সিলেট নগরীতে গণটিকাদান কেন্দ্রগুলোতে চরম অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে। ঠেলাঠেলি, গা ঘেঁষাঘেঁষি, স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) আওতাধীন কেন্দ্রগুলোতে। এসব কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবকদের তেমন তৎপরতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আবার শতশত মানুষ কেন্দ্রে এলেও তাদের সবাইকে টিকা দিতে পারছেন না সিসিকের টিকাকর্মীরা। কারণ হিসেবে টিকার সংকট বলা হচ্ছে। ফলে অসংখ্য মানুষ দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যর্থ মনোরথে ফিরে যাচ্ছেন।
গণটিকাদান ব্যবস্থাপনায় সিলেট সিটি করপোরেশন চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, সিলেট সিসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে তিনটি করে ৮১টি টিকাকেন্দ্র রয়েছে।
গণটিকাদানের শুরুর দিন, গত শনিবার সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম সুমন জানান, প্রতিটি বুথে দুজন করে টিকাদানকর্মী ও তিনজন করে স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন।
গত শনিবার থেকে আজ সোমবার দুপুর অবধি সিসিকের প্রায় অর্ধশত টিকাকেন্দ্র ঘুরে অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করতে কোনো তৎপরতাই ছিল না সিসিকের দায়িত্বশীলদের। টিকা নিতে কেন্দ্রে আসা সাধারণ মানুষকে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ও মাস্ক পরিধান করাসহ স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার বিষয়টি বলার মতো কাউকে কেন্দ্রগুলোতে দেখা যায়নি। প্রতিটি কেন্দ্রেই শত শত মানুষ গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়েছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অসংখ্য মানুষের মুখে মাস্কও ছিল না।
সিসিকের স্বেচ্ছাসেবকরা শুরুতে কিছুটা তৎপরতা দেখালেও পরে তাদের নিষ্ক্রিয়তা দেখা গেছে। শুধু টিকাকেন্দ্রের প্রবেশমুখে তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
এদিকে, টিকা নিতে কেন্দ্রগুলোতে শতশত মানুষ জড়ো হন। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর অসংখ্য মানুষকে টিকা না নিয়েই ফিরতে হয়। টিকাকেন্দ্র থেকে জানানো হয়, দেওয়ার মতো টিকা তাদের কাছে নেই।
সাধারণ মানুষ বলছেন, যে কেন্দ্রে যতো টিকা দেওয়া হবে, সেটা তো দায়িত্বশীলদের আগেই জানার কথা। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলেই বিপুলসংখ্যক মানুষকে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
গতকাল রবিবার নগরীর ২নং ওয়ার্ডের রসময় মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা মাহির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘সকাল থেকে টিকা গ্রহণের লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। দুপুরের পর জানানো হয়, টিকা নেই। তাহলে আমরা কেন কষ্ট করলাম? কেন্দ্রে যতো টিকা আছে, সে অনুসারে রেজিস্ট্রেশন করলেই তো বাকিদের অপেক্ষা করতে হয় না। টিকা থাকবে দুই-তিনশ, আর চার-পাঁচশ মানুষকে দাঁড় করিয়ে রাখা হবে, এটা তো ঠিক না।’
এদিকে, কেন্দ্রগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানিরও কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে দীর্ঘক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের, বিষে করে বয়োবৃদ্ধদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
গণটিকাদানের অব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা সিটি করপোরেশনের অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত ছিল। পাশাপাশি স্থানীয় কাউন্সিলরদেরও বড় দায়িত্ব ছিল।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি কেন্দ্রে বড় করে নোটিশ বোর্ড টানানো উচিত ছিল যে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, মাস্ক না পরলে টিকা দেয়া হবে না। এমনকি মাস্ক না থাকলে কাউকে লাইনে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।’
এ বিষয়ে সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম সুমনকে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। অবশ্য সিসিকের কেন্দ্রগুলোতে গণটিকাদানে অব্যবস্থাপনা হবে, এটা যেন আগেই টের পেয়েছিলেন ডা. জাহিদ! তাই গত শনিবার সকালে তিনি বলেছিলেন, গণটিকাদানে ‘কিছুটা ভুলভ্রান্তি ও অব্যবস্থাপনা হতে পারে’। এগুলো ‘ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার’ আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ