সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার গুরমার হাওরের বর্ধিত বাঁধটিতে গত ১৫ দিন ধরে কাজ করেও শেষ রক্ষা হলো না। চোখের পলকে বাঁধ ভেঙে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন নিমিষেই তলিয়ে গেল।
স্বচ্ছ পানির নিচে ধানের শীষগুলো এখন দোলছে। কৃষকরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছেন। কিন্তু ধরতেও পারছেন না কাটতেও পারছেন না। শুধু ক্ষেতের কিনারায় দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছেন আর বুক ভরা নিঃশ্বাস ফেলছেন।
গতকাল রবিবার সকালে গুরমা হাওরের আপড় (কান্দা) দিয়ে প্রথমে উপচে পানি ঢুকতে শুরু করে হাওরে। একপর্যায়ে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে হাওরের ২৭ নং পি আইসির বাঁধটি ভেঙে চরম বিপর্যয় দেখা দেয় হাওরে।
গুরমার হাওরে এবার ১৩টি পিআইসির মাধ্যমে বাঁধের কাজ শুরু করা হয়। বরাদ্দ ছিল প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
এই বাঁধটিতে ফসল রক্ষা হয় উপজেলার নোয়াল, গলগলিয়া, পানা, বলাইচাতল, উলান, জিনারিয়া, মানিকখিলা, গায়েরকিত্তা এবং ধর্মপাশা, মধ্যনগর উপজেলার কলমা ও হুরি বিলের। হঠাৎ বাঁধের একাংশ দেবে উপর দিয়ে পানি প্রবেশ করতে দেখে নিরূপায় হয়ে যান বাঁধের কাজে থাকা কৃষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই।
কৃষকরা কোনো উপায় না পেয়ে বাঁধ ছেড়ে হাওরের দিকে ছুটতে থাকেন এবং জমিতে থাকা নিজের আধা পাকা ধান কাটার চেষ্টা করেন। সেই চেষ্টাও বৃথা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে ভেসে যায় হাওর। রূপ নেয় দানবের। তলিয়ে যায় কৃষকের সোনালী ফসল।
এ সময় হাওরপারের পাঠাবুকা, ভবানীপুর, সন্তোষপুর, মানিকটিলা, রামসিংহপুর, লামাগাঁও, নোয়াগাঁও, বলাইকান্দি, গোলাবাড়ী, জয়পুর, গাঞ্জাইল, মেয়াাজ্জেমপুরসহ অসংখ্য গ্রামের কৃষকদের আহাজারিতে আকাশ ভারি হয়ে উঠে।
কৃষকরা জানান, ২০১৭ সালের আগ পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক সহায়তায় এ বাঁধটি নির্মাণ হয়। চারদিন আগে বাঁধ রক্ষার কাজে থাকা কৃষকরা বলেছিলেন, বাঁধটি নদীর পাড় ঘেষে করায় এই বিপদ হয়েছে। নির্মাতাদের ভুলে হাজারো কৃষকের এখন সর্বনাশ হয়েছে।
তারা আরো বলেন, বাঁধে ধস ও ফাটল দেওয়ার পর যেভাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্মতারা এসেছেন বাঁধ উপযুক্ত সময়ে এভাবে তাদের দেখা যায়নি।
পাঠাবুকা গ্রামের কৃষক রহমান মিয়া বলেন, অসময়ে বাঁধ ভেঙে হাওর ডুবে বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় তিনি পরিবার নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন। এখন বাঁচতে হলে ছেলে মেয়ে নিয়ে ঢাকা গিয়ে গার্মেন্সে কাজ করে বাচঁতে হবে।
এদিকে, নদীর পানি বাড়ায় বৃহৎ শনির হাওরের বৈজ্ঞানিক স্লইস গেট দিয়ে পানি চুইয়ে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। মাটিয়ান হাওরের বাঁধগুলো নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হুমকিতে পড়েছে। ফলে এ হাওরের কৃষকরা আতঙ্কিত হয়ে কাঁচা পাকা ধান কাটতে শুরু করেছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন