করোনাভাইরাস বলতে অনেকেই মনে করেন শরীরে থাকবে জ্বর, সর্দি, কাশি, গায়ে ব্যাথাসহ নানা উপসর্গ। কিন্তু এসব লক্ষণের অনেকটাই না থাকলেও সিলেটে নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হচ্ছে এ ভাইরাস।
গেল কয়দিন সিলেটের অসংখ্য মানুষের শরীরে সামান্য জ্বর থাকায় নমুনা পরীক্ষায় অনেকেরই করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে ‘সামান্য’ এই জ্বরকে তোয়াক্কা না করেই বৃষ্টিজনিত কারণে জ্বর বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন অনেকেই। এতে করে করোনার সংক্রমণ আরো দ্রুত গতিতে বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের অভিমত। সামান্য জ্বর বলে উড়িয়ে না দিয়ে নমুনা পরীক্ষার উপর কড়া জোর দিচ্ছেন তারা।
সিলেট করোনা দিনে দিনে যে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে তার নতুন প্রমাণ আজ বুধবার সকালে পাওয়া গেছে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, আগের সকল রেকর্ড গুড়িয়ে সিলেটে করোনাভাইরাসে চব্বিশ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আরও ৫৫৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাদের নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে আজ বুধবার এই তথ্য জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ে সিলেটজুড়ে করোনাক্রান্ত ২২ জন মারা গেছেন। তন্মধ্যে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮ জনসহ সিলেট জেলাতেই মারা গেছেন ১৯ জন। হবিগঞ্জে ২ জন ও মৌলভীবাজারের একজনের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর এটাই নতুন রেকর্ড। এর আগে গত ৩ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে ৪ আগস্ট সকাল ৮টার মধ্যে ২০ জন মারা গিয়েছিলেন সিলেটে।
এদিকে বিগত দিনে অনেকেই শরীরে জ্বর, সর্দি কাশি কিংবা অন্য কোন উপসর্গ দেখা দিলেই ধরে নিতেন করোনা। করাতেন নমুনা পরীক্ষা। শনাক্ত হতো করোনা, আবার কখনো না। কিন্তু বর্তমানে সিলেটের অনেক সচেতন নবাগরিক সামান্য জ্বর হলেই করোনার নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন। পরীক্ষায় তাদের শরীরে পাওয়া যাচ্ছে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্বও। অথচ তাদের শরীরে জ্বর ছাড়া আর অন্য কোন উপসর্গ নেই।
গেল শনিবার সিলেটের জকিগঞ্জের কালিগঞ্জ এলাকার সুমন নামের এক যুবক মাত্র একদিন সামান্য জ্বর থাকায় করোনার নমুনা পরীক্ষা করান। পরে তার শরীরে শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। কিন্তু তার শরীরে ছিলো না অন্য কোন উপসর্গ। কিংবা বর্তমানে তার শরীরে জ্বরও নেই। তিনি জানান, তার গ্রামের অন্ত্যত ১০ জনের শরীরে কয়েকদিন থেকে জ্বরে ভোগছেন। ফার্মেসী থেকে তাদের অনেকেই জ্বরের প্রাথমিক ওষুধ সেবন করছেন। কেউ কিন্তু করোনার নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। তাদের যুক্তি, আষাঢ় মাসের বৃষ্টির কারণে ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে জ্বর।
এমনই সিলেট নগরীর জেল রোডের বাসিন্দা গুলজার আলমের শরীরে প্রায় ১০ দিন আগে দেখা দেয় সামান্য জ্বর। চাকরিজীবী সচেতন এ নাগরিক সাথে সাথে নমুনা পরীক্ষা করান। তার শরীরে শনাক্ত হয় করোনা। পরে সন্দেহ মেঠাতে তার পরিবারের আরো ৮ সদস্যের করানোর নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। তন্মধ্যে আরো ৫ জনের করোনা শনাক্ত হয় আর ৩ জনের করোনা ফলাফল আসে নেগেটিভ। শনাক্ত হওয়াদের শরীরে বর্তমানে সামান্য সামান্য করোনার কিছু উপসর্গ রয়েছে।
এ অবস্থায় সচেতন নাগরিকরা বলছেন, গ্রামাঞ্চলের অনেকেই সামান্য জ্বর কিংবা কাশি বলে উড়িয়ে দেওয়ায় করোনার ঝুঁকি বাড়ছে প্রকট। কলেজ শিক্ষক জামাল উদ্দিন বলেন, গ্রাম কিংবা শহরের যে কারো শরীরে জ্বর দেখা দিলে তাকে আইসোলেশনে রাখা নিশ্চিত করতে হবে। এবং নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে। গ্রামের সবাই নিরাপদ থাকতে জ্বরাক্রান্ত ব্যক্তিকে বুঝিয়ে নমুনা পরীক্ষা করানো এবং ঘরের বাহিরে যাতে ঘোরাফেরা না করতে পারেন সেটির দিকে গ্রামের সচেতন মহলকে খেয়াল রাখতে হবে।
করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, দেশে করোনার ভয়াবহতা চলছে। এই মুহূর্তে জ্বর, সর্দি হলে নরমাল চিন্তা না করেই নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ও করোনার পরীক্ষা করা উচিত। কারণ অন্য সময়ের জ্বর আর বর্তমান সময়ের জ্বর ভিন্ন। নমুনা পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যাবে শরীরে করোনা রয়েছে কি-না। এতে করে নিজে, নিজের পরিবার ও সমাজকে নিরাপদ রাখা যাবে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত