতে শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে অভিযানে নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল প্রশাসন। রাত সাড়ে ৮টা থেকে হলের রুমে রুমে অভিযান চালানো শুরু করেন তারা।

বিভিন্ন ধাপে হওয়া এ অভিযান চলে ভোররাত পর্যন্ত। অভিযান চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল প্রশাসন ও ছাত্রলীগের মধ্যে চলে দফায় দফায় বৈঠক। ফলে হলের অনাবাসিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নামিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের সিটে তুলতে বেগ পেতে হয় প্রশাসনকে। তবে শেষ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ১৮ জন আবাসিক শিক্ষার্থীকে হলে তুলতে সক্ষম হয়েছেন তারা।

হল সূত্রে জানা যায়, করোনার দীর্ঘ ছুটিতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ৯৪টি আসন খালি থাকার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের কাছে আবেদনপত্র আহ্বান করে হল প্রশাসন। পরে ভাইভার মাধ্যমে একাডেমিক ফলাফলসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে ৬৬ জন শিক্ষার্থীকে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়। যারমধ্যে সব মিলে ৪০ জন সিটে উঠলেও বাকি ৫৪টি সিট রয়েছে অনাবাসিকদের দখলে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলকে অনাবাসিক শিক্ষার্থী মুক্ত করার অভিযানে নামলে শুক্রবার বিকালে প্রাধ্যক্ষ অফিসের সামনে কিছু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেখা যায়। এ সময় হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, প্রাধ্যক্ষ হল থেকে ছাত্রলীগ নামিয়ে বিএনপি-জামায়াত এজেন্ডা প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন। তিনি সিট থেকে ছাত্রলীগ নামানোর মিশনে নেমেছেন। কিন্তু তা হতে দেয়া হবে না। হল থেকে কোনো ছাত্রলীগের নেতাকর্মী নামাতে হলে, আগে আমাকে এই হল থেকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগকে নামাতে হবে। 

তবে রাত ৯টার দিকে রুমে রুমে অভিযান চালিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের তোলার সময় ছাত্রলীগের তেমন কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি। ফলে প্রায় সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্লকে অভিযান চালিয়ে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নামিয়ে সেই সিটে আবাসিক শিক্ষার্থীদের তোলা হয়। কিছু রুমে তালা দেয়া থাকায় কিছু সময় অভিযান বন্ধ রেখে সেই শিক্ষার্থীদের ডাকা হয়। তবে তাদের সাড়া না পেলে তালা ভেঙে আবাসিক শিক্ষার্থীদের উঠানোর কথা জানান প্রাধ্যক্ষ।

কিন্তু রাত প্রায় ১১টার দিকে হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু আসলে অবস্থা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। ফের দফায় দফায় বৈঠক বসে। যা চলতে থাকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত। এর মধ্যে ছাত্রলীগের চাপে বরাদ্দ কক্ষে তুলেও ফের কিছু শিক্ষার্থীকে নামিয়ে ভিন্ন কক্ষে তুলতে বাধ্য হয় হল প্রশাসন। তবে শেষ পর্যন্ত ১৮ জন আবাসিক শিক্ষার্থীকে সিটে তুলতে সক্ষম হয়েছে প্রশাসন। 

প্রাধ্যক্ষের হস্তক্ষেপে আবাসিক শিক্ষার্থীদের সিটে তুলে দেয়া হলেও ছাত্রলীগের চাপের মুখে কয়েক ঘণ্টা পরেই দুই জনকে সিট থেকে নামিয়ে আনে হল প্রশাসন। প্রাধ্যক্ষ কক্ষে চলে দফায় দফায় বৈঠক। রাত গভীর হয়, কিন্তু সমাধান আর হয় না। ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলামকে প্রথম ব্লকের ১৪৫ নম্বর কক্ষ থেকে নামিয়ে তৃতীয় ব্লকের ৪২১ নম্বর কক্ষে উঠানো হয়। ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষার্থী স্বাধীন আহমেদকে ২৫৪ নম্বর কক্ষ থেকে ১৫৬ নম্বর কক্ষে উঠানো হয়। 

জানা গেছে, ইনফরমেশন সাইন্স এন্ড লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ ইসলামকে ৩৬০ নম্বর কক্ষে তুলে দেয়া হলেও সেই কক্ষ থেকে নামেনি ২০১৯-২০ সেশনের অনাবাসিক এক ছাত্রলীগ কর্মী। একই সিটে ভাগাভাগি করে থাকতে হচ্ছে তাদের। একই ঘটনা ঘটেছে একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থীর সিটে। তাছাড়া সিট না পেয়ে পুলিশ থাকার কক্ষে চারজনকে উঠানো হয়েছে। তাই এমন অবস্থায় সিটে অবস্থান করা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে রাত্রিযাপন করে আবাসিক শিক্ষার্থীদের সিটে তুলে দেয়ায় প্রশাসনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বৈধভাবে সিটে উঠতে পেরে উচ্ছ্বসিত তারা। 

অভিযান শেষে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সিট কেন্দ্রিক সমস্যাটা হলের সার্বিক কাজকে ব্যাহত করছে। যার জন্য হলের অন্য উন্নয়ন মূলক কাজে মনোযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই অনাবাসিক মুক্ত হল নিশ্চিত করে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার্থে কাজ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ আমরা চাই, বৈধভাবে আবাসিক শিক্ষার্থীরাই হলে থাকুক। তাই এই রাত জেগে এই কার্যক্রম। যাহোক অবশেষে ১৮ জন আবাসিক শিক্ষার্থীকে সিটে তোলা হয়েছে। যার মাধ্যমে একটি শুভ সূচনা হল।

সিটে তোলা শিক্ষার্থীদের শঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ বলেন, যাদের সিটে তোলা হয়েছে, তারা সেই সিটে শেষ পর্যন্ত থাকবে। যদি কেউ বিশৃঙ্খলা করে, তবে প্রশাসনকে অবহিত করার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমনকি কোনো আবাসিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে তাকে হল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর