সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মতিউর রহমানের যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা উপলক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত ‘মধ্যাহ্নভোজকে’ দলের একটি পক্ষ জেলা সংগঠনের ‘কার্যকরী কমিটির সভা’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও প্রচার প্রচারণা চালানোর পর ‘আকস্মিক এই ঢাকা বৈঠক’ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
একই সভাকে কেন্দ্র করে জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া না দেওয়া নিয়েও পালটাপাল্টি বিতর্ক চলছে দুই সহসভাপতি নূরুল হুদা মুকুট ও মুহিবুর রহমান মানিকের সমর্থকদের মাঝে।
সভায় জেলার সাম্প্রতিক সময়ের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তার অনুপস্থিতিতে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুহিবুর রহমান মানিককে এ বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে বলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান। তিনি বলেন, তার অনুপস্থিতিতে দল গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলবে।
জেলা সভাপতির দেওয়া ওই দুটি নির্দেশনাকে নিজেদের মতো প্রচার করছেন মুকুট ও মানিক সমর্থকরা।
বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ’ এর বিষয়টিকে ‘মানিককে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি’র দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে অভিননন্দন জানাচ্ছেন সংসদ সদস্য মানিক অনুসারীরা।
আর মুকুট জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি হওয়ায় ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনিই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি’- এমটাই দাবি মুকট অনুসারীদের।
শনিবার বেলা ১টায় রাজধানীতে ‘জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে’ উল্লেখ করে সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান জেলা কমিটির দপ্তর সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী উজ্জ্বল ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন রশীদ লাভলু। এই দুই নেতা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবিরের অনুসারী। জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মুকুট-ইমনের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের।
'কার্যকরী কমিটির সভা হিসেবে’ উল্লেখ করা ‘মধ্যহ্নভোজে’ উপস্থিত ছিলেন না জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুটসহ প্রভাবশালী অনেক নেতাই।
জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরী জানান, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ইমন সভাপতির বিদায় উপলক্ষ্যে ঢাকায় মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়েছে বলে আমাকে ফোনে দাওয়াত দিয়েছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে যোগ দিতে পারিনি। পরবর্তীতে শুনলাম এটাকে কার্যকরী কমিটির সভা হিসেবে চালানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে, যা নিন্দনীয়।
এদিকে, যাকে উপলক্ষ করে এই ভোজের আয়োজন, সেই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান ‘কার্যকরী কমিটির বিশেষ সভা’র বিষয়টিকে ‘মিথ্যা কথা’ হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে দেড় মাসের জন্যে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছি। সেই উপলক্ষে ওরা খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেছিল। এখানে কোন রাজনৈতিক আলোচনাও হয়নি। এটা শুধুই বিদায় জানানোর মতো একটি ব্যাপার ছিল। যারা এটাকে ‘কার্যকরী কমিটির বিশেষ সভা’ হিসেবে প্রচার করছেন তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা বলছেন। আমি বলব, তারা যেন দলের বিষয় নিয়ে এইসব বিভ্রান্তি না ছড়ান।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, আমার অনুপস্থিতিতে দল গঠনতন্ত্র মোতাবেক চলবে।
মতিউর রহমান আরও বলেন, জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে আমি সভায় উদ্বেগ জানিয়ে এমপি মানিককে আমার অনুপস্থিতে বিষয়টি দেখার কথা বলেছি। এটি দলীয় কোন সভা ছিল না। তাই এখান থেকে কাউকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
সভায় কী হয়েছিল সে ব্যাপারে জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট বলেন, এমন মিথ্যাচার এদের দ্বারাই সম্ভব। কোন নোটিশ নাই, কিছু নাই- ঢাকায় করা এমন একটি আয়োজন কার্যকরী কমিটির সভা হয় কীভাবে?
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমানে সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনের সঞ্চালনায় ওই বিদায় সংবর্ধনায় বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুহিবুর রহমান মানিক এমপি, ড. জয় সেন গুপ্তা এমপি, সহ-সভাপতি সিদ্দিক আহমেদ, সহ-সভাপতি এডভোকেট শফিকুল আলম, খাইরুল কবির রুমেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নান্টু রায়, সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এডভোকেট শামসুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা