সিলেটে দুই দিন মিলিয়ে প্রায় ২১ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান শেষ হয়েছে। সিলেট নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে মোটরসাইকেলের মধ্যে বোমাসদৃশ যে বস্তুকে ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল, অভিযান শেষে সেটি বোমা নয় বলে জানা গেছে। ওই বস্তুটি ছিল ‘গ্রাইন্ডিং মেশিন’ (টাইলস বা রড কাটার যন্ত্র)।
অভিযান শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ও বোমা ধ্বংসকরণ ইউনিটের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট চয়ন নাইডু তার ঢাকা মেট্রো ১৪-৯২৭০ নম্বরের কালো রঙের পালসার মোটরসাইকেলটি চৌহাট্টা পয়েন্টে পুলিশ বক্সের পাশে রাখেন। তিনি পাশের একটি চশমার দোকান থেকে ফিরে মোটরসাইকেলে লাল রঙের বস্তুটি দেখতে পান। বিষয়টি তার কাছে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে ওই মোটরসাইকেলে ঘিরে ফেলে।
এরপর চৌহাট্টা পয়েন্টে মোটরসাইকেলে বোমা রাখা হয়েছে বলে গুঞ্জন ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সিলেটজুড়ে। ঘটনাস্থলে পুলিশের ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি) ও র্যাব-৯ এর টিমও আসে। বন্ধ করে দেওয়া হয় চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়কে যান চলাচল। শুরু হয় শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা। রাতভর ওই এলাকা ঘিরে রাখে পুলিশ।
কিন্তু সিলেট মহানগর পুলিশে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট না থাকায় খবর পাঠানো হয় ঢাকায়। পুলিশের সদর দপ্তর থেকে চৌহাট্টা পয়েন্টে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ও বোমা ধ্বংসকরণ টিম পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয় সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরকে। সেনা সদর দপ্তর নির্দেশনা পাঠায় সিলেটস্থ ১৭ পদাতিক ডিভিশনকে। এ ডিভিশনের বোমা ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ লে. কর্নেল রাহাত, লে. কর্নেল খালেদ, ক্যাপ্টেন নূর, ক্যাপ্টেন গালিবসহ একটি টিম বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান শুরু করে।
অভিযান শেষে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের বোমা ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ লে. কর্নেল রাহাত বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যার সময় একজন পুলিশ সদস্যের মোটরসাইকেলে একটা অবজেক্ট, একটা সাসপেক্ট (সন্দেহজনক বস্তু) পাওয়া যায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এই অবজেক্টটা ইন্সপেকশন ও পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা পেয়ে সিলেটে থাকা ১৭ পদাতিক ডিভিশনের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ও বোমা ধ্বংসকরণ টিম আমরা এখানে আসি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে এসে আমাদের পদ্ধতি অবলম্বন করেছি, পরিদর্শন করেছি। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এটা একটা গ্রাইন্ডিং মেশিন। কিন্তু অধিকতর তদন্তের জন্য এবং এখানে যাতে অন্য ধরনের সন্দেহজনক বস্তু না থাকে, এটা নিশ্চিত করতে আমাদের নির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করেছি এবং আরও নিশ্চিত হতে আমরা এটাকে খুলেছি। গ্রাইন্ডিং মেশিন নিশ্চিত হয়ে আমরা সেইফ (নিরাপদ) ঘোষণা করি।’
লে. কর্নেল রাহাত আরও বলেন, ‘হতে পারে ভুলবশত, অথবা হতে পারে কেউ এটা পুলিশ সদস্যের গাড়িতে রেখে একটা আতঙ্ক ছড়াতে চেয়েছিল।’
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘আমরা দুই দিক থেকে চিন্তা করতে পারি। কেউ ভুলবশত গ্রাইন্ডিং মেশিনটা এখানে রেখে যেতে পারেন। আবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি, সরকারি গাড়ি, সেজন্য আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য বা জনমনে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টির জন্য হয়তো কেউ রেখে থাকতে পারেন।’
তিনি আরও জানান, কে বা কারা গ্রাইন্ডিং মেশিনটি মোটরসাইকেলে রেখেছে, এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত