অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (কুয়েট) সব শিক্ষা কার্যক্রম ১৭ জুলাই থেকে বন্ধ রয়েছে।
ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে খুবি ও কুয়েটের জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ আছে। এ অবস্থায় কবে ক্যাম্পাস খুলবে এবং পরীক্ষা কবে অনুষ্ঠিত হবে, এ নিয়ে শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা। তারা সেশনজটের আশঙ্কা করছেন।
দুই বিশ্ববিদ্যালয়েরই সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনে খুলনার রাজপথও উত্তাল ছিল। তবে খুলনায় শিক্ষার্থীরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেন। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে মনে করছেন তারা। এ কারণে তারা ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবি নিয়ে তারা নগরীর প্রবেশপথ জিরো পয়েন্টসহ বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন করেছেন। কোনো সহিংসতা কিংবা সংঘাতে তারা জড়াননি। দেশের একমাত্র রাজনীতিমুক্ত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি)। এটি দক্ষিণবঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এতে নেই র্যাগিং ও সেশনজট।
তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মলগ্ন থেকে অভ্যন্তরীণ ছাত্র কোন্দলের মুখে অচলাবস্থায় পড়তে হয়নি খুবিকে। নোংরা রাজনীতির ছোবলে ক্যাম্পাসে কখনো রক্তের দাগ লাগেনি। অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যথাসময়ে ক্লাস, পরীক্ষা এবং ফল প্রকাশিত হয়।
কিন্তু অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা ভীষণ চিন্তায় পড়েছেন। তারা আরও বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারের নির্দেশনায় বন্ধ করা হয়েছিল। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে কিছুটা। সময় এসেছে শান্তিপ্রিয় খুবি ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার।
আজ রবিবার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দেশের মধ্যে কোনো আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় নয়। ইউজিসির নির্দেশে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইউজিসির নির্দেশনার বাইরে গিয়ে আমাদের এককভাবে কোনো কাজ করার সুযোগ নেই।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আবু তালহাও ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শঙ্কায় রয়েছেন। তিনি বলেন, আর কিছুদিন পরই স্নাতক শেষ হয়ে যাবে, তারপর চাকরিতে প্রবেশ করব, পরিবারের দায়িত্ব নেব, এমন কত স্বপ্ন ছিল। কিন্তু চলমান পরিস্থিতি সেই স্বপ্নের পথে দেয়াল হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন ক্যাম্পাস বন্ধ, পরীক্ষা স্থগিত। কবে পরীক্ষা হবে আর কবে স্নাতক শেষ হবে, সেই চিন্তায় আছি। আমাদের কুয়েট ক্যাম্পাস খুলনা শহর থেকে বেশ দূরে অবস্থিত, এখানে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবুও ক্যাম্পাস বন্ধ। আমরা হলে ফিরতে পারছি না। এতে করে আমাদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকা, পরীক্ষা না হওয়ায় আমাদের স্নাতক শেষ করতে দেরি হচ্ছে, চাকরির বাজারে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে যেতে চান, তাদেরও বিলম্ব হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়া একটিই, ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে আবারও শুরু হোক।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহমুদুল আলম বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণস্পন্দন শিক্ষার্থীরা। আমরা আশা করি, সব দিক বিবেচনা করে শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে, নিয়মিত একাডেমিক কার্যক্রম চালু হবে এবং শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিরাপদভাবে বিচরণ করবে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ