এ যেন অভিভাবকহীন একটি সেতু, অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা সেতু। চুরি হয় সেতুর স্টিলের পাত, খবর রাখে না কেউ। বর্তমানে একদিকে সেতুটির প্যানের জোড়াস্থলে স্টিলের পাতের বদলে করা হয়েছে বাঁশের ব্যবহার, অন্যদিকে বিদ্যুতের খুঁটি থাকলেও উপরে থাকা বাতিগুলো নষ্ট।
বাতিবিহীন সেতুতে সন্ধ্যার পর থেকে বসে বখাটে, চোর আর ছিনতাইকারীদের আড্ডা। এই হচ্ছে এসএমপি'র জালালাবাদ থানাধীন সিলেট শহরতলির তেমুখির শাহজালাল তৃতীয় সেতুর অবস্থা। এ অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতা আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন এলাকাবাসীসহ এ সেতুতে যাতায়াতকারীরা।
গতকাল রবিবার শাহজালাল তৃতীয় সেতুর পাশ দিয়ে যাতায়াতের সময় কয়েকটি ছবি নিজের মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বন্দি করেন সিলেটের এক সংবাদকর্মী। পরে সেই ছবিগুলো নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে একটি মন্তব্যও করেন। ছবিগুলোতে দেখা যায়- সেতুতে চলছে সংস্কার কাজ। কিন্তু সেতুর প্যানের জোড়ায় (এক্সপানশন জয়েন্ট) স্টিলের পাতের বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশ। ছবিটি মুহুর্তে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্নজনের ফেসবুকে ওয়ালে।
জানা গেছে, শাহজালাল তৃতীয় সেতুতে রয়েছে ৭টি প্যানের জোড়া (এক্সপানশন জয়েন্ট)। কয়েকদিন আগে মধ্যখানের ৩টি জোড়ার স্টিলের পাত উঠে গেলে কে বা কারা পাতগুলো চুরি করে নিয় যায়। বিষয়টি জানতে পেরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এই ৩টি জোড়া সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু জোড়াগুলোতে স্টিলের পাতের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় বাঁশ। পরে সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে বাঁশগুলো ঢেকে দেয় শ্রমিকরা।
এ কাজের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে সওজ বিভাগ সিলেটের সাবেক এক উপ-সহকারী প্রকৌশলী এ প্রতিবেদককে বলেন, এমন কাজে বাঁশের ব্যবহার অনিয়মের শামিল। সেতুর এক্সপানশন জয়েন্টে স্টিলের পাত ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন কারণে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে- ভূমিকম্প বা কোনো কারণে সৃষ্ট প্রবল ঝাকুনির সময় যাতে ব্রিজ যাতে স্প্রিং করে। এ জোড়ায় বাঁশ দিয়ে উপরে সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে জোড়া লাগিয়ে দিলে লাভের চাইতে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি। তিনি বলেন, প্রয়োজনে সময় নিয়ে নতুন বরাদ্দের মাধ্যমে সঠিক পদ্ধতিতে কাজ করাই উচিৎ।
এ বিষয়ে জানতে সিলেট সওজ'র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নুরুল মজিদ চৌধুরী ও নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়ার মোবাইল ফোন এবং ল্যান্ডফোন নাম্বারে একাধিকবার কল দিলে কেউ রিসিভ করেনি।
অপরদিকে, শাহজালাল তৃতীয় সেতুর বাতিগুলো ভাঙা ও নষ্ট। বছরখানেক সময় ধরে রাতে সেতুটি থাকে অন্ধকার। সন্ধ্যার পর থেকে সেতুতে বসে বখাটে, চোর আর ছিনতাইকারীদের আড্ডা। তাদের 'সুবিধা'র জন্যই বাতিগুলো ঢিল ছুড়ে ভেঙে দিয়েছে তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সন্ধ্যা নামলেই ওই জায়গা দিয়ে যেতে সাধারণ মানুষ ভয় পান। প্রায় সময় ঘটে ছিনতাইয়ের ঘটনাও। অথচ মাঝে-মধ্যে পুলিশ টহল দেয় ব্রিজে এবং অবস্থান করে তেমুখি পয়েন্টে, কিন্তু আড্ডাবাজদের কিছু বলে না।
এ বিষয়ে এসএমপি'রর জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অকিল উদ্দিন জানান, এমন কোনো অভিযোগ কেউ আমাদেরকে দেয়নি। তারপরও অপকর্মকারীদের ধরতে জালালাবাদ থানার পুলিশ সবসময় তৎপর রয়েছে এবং থাকবে। বাতিগুলো ভাঙার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। বাতির বিষয় পুলিশের আওতায় না।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার