বহিরাগত প্রবেশে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় এলাকাবাসীদের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত তিনজন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১৬ জুন) বিকাল সাড়ে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত দুইজন প্রবেশ করতে চায়। বহিরাগতদের আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে নিরাপত্তারক্ষীরা প্রথমে তাকে ক্যাম্পাসের ভিতর প্রবেশে বাধা দিলেও পরে ঢুকতে দেয়। কিছুক্ষণ ঘুরে এসে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার সময় ওই বহিরাগতরা আবার প্রধান ফটকের নিরাপত্তারক্ষীদের সাথে বাক বিতণ্ডায় জড়ায়। এ সময় উপস্থিত কিছু শিক্ষার্থী ও শাবি ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথেও তর্কে জড়ান তারা। এ সময় বহিরাগত দুইজন ছাত্রলীগ কর্মীদের দেখে নেবে হুমকি দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনার আধঘণ্টার মাঝে প্রায় শ’খানেক বহিরাগত ও এলাকাবাসী মেইন ফটকে জড়ো হয়।
অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগেরও শতাধিক ছেলে একই জায়গায় এসে উপস্থিত হলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় উভয়পক্ষ ইটপাটকেল ছুড়ে ও লাঠি রড নিয়ে ধাওয়া করে। এলাকাবাসীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন দোকানপাট ভাঙচুর করে।
ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান চৌধুরী, সহকারী প্রক্টর, শিক্ষার্থী, এলাকাবাসীসহ ৩০ জন আহত হয়।
এদিকে, স্থানীয় যুবলীগ নেতা দুলাল মিয়ার নির্দেশে বহিরাগত ও এলাকাবাসীদের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, কয়েক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে স্থানীয় যুবলীগ নেতা দুলাল মিয়া তার অফিস বসিয়েছেন। এর পর থেকে দুলাল ও তার কর্মীরা বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদেরকে ইভটিজিং ও যৌন হয়রানি করে আসছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে তুচ্ছ ঘটনায় ঝামেলা করেছেন। আজকেও দুলালের নির্দেশেই তার কর্মীরা এ ঘটনাকে বড় করেছেন।
এ বিষয়ে দুলালের সাথে কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি সাড়া দেননি।
অপরদিকে দুলালের গাড়ি ও তার অফিস ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকর্মীদের বিরুদ্ধে।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে শাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের কার্যালয়ের সামনেই যায়নি। ভাঙা তো প্রশ্নই আসে না। তাদের গাড়ি ও কার্যালয় তারা ভাঙচুর করছে, শিক্ষার্থীরা কেউ ভাঙচুর করেনি।’
সার্বিক ব্যাপারে প্রক্টর অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে রয়েছে। আমরা পরবর্তীতে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে আলোচনা করে এর সমাধান করবো।’
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ রানা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশে বাধা দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। এই বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সাথে একপর্যায়ে বাকবিতণ্ডায় জড়ান শিক্ষার্থীরা। এর এক পর্যায়ে তারা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় জড়ান। এখন এখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।’
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত