উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নেই বিএনপি। এর ফলে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা সহজেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারতেন। তবে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীদের জন্য তা আর হচ্ছে না। সিলেটের অন্তত ৮টি উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের অস্বস্থির মধ্যে রেখেছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এসব বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলীয় কোনো ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফলে দলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে প্রার্থী হওয়া নেতারা সহজেই ‘পার পাচ্ছেন’ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় গেল বছর নির্বাচন হওয়ায় এবার এটিতে ভোট হচ্ছে না। বাকি ১২টি জেলার মধ্যে ৮টিতেই আওয়ামী লীগের এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে।
সিলেট সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ। তবে তার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা নূরে আলম সিরাজী। দক্ষিণ সুরমায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবু জাহিদ ফের পেয়েছেন দলীয় মনোনয়ন। তার অস্বস্তির কারণ হয়ে মাঠে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ময়নুল ইসলাম।
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় নৌকার প্রার্থী লিয়াকত আলী। তবে তাকে অস্বস্তিতে রেখেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামাল আহমদ। গোয়াইনঘাট উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন গোলাম কিবরিয়া হেলাল। তাকে চ্যালেঞ্জ করে প্রার্থী হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা গোলাপ মিয়া।
কানাইঘাট উপজেলায় নৌকার প্রার্থী আব্দুল মোমিন চৌধুরী। এখানে বিদ্রোহী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমদ পলাশ ও আবুল খয়ের চৌধুরী। কোম্পানীগঞ্জে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে বিপাকে ফেলেছেন দলের একাধিক নেতা। তাদের মধ্যে আছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বাছির, তার ছেলে পশ্চিম ইসলামপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা আপ্তাব আলী, ইয়াকুব আলী, শামসুল ইসলাম।
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মুজিবুর রহমান জকনকে। তার বিপক্ষে দলের বিদ্রোহী হিসেবে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম। বিয়ানীবাজার উপজেলায় নৌকার প্রার্থী উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান খানকে চ্যালেঞ্জ করে মাঠে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য শামীম আহমদ ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক আবুল কাশেম পল্লব।
বাকি উপজেলাগুলোর মধ্যে বিশ্বনাথে এস এম নুনু মিয়া, বালাগঞ্জে মোস্তাকুর রহমান মফুর, জকিগঞ্জে লোকমান আহমদ চৌধুরী ও গোলাপগঞ্জে ইকবাল আহমদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সিলেটে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে শনিবার রাত পর্যন্ত কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। দলের পদ-পদবীতে বহাল তরিয়তে থেকেই তারা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে গেছেন। আগামীকাল সোমবার ভোট গ্রহণের আগের দিন, আজ রবিবার এসব প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, সে ইঙ্গিতও মিলেনি আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে।
তবে শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেছেন, ‘যে বা যারা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তাদের ক্ষমা নেই। সবকিছু দলের শীর্ষ নেতাদের মনিটরিংয়ে ধরা পড়ছে। শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের ক্ষমা নেই।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
তবে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, এবার নির্বাচনে বিএনপি না আসায় ভোটের মাঠে উৎসবের আমেজ এমনিতেই কম। এরকম অবস্থায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ভোটে কিছুটা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাব এসেছে, যার ফলে ভোট প্রদানের হার কিছুটা বাড়বে। এ প্রেক্ষাপটে দলীয় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে করেনি আওয়ামী লীগ।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন